মাশরাফি কি ব্যাটসম্যান হয়ে যাচ্ছেন?

বাংলাদেশ ক্রিকেটে মাশরাফির আবির্ভাব বোলার হিসেবে। বাংলাদেশেও যে পেসার জন্ম নিতে পারে তার প্রথম উদাহরণ বোধহয় তিনিই। অভিষেকের পরই দেশের হয়ে সেরা পেসারের তকমাটা নিজের করে নেন মাশরাফি। কিন্তু চোটজর্জর ক্যারিয়ারে প্রত্যাশার সমান উঁচুতে যেতে পারেননি তিনি। ৩২ বছর পেরিয়ে মাশরাফি কি ক্যারিয়ার নিয়ে নতুন করে ভাবছেন? তিনি কি বদলে ফেলছেন নিজেকে?

এই প্রশ্নটা উঠে যাচ্ছে সম্প্রতি মাশরাফির নেয়া কিছু পদক্ষেপের কারণে। ধারণা করা হচ্ছে বোলিংয়ে ধীরে ধীরে মনোযোগ কমিয়ে ব্যাটিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন তিনি। সর্বশেষ বিপিএলে বেশ কয়েকটি ম্যাচে উপরের দিকে ব্যাটিং করেছেন মাশরাফি। একটি ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়ে ফিরেছেন।

বোলিংয়ের মতো মাশরাফির ব্যাটিংও বাংলাদেশের কাছে পরম ভরসার জায়গা হয়ে ছিলো আগে। এটা সত্য যে, মাশরাফির কাছে কেউ হাফ সেঞ্চুরি বা সেঞ্চুরি আশা করতো না। তার কাছে আশা ছিলো শেষ দিকে কয়েক বলের ঝড়ে ম্যাচ শেষ করে আসার, কিংবা দলের রান আরো উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার।

এই আশা মাশরাফি পূরণ করেছেন যতোটা সম্ভব। সেটাই আফসোস জাগিয়েছে ক্রিকেটাঙ্গনে। ইনজুরির থাবা যদি বারবার তার ক্যারিয়ারে আঘাত না করতো, তবে মাশরাফি কতো বড় অলরাউন্ডার হতে পারতেন, তা নিয়ে প্রায়ই আফসোসের কথা শোনা যায় ক্রিকেটমহলে।

টেস্ট ক্রিকেটে ৬০-এর উপরে তিনটি ইনিংস আছে মাশরাফির। কোনোটা সেঞ্চুরি ছুঁতে না পারলেও সেগুলো সেঞ্চুরির মতোই কাজে লেগেছে বাংলাদেশের। ৪০-এর উপরেও তিনটি ইনিংস আছে তার। ওয়ানডেতে মাশরাফি ৫০ ছুঁয়েছেন একবার। ৪০ এর উপরে উঠেছেন তিনবার। প্রতিটি ইনিংসেই মাশরাফির ব্যাটিং সত্তার অনন্য পরিচয় পাওয়া গেছে। অনেক স্বীকৃত ব্যাটসম্যানের তুলনায় তার ব্যাটিং অনেক বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠেছে ক্রিকেট দর্শকদেরক আছে। অথচ বোলিং ও ইনজুরি সামলিয়ে ব্যাটিংয়ে কখনোই সেভাবে মনোযোগ দেয়ার সুযোগ আসেনি তার সামনে।

কিন্তু এবার বোধহয় মাশরাফি চিন্তা করছেন অন্যভাবে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ সামনে রেখে তাকে দেখা গেলো ব্যাটিং নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করতে। বুধবার অনুশীলনে কোচ হাথুরুসিংহে প্রায় পুরোটা সময় থেকেছেন মাশরাফিকে নিয়ে। ব্যাটিং নিয়ে দুজন কথা বলেছেন দীর্ঘ সময়। মাশরাফি বোলিং অনুশীলন করেননি একটুও। অনুশীলনের পুরোটা সময় তিনি ব্যাটিং নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।

৩০ বছর বয়সের পর পেসাররা ক্রমেই তাদের দাপট হারাতে থাকেন। সাত সাতবার অস্ত্রোপচারের টেবিলে শোয়া মাশরাফির জন্যও ব্যাপারটা ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা খেলে যেতে পারেন আরো একটু বেশি সময়। এখানেই হয়তো নতুন স্বপ্ন দেখছেন মাশরাফি। ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে নিজের ব্যাটিং প্রতিভার আরো একটু ঝলক দেখানোর আশায়ই হয়তো অনুশীলনে বাড়তি শ্রম দিচ্ছেন অধিনায়ক। হয়তো লেখতে চাচ্ছেন বদলে যাওয়ার নতুন রকম গল্প।

বোলার থেকে ব্যাটসম্যান হয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা যদি মাশরাফি সত্যিই করে থাকেন, তবে তাতে আশ্চর্যের কিছু আছে বলে মনে হয় না। কারণ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাশরাফির সক্ষমতা প্রশ্নাতীত। প্রয়োজন কেবল আরো একটু ঝালাই। প্রয়োজন কেবল একটু দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন। কোচকে নিয়ে অনুশীলনে সেটাই করছেন তিনি। কিছুদিন পর মাশরাফি যদি জাতীয় দলে কেবল ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক হিসেবে খেলেন- তবে খুব বেশি অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মাশরাফির জীবনের গল্পটাই কিন্তু তাতে বদলে যাবে। মাশরাফিভক্তদের কাছে এটা নিশ্চয় নতুন রকম রোমাঞ্চ!

আপনি আরো পড়তে পারেন

আবু হায়দার: টিকে থাকতে এসেছি

হঠাৎ কেনো অধিনায়কত্ব ছাড়লেন আমলা?