অবিশ্বাস্য রোনালদো: জুভেন্টাসের রূপকথার জয়

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের চলমান আসর যেন রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে বসেছে। একটার পর একটা থ্রিলার উপহার দিয়ে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিটা। আয়াক্স, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর এবার রূপকথার জন্ম দিল জুভেন্টাস। মঙ্গলবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দুর্ধর্ষ এক হ্যাটট্রিকে ইতিহাস গড়ল তুরিনের বুড়িরা।

প্রথম লেগে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও ফিরতি লেগে ঘাটতিটা পুষিয়ে নিয়েছে মাস্যিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির দল। কাল রাতে ঘরের মাঠ তুরিনে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছেন রোনালদো অ্যান্ড কোং। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ গোলে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল জুভেন্টাস; টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেল মাদ্রিদ জায়ান্টরা।

এক শ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ খরচ করে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে এই মৌসুমে রোনালদোকে উড়িয়ে এসেছে জুভেন্টাস। শেষ ষোলোর প্রথম লেগের ম্যাচে পর্তুগিজ উইঙ্গারের উপস্থিতিতেই অ্যাটলেটিকোর মাঠে দুই গোলে হেরেছিল তুরিনের বুড়িরা। ঘরের মাঠে ফিরতি লেগে হ্যাটট্রিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার। রোনালদো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন।

তাতেই বাঁচল জুভেন্টাসের শিরোপাস্বপ্ন। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নক আউট পর্বে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও উৎড়ে গেল তুরিনের বুড়িরা। স্বাগতিকরা যে ইতিহাস গড়তে চলেছে সেটার আভাসটা রোনালদো দিয়েছেন ম্যাচ শুরুর দিকেই। ২৭ মিনিটে দুর্দান্ত এক হেডে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জাল কাঁপান পর্তুগিজ যুবরাজ।

ফেডেরিকো বার্নার্ডেস্কির দূরপাল্লার মাপা ক্রসে রোনালদো যেভাবে মাথা ছুঁয়েছেন তা ফুটবলপ্রেমীদের চোখে লেগে থাকবে অনেকদিন। বিরতির পর মাঠে ফিরেই স্কোর লাইন ২-০ করেন রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন প্রাণভোমরা। তাতেই ফিকে হয়ে যাওয়াটা স্বপ্নটা পুনরুজ্জীবিত হয় ইতালিয়ান জায়ান্টদের। আশার পালে হাওয়া দেয় রোনালদোর দ্বিতীয় গোলটা।

এই গোলে থাকল কিছুটা নাটকীয়তা। অ্যাটলেটিকোর গোলমুখে হেড নিয়েছিলেন ‘সিআর সেভেন’। অতিথি গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক ঝাঁপিয়ে পড়ে বল আটকেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। বল পেরিয়ে গেছে গোললাইন। ভিএআরের সহায়তা নিয়ে গোলের সিদ্ধান্ত জানান রেফারি। তখন দুই লেগ মিলিয়ে ম্যাচ ২-২ গোলে সমতায়!

৮৬ মিনিটে সমতা ভাঙেন রোনালদো। পেনাল্টি থেকে করলেন পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারের ৫২তম হ্যাটট্রিক। রোনালদোর এই গোলেও অলক্ষ্যে নায়ক থাকলেন ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত খেলা বার্নার্ডেস্কি। পেনাল্টিটা যে ইতালিয়ান উইঙ্গারই পাইয়ে দিয়েছেন! অ্যাটলেটিকোর বিপদসীমায় ঝোড়ো বেগে ছুটছিলেন বার্নার্ডেস্কি। কিন্তু গোলমুখে শট নিতে পারেননি তিনি।

জুভেন্টাস উইঙ্গারকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন অ্যাঙ্গেল কোররেয়া। অবধারিতভাবেই পেনাল্টি পায় স্বাগতিকরা। স্পট কিক থেকে ইতিহাস গড়া শটটা নিতে এলেন প্রাণভোমরা রোনালদো; করলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ৩২তম ম্যাচে ২৫তম গোল। যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে রোনালদোর ১২৪তম নিশানাভেদ।

শুধু গোল সংখ্যাতেই নয়, ইউরোপের মঞ্চে সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকও রোনালদোর। হ্যাটট্রিক ও গোল সংখ্যায় তার ধারেকাছেও কেউ নেই। কাল জুভেন্টাসের তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে নক আউট পর্বে হ্যাটট্রিক করার কীর্তি গড়েছেন রোনালদো। তার আগে এই কীর্তি ছিল ফিলিপ্পো ইনজাগি ও আলেসান্দ্রে ডেল পিয়েরোর। রোনালদোর ইতিহাস গড়ার রাতে ১১ বছর পর প্রতিপক্ষের গোলমুখে একটাও শট নিতে পারল না অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।