বেপরোয়া আচরণ: যুবরাজের সঙ্গে বাড়ছে সৌদি বাদশার দূরত্ব

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের সাম্প্রতিক কিছু আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দেশটির বাদশা সালমান। ফলে বাবা ও ছেলের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। আর এই দূরত্ব দেশটিতে অস্থিতিশীলতা ডেকে আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ইয়েমেনে যুদ্ধসহ সৌদি আরবের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক দিন ধরেই সৌদি বাদশা ও যুবরাজের মধ্যে মতপার্থক্য বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই মতপার্থক্য আরো বেশি প্রকট হয়ে উঠছে।

খবরে বলা হয়েছে, সৌদি রাজতন্ত্রের অন্যতম সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাদশা সালমান ও যুবরাজের টানাপড়েনের সূচনা হয়।

প্রসঙ্গত, তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে গত বছরের ২ অক্টোবর খাসোগিকে হত্যা করা হয়। যুবরাজের নির্দেশেই নজিরবিহীন ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়।

গার্ডিয়ানের ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইরানি গণমাধ্যম পার্সটুডে বলেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে বাদশা সালমানের মিশর সফরের সময় যুবরাজের সঙ্গে টানাপড়েন নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। সে সময় রাজার কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দেন সালমানের উপদেষ্টারা।

খবরে বলা হয়েছে, বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয় এবং সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৩০ সদস্যের নতুন একটি নিরাপত্তা দলকে তড়িঘড়ি করে মিশরে পাঠানো হয়। আর ৩০ সদস্যের প্রতিজনকে দলভুক্ত হওয়ার আগে কঠোর বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। মিশরে রাজার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত যে দলটি ছিল তার স্থলাভিষিক্ত হয় নতুন এ দল। নতুন দল পাঠানোর কারণ হলো, পুরানো দলের কয়েকজন যুবরাজের প্রতি অনুগত হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

এমনকি বাদশা সালমান সৌদি আরবে ফিরে আসার পর তাকে স্বাগত জানাতে যারা গিয়েছিলেন সেখানে ছিলেন না তার উত্তরাধিকারী যুবরাজ। এর মধ্য দিয়ে পিতা-পুত্রের মধ্যকার টানাপড়েনের বিষয়টি প্রকাশ্য রূপ নেয়।

এ ছাড়া বাদশার মিশর সফরের সময় যুবরাজ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটান। এর একটি হলো- আমেরিকায় প্রথম বারের মতো একজন সৌদি নারীকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া। আর অন্যটি হলো- যুবরাজের আপন ভাই প্রিন্স খালিদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রিন্স খালিদকে নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা খাতে সৌদি ক্ষমতাসীন পরিবারের একটি শাখার কর্তৃত্ব আরো মজবুত হলো। তবে বাদশা সালমানকে না জানিয়েই এ নিয়োগ দেয়া হয়। যদিও বাদশা মনে করেন, এতো উঁচু পদে খালিদকে ঠেলে দেয়ার সময় এখনো আসেনি।

সৌদি সূত্র জানিয়েছে, টেলিভিশনের খবর থেকেই এ দুটি নিয়োগের বিষয় জেনেছেন বাদশা সালমান।

সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান আরো জানিয়েছে, গত মাসে পবিত্র কাবাঘরের ছাদে পদচারণা করে গোটা মুসলমান বিশ্বকে খেপিয়ে তুলেছেন যুবরাজ বিন সালমান। কোনো কোনো সৌদি আলেম এ নিয়ে রাজার কাছে যুবরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছেন।