ফের বার্সায় ধরাশায়ী রিয়াল মাদ্রিদ

তিনদিন আগে কোপা দেল রের ঘটনা। বার্সেলোনার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে শিরোপা উদ্ধারের স্বপ্ন ভেঙে চৌচির হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের। সেই ক্ষতটা শুকায়নি, এরই মধ্যে আরেক ঘা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে আরো একটা এল ক্লাসিকোতে হারল রিয়াল মাদ্রিদ। এবারের হারটা আবার ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে!

স্প্যানিশ কাপের পর শনিবার লা লিগার মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও চিরশত্রু রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে দিল বার্সেলোনা। জয়ের ব্যবধান নূন্যতম; ১-০ গোলে। উত্তেজনায় ভরপুর ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন ইভান রাকিটিচ। ম্যাচের শুরুতে ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার দুর্দান্ত যে গোলটা করেছেন সেটার আর শোধ দিতে পারেনি রিয়াল।

পরিণাম- তিন দিনের ব্যবধানে দু’ দুটো এল ক্লাসিকোতে হার। এই হারে লা লিগায় শিরোপা স্বপ্নটাও কার্যত ধূসর হয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে লিগ শিরোপা জয়ে বড় একটা ধাপ পাড়ি দিল বার্সেলোনা। রিয়ালের সঙ্গে শীর্ষে থাকা বার্সার পয়েন্ট ব্যবধান গিয়ে ঠেকল ১২-তে!

দুইয়ে থাকা মাদ্রিদের আরেক ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সঙ্গে ব্যবধান অবশ্য আরেকটু কম; ১০ পয়েন্টের। ২৬ ম্যাচে বার্সেলোনার সংগ্রহ ৬০ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের অর্জন ৪৮ পয়েন্ট। এক ম্যাচ কম খেলে দুই দলের মাঝে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের পয়েন্ট কাঁটায় কাঁটায় পঞ্চাশ।

স্পেনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ লড়াইটা উত্তেজনার রেণু ছড়িয়েছে শুরু থেকেই। প্রথম বাঁশির পর থেকেই আরম্ভ হয় থ্রিলার। এল ক্লাসিকোর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের পসরা স্নায়ুচাপের ভালোই পরীক্ষা নিল দর্শকদের। রোমাঞ্চকর এই লড়াইয়ে গোলের সুযোগ তৈরিতে রিয়ালের চেয়ে এগিয়ে থাকল অতিথি দল বার্সা।

অবশ্য যতটা গর্জেছে ততটা বর্ষায়নি। দুই দলই গোল মিসের মহড়া বসিয়েছে। লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ, আর্তুরো ভিদালরা যেমন নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছেন, তেমনি বলের কাঙ্খিত ঠিকানা খুঁজে পাননি করিম বেনজেমা, গ্যারেথ বেল, ভিনিচিয়াসরা। সবাইকে ছাপিয়ে পাদ প্রদীপে থাকলেন রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস।

এদিন পেশীশক্তির ভালোই প্রদর্শনী করেছেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। একটা পর্যায়ে তো মেসিকেও ক্ষেপিয়ে তুলেছিলেন লাল কার্ডের রাজা রামোস! হলুদ কার্ডও দেখেছেন তিনি। বিরতির আগ মুহূর্তে তো দুজনের মধ্যে লেগেও গিয়েছিল! চোটের কারণে লিগের প্রথম পর্বের ম্যাচে খেলতে পারেননি মেসি। কাল রামোসের কারণে নতুন করে চোট শঙ্কায় পড়ার উপক্রম হয়েছিল বার্সা প্রাণভোমরার।

মেসিকে ছাড়া গত অক্টোবরে রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বার্সেলোনা। সেই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সুয়ারেজ। এরপর গত মাসে কোপা দেল রের এল ক্লাসিকোটা ১-১ ব্যবধানে অমীমাংসিত ছিল। বুধবার চিরশত্রুদের ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল এরনেস্তো ভালভার্দের বার্সা।

সবমিলিয়ে সবশেষ চার ম্যাচের তিনটিতেই জিতল কাতালান ক্লাবটি। যা এল ক্লাসিকোতে জয়সংখ্যায় ৮৭ বছর পর এগিয়ে দিল বার্সাকে। এ জন্য পিঠ চাপড়ে দিতে হবে রাকিটিচের। বিগ ম্যাচে ফরওয়ার্ডদের ব্যর্থতার দায় ঘুচলেন এই ক্রোট তারকা; ২৬ মিনিটে সার্জি রবার্তোর কাছ থেকে বল পেয়ে করেছেন ম্যাচের একমাত্র ও জয়সূচক গোলটি।

এল ক্লাসিকোতে এটা দ্বিতীয় গোল রাকিটিচের। বার্সা মিডফিল্ডার আরো একটা গোল পেতে পারতেন। কিন্তু তাকে গোলবঞ্চিত করেছেন রিয়াল গোলরক্ষক থিবাউট কোর্তোয়া। শুধু এই যাত্রাতেই নয়, বেলজিয়ান শেষ প্রহরী মেসি, সুয়ারেজকেও গোলমুখ খুলতে দেননি। সেই তুলনায় বার্সার জার্মান গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনকে বড় কোনো পরীক্ষাই দিতে হয়নি।