গেইলের ইতিহাস, ক্যারিবীয়দের নতুন রেকর্ড

বয়স ছাড়িয়ে গেছে ৩৯। সঙ্গে ফর্মহীনতা। অনেকেই ক্রিস গেইলের শেষটা দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু ফুরিয়ে যাননি ক্যারিবীয় ব্যাটিং দৈত্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেরুন জার্সিতে এখনো কিছু দেওয়ার বাকি আছে তার। বুধবার ব্রিজটাউনে বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরি করে সেটারই প্রমাণ দিলেন গেইল।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রায় পুরোটা সময় ফর্মহীনতায় ভুগেছেন ক্যারিবীয় ড্যাশিং ওপেনার। বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে তার অর্জন বলতে মাত্র একটি হাফসেঞ্চুরি সেটাও আবার ঘুমপাড়ানি ব্যাটিংয়ে। কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেই জেগে উঠলেন ঘুমন্ত বাঘ।

এরপর যা হওয়ার তাই হলো। ব্যাটকে তরবারি বানিয়ে ইংলিশ বোলারদের রীতিমতো কচুকাটা করলেন গেইল। তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৪তম শতক। শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন ১২৯ বলে ১৩৫ রানের ঝড়ো এক সেঞ্চুরি করে। ইনিংসে ১২টি ছক্কা মেরেছেন গেইল, চার মাত্র তিনটি।

গেইলের সেঞ্চুরির ওপর দাঁড়িয়ে ইংলিশদের বিপক্ষে নির্ধারিত ওভারে আট উইকেটে ৩৬০ রানের পাহাড় গড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু সংগ্রহটা আগলে রাখতে পারেনি ক্যারিবীয় বোলাররা। বিফলেই গেল গেইলের সেঞ্চুরিটা। স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হওয়ার কথা বাঁ-হাতি বিধ্বংসী ওপেনারের।

ব্রিজটাউনে ম্যাচে গেইলকে সান্ত্বনা দিতে পারে দারুণ একটা রেকর্ড। কাল যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর কীর্তি গড়েছেন ক্যারিবীয় সেনসেশন। গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচ ছক্কা হাঁকিয়ে শহিদ আফ্রিদিকে ছুঁয়েছিলেন গেইল। পাকিস্তানি কিংবদন্তিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রায় সাত মাস অপেক্ষা করতে হলো তাকে।

আফ্রিদিকে পেছনে ফেলতে একটি ছক্কাই যথেষ্ঠ ছিল। কিন্তু একটি নয়, দুটি নয়, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২টি ছক্কা মেরেছেন গেইল। ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে গেইলের ছক্কার সংখ্যা এখন ৪৮৮টি। ৫০৮টি ইনিংস খেলে ৪৭৬টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন আফ্রিদি। তাকে ছাড়াতে অবশ্য ছয়টি ইনিংস বেশি খেলেছেন আফ্রিদি।

প্রায় বিশ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে টেস্টে ৯৮টি, ওয়ানডেতে ২৮৭টি ও টি-টোয়েন্টিতে ১০৩টি ছক্কা মেরেছেন গেইল। সেখানে টেস্টে ৫২টি, ওয়ানডেতে ৩৫১টি এবং টি-টোয়েন্টিতে ৭৩টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন আফ্রিদি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুই ফরমেটে গেইলের ছক্কা বেশি হলেও ওয়ানডেতে আফ্রিদির ধারে কাছেও কেউ নেই।

শুধু গেইলই নয়, কাল এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৩টি ছক্কার নতুন রেকর্ড গড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। তাতে করে বিব্রতকর এক রেকর্ড থেকে মুক্তি নিল ক্যারিবীয়রা। ২০১৪ সালে তাদের বিপক্ষেই ২২টি ছক্কা মেরেছিল নিউজিল্যান্ড। অবাক হওয়ার তথ্য হচ্ছে সেদিনের ম্যাচটা নেমে এসেছিল ২১ ওভারে!

রেকর্ডটা গত বছরই ভাঙার সুযোগ ছিল ইংল্যান্ডের সামনে। নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৮১ রান কার পথে ২১টি ছক্কা মেরেছিল ইংলিশরা। এ ছাড়া ওয়ানডেতে এক ইনিংসে তিনবার (বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে) ১৯টি ছক্কা হাঁকিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

কাল অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যার অর্ধেকেরও বেশি কাজটা একাই করে দিয়েছেন গেইল। তিনি ছক্কা মেরেছেন ১২টি। চারটি ছক্কা দেখিয়েছে ডারেন ব্রাভোর ব্যাট। অ্যাশলে নার্স মেরেছেন তিন ছয়। এ ছাড়া ক্যাম্পবেল, শাই হোপ, শিমরন হেটমায়ার ও দেবেন্দ্র বিশু একটি করে ছক্কা মেরেছেন।

ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের তোপটা বেশি গেছে মঈন আলির ওপর দিয়ে। নয়টি ছক্কা হজম করেছেন ইংলিশ এই অফস্পিনার। আরেক স্পিনার আদিল রশিদকে ছয়বার সীমানা দড়ির ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলে ক্যারিবীয়রা। ইনিংসে শেষ বলে রশিদকে ছক্কা মেরেই নতুন রেকর্ড গড়েন নার্স।

লিয়াম প্লাঙ্কেট চারটি, মার্ক উড তিনটি ও ক্রিস ওকস একটি ছক্কা হজম করেছেন। ইংলিশ বোলারদের মধ্যে শুধু বেন স্টোকসকেই ছক্কা মারতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। তবু নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেটে ৩৬০ রানের পাহাড় গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু রয়-রুটদের ব্যাটিং তাণ্ডবের কাছে শেষ পর্যন্ত হেরে গেছে ক্যারিবীরা। তাতে ম্লান হয়ে গেছে গেইল ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছক্কার সব রেকর্ডও।