তামিমের সাইক্লোন, চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা

এমন একটা ফাইনালের প্রত্যাশা আগে থেকেই ছিল। প্রত্যাশার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটল বিপিএলের ছয় নম্বর শিরোপা লড়াইয়ে। চার-ছক্কার বৃষ্টি, দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের প্রদর্শনী, গ্যালারিতে গগনবিদারী চিৎকার, থ্রিলার- সবমিলিয়ে জমজমাট একটা লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে নির্ধারণ হলো শিরোপা।

যেখানে শেষ হাসি হাসল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। জিতে নিল আসরের দ্বিতীয় ট্রফি। রাজত্ব উদ্ধারের জন্য সবচেয়ে বড় কৃতিত্বটা প্রাপ্য তামিম ইকবাল। আজ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে তামিমের ব্যাটে যে সাইক্লোন উঠেছিল সেটাই নির্ধারণ করে দিল ফাইনালের ভাগ্য। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস জিতল টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় শিরোপা।

আশা জাগিয়েও ২০০ রানের কঠিন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারল না ঢাকা ডায়নামাইটস। রান তাড়া করতে নেমে নয় উইকেটে ১৮২ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে সাকিবের দল। অথচ একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল হারানো মুকুট হেসেখেলেই ফিরে পাবে সাকিব আল হাসানের দল। রান পাহাড় ডিঙাতে নেমে নবম ওভারে এক উইকেটে এক শ ছাড়ানো ঢাকা হঠাৎই পথ হারাল। তাতেই শিরোপা হাতছাড়া হলো সাবেক চ্যাম্পিয়নদের।

ওপেনার উপুল থারাঙ্গা ও তিনে নামা রনি তালুকদার রীতিমতো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে। মিরপুরের বাইশ গজে এক সঙ্গে ঝড় উঠল দুজনের ব্যাটে। হাফসেঞ্চুরি তুলে নেওয়া রনি দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেটা বাতাসে মিলিয়ে গেছে হঠাৎ ছন্দপতনে।

দলীয় সংগ্রহ তিন অংক ছোঁয়ার পরই পথ হারিয়েছে ঢাকা। দুর্দান্ত খেলতে থাকা ঢাকার ব্যাটসম্যানদের সাজঘরে আসা যাওয়ার মিছিল লেগে যায়। যে দুজনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বপ্ন দেখছিল ঢাকার সমর্থকরা দুজনই যোগ দিলেন সেই মিছিলে। কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রস্থান হলো রনি, থারাঙ্গা দুজনেরই।

২৭ বলে ৪৮ রান করে ফিরে গেছেন ঢাকার ওপেনার থারাঙ্গা। ৩৮ বলে ৬৬ রানে থেমেছেন রনি। ঢাকার রানের চাকার গতি কমে গেছে তাতেই। একই সঙ্গে জয়ের স্বপ্নটাও ধূসর হতে থাকে ক্রমেই। সাকিব আল হাসান, আন্দ্রে রাসেল, কাইরেন পোলার্ডের একজনও জ্বলে উঠতে পারলেন না ফাইনালের মঞ্চে। সেটার খেসারত দিতে হলো শিরোপা খুইয়ে।

ওয়াহাব রিয়াজ ধসিয়ে দিয়েছেন ঢাকার মিডল অর্ডার। লোয়ার অর্ডারকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। কুমিল্লার বোলিং তোপে থারাঙ্গা-রনি ছাড়া দুই অংক ছুঁতে পারলেন মাত্র তিনজন- পোলার্ড (১৩), নুরুল হাসান (১৮) ও মাহমুদুল হাসান (১৫)। বোলারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল তামিমের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটাকে দিয়েছে পূর্ণতা।

এর আগে আগে কখনো বিপিএল ফাইনাল খেলার সুযোগ হয়নি তামিম ইকবালের। আজ প্রথমবারের ফাইনাল খেলতে নেমেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে জেতালেন শিরোপা। স্বপ্নপূরণের ম্যাচে তামিম যে এমন একটা টর্নেডো ইনিংস খেলবেন সেটা ছিল কল্পনারও বাইরে।

ঢাকা ডায়নামাইটসের বোলারদের পিটিয়ে তুলোধুনো করে তামিম তুলে নিলেন বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরি। তার হার না মানা ১৪১ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়ে সাকিবদের কাঁধে রানের পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। এ জন্য মাত্র তিন উইকেট খরচ হয়েছে তাদের।
যার শুরুটাই হয়েছিল ধাক্কা দিয়ে।

টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে স্কোর বোর্ডে নয় রান জমা পড়তেই সাজঘরে ফিরে যান এভিন লুইস। রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউর আউট থেকে বাঁচতে পারেননি ক্যারিবীয়ান ওপেনার। ধাক্কাটা এনামুল হক বিজয়কে নিয়ে প্রায় সামলে নেন তামিম।

৯৮ রানে দলের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরে যান বিজয়। ফেরার আগে ৩০ বলে ২৪ রানের মন্থর গতির ইনিংস খেলেছেন তিনি। ২১ বলে আবার ১৭ রানে অজেয় ছিলেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। এই দুজনের ব্যাটিং টি-টোয়েন্টির বিপরীত ধারার হলেও ব্যাট হাতে সেটা একাই পুষিয়ে দিয়েছেন তামিম।

এক শ রানের মধ্যে তিন উইকেটের পতন হলেও কুমিল্লার রানের চাকা সচল রাখেন তামিম। ৫০ বলে ছুঁয়েছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার। সেঞ্চুরির পর তামিমের ব্যাট যেন তরবারি হয়ে উঠেছিল; কুমিল্লা ওপেনার ঢাকার কোন বোলারকে কচুকাটা করেননি! শেষ অবধি ৬১ বলে ১৪১ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে বীরদর্পে সাজঘরে ফিরেছেন তামিম।

তবু একটা আক্ষেপ রেখে গেলেন তিনি। আর মাত্র ছয় রানের জন্য ক্রিস গেইলকে টপকে বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়তে পারলেন না তামিম। তবে যা করেছেন বাঁহাতি ওপেনার সেটাই বা কম কিসে! খুনে ব্যাটিংয়ে তামিম ছক্কা মেরেছেন ১১টি; চার ১০টি। ব্যাটে হাতে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার পর ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত দুটি ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। অবধারিতভাবেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম।