দারুণ জয়ে প্লে-অফ পর্বে মাশরাফিরা

এবারের বিপিএলে প্রথমবারের দেখায় শক্তিশালী রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল রাজশাহী কিংস। দ্বিতীয়বারের দেখায় সেই হারের মধুর প্রতিশোধই নিল রংপুর। আজ চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রাজশাহীকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। রাজশাহীর ছুড়ে দেওয়া ১৪১ রানের জবাবে ছয় উইকটে ও আট বল হাতে রেখেই দারুণ জয় তুলে নিয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল (১৪৫)।

দাপুটে এই জয়ে আবারো পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে এলো রংপুর রাইডার্স। একই সঙ্গে দ্বিতীয় দল হিসেবে কোয়ালিফায়ার পর্ব নিশ্চিত করে ফেলল মাশরাফির দল। ১১ ম্যাচে সাত জয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। এক ম্যাচ কম খেলা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের পয়েন্টও রংপুরের সমান ১৪। তবে রানরেটে পিছিয়ে দুইয়ে নেমে যেতে হলো শেষ চার নিশ্চিত করা কুমিল্লাকে।

সহজ জয়ের রাস্তাটা প্রথমে পরিষ্কার করে দিয়েছে রংপুরের দুর্দান্ত বোলিং বিভাগ। মাশরাফি-ফরহাদদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সুবাদে লক্ষ্যমাত্রা হাতের নাগালেই রাখে রংপুর। শক্তিশালী রংপুরের ব্যাটিং বিভাগরে কাছে রাজশাহীর পুঁজিটা কমই মনে হচ্ছিল। আসলেই তাই। ক্রিস গেইল এবং অ্যালেক্স হেলসকে ইনিংসের শুরুর দিকে হারলেও বিশাল জয়ের জন্য বেগ পেতে হয়নি মাশরাফিদের।

১৪ বলে ১০ রানে গেইল ফিরে গেছেন সাজঘরে। অবশ্য তিনি যা বিনোদন দিয়েছেন দর্শকদের তা ফিল্ডিংয়ের সময়ই। সীমানাদঁড়ির সামনে কোমড় দুলিয়ে গ্যালারি মাতিয়েছেন। কিন্তু ব্যাট হাতে মাতাতে পারেননি তিনি। উদ্বোধনী জুটিতে তার সঙ্গী অ্যালেক্স হেলসও বেশিদূর যেতে পারেননি। ১৫ বলে ১৬ রানে আউট হয়েছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। দলের ৫৪ রানে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরেছেন হেলস।

এরপরই শুরু দক্ষিণ আফ্রিকান ‘শো’। রাইলি রুশো ও এবি ডি ভিলিয়ার্স শো আয়েস করে পেটালেন মুস্তাফিজ-মিরাজদের। কিন্তু আগের দিনের মতো তৃতীয় উইকেট জুটিতে ম্যাচটা শেষ করতে পারেনি রংপুর। রুশো, ডি ভিলিয়ার্স কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ফিরে গেলেন সাজঘরে। ৪৩ বলে ৫৫ রান করেছেন রুশো। তার ইনিংসে পাঁচটি চারের পাশাপাশি দুটি ছিল চারের মার।

তবে সতীর্থ স্বদেশি হাফসেঞ্চুরি করে বিদায় নিলেও পারেননি ডি ভিলিয়ার্স। ২৭ বলে ৩৭ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। তিনটি ছক্কার পাশাপাশি এক চার হাঁকিয়েছেন ‘মিস্টার থ্রি সিক্সটি’। ডি ভিলিয়ার্সের আউটে বোলার আরাফাত সানির চেয়ে মেহেদি হাসান মিরাজের কৃতিত্বই বেশি। বাজপাখির মতো উড়াল দিয়ে ডি ভিলিয়ার্সের ক্যাচটি নিয়েছেন রাজশাহীর তরুণ নেতা। দুই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান ফিরে যাওয়ার পর সহজ জয়ের শেষের আনুষ্ঠানিকতা সারেন মোহাম্মদ মিঠুন (৪*) ও নাহিদুল ইসলাম (১১*)।

অবশ্য ম্যাচ শুরুর আগে হাসি ফুটেছিল রাজশাহীর মুখে। টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন দলটির অধিনায়ক মিরাজ। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে ‘জায়ান্ট কিলার’ তকমা পাওয়া দলটি। চতুর্থ ওভারেই ২৮ রান যোগ করতে দুই উইকেট হারায় তারা। জোড়া ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই ৬২ রানে দলের তৃতীয় উইকেটের পতন। ১৬ বলে ১৪ রান করে ফিরে যান সৌম্য সরকার।

এ ছাড়া ওপেনার চার্লস ১২ ও মুমিনুল হক চার রানে ফিরে গেছেন প্যাভিলিয়নে। মুমিনুলের মতো উইকেটে থিতু হওয়ার আগে সাজঘরে ফিরে গেছেন মিরাজও। চার বলে ছয় রান করেছেন তিনি। ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে রংপুরের দুর্দান্ত বোলিংয়ের বিপরীতে কিছুটা যা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন আসরের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান লরি ইভান্স। ৩১ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৩৫ রানে আউট হয়েছেন তিনি।

পরে মিডল অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের দৃঢ়তায় কোনোরকম লড়াকু পুঁজি তুলতে সক্ষম হয়েছে রাজশাহী কিংস। ২০ বলে ২২ রান করেছেন কাইস আহমেদ। ক্রিশ্চিয়ান জোঙ্কার ১১ বলে ১৬ এবং ফজলে মাহমুদ রাব্বির ব্যাট থেকে এসেছে ২৪ বলে ১৮ রান। রাজশাহীর পতন হওয়া উইকেটের সর্বোচ্চ তিনটি নিয়েছেন ফরহাদ রেজা। দুটি করে শিকার শহিদুল ইসলাম ও নাজমুল ইসলাম অপু।