‘ক্যারিবীয়’ ঝড়ের পর দুই পাকিস্তানির তাণ্ডব

খুলনা টাইটানসের হার চলমান বিপিএলের সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্য। আজ নিয়মরক্ষার ম্যাচেও হেরেছে মাহমুদুল্লাহর দল। এভিন লুইসের বিধ্বংসী সেঞ্চুরি সুবাদে কুমিল্লা ভাইকিংসের ছুড়ে দেওয়া রানপাহাড়ে পিষ্ট হয়েছে টাইটানস। ২৩৮ রানের হিমালয়তুল্য লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের সাত বল বাকি থাকতেই ১৫৭ রানে গুটিয়ে গেছে পয়েন্ট তালিকার তলানির দলটি।

আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খুলনা টাইটানস হেরেছে ৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে। টুর্নামেন্টের চলতি আসরে ১১ ম্যাচে এটা তাদের নবম হার। পক্ষান্তরে নয় ম্যাচে ছয় জয়ে চিটাগং ভাইকিংসকে সরিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। একই সঙ্গে কোয়ালিফায়ার পর্বে এক পা দিয়ে রাখল কুমিল্লা।

অবশ্য খুলনা টাইটানসের ইনিংসের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। পাঁচ ওভারে বিনা উইকেটে দলীয় সংগ্রহ পঞ্চাশ ছাড়িয়েছিল তারা। দ্রুত রান তোলার দায়িত্বটা পালন করেছেন ওপেনার ব্রেন্ডন টেলর। ১১৬ রানে খুলনার চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি সাজঘরে ফিরতেই খুলনা ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে যায়।

ফেরার আগে ৩৩ বলে ৫০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে গেছেন জিম্বাবুইয়ান উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। উদ্বোধনী জুটিতে তার সঙ্গী অবশ্য অনেক আগেই ফিরে গেছেন। ৫৫ রানের শুরুর জুটি ভাঙে ২৪ বলে জুনায়েদ সিদ্দিক ২৭ রানে বিদায় নিলে। এই দুজনের পরে ব্যাট করতে আসা চারজনই দুই অংক ছুঁয়েছেন।

কিন্তু আশা জাগিয়ে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি একজনও। ডেউইড মালান (১০ বলে ১৩), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (সাত বলে ১১), কার্লোস ব্র্যাথওয়েট (১৩ বলে ২২), নাজমুল হোসেন শান্তর (১২ বলে ১৪) ছোটখাটো ইনিংসগুলো খুলনার হারের ব্যবধান কমাতেই যা কাজে লেগেছে। কুমিল্লার দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে খুলনার লোয়ার অর্ডারের কেউ তো দাঁড়াতেই পারেনি।

খুলনাকে দ্রুত অলআউট করতে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন দুই পাকিস্তানি তারকার বোলিং ঝড়। তিন উইকেট তুলে নিয়ে খুলনার টপ অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছেন শহিদ আফ্রিদি। ১৯তম ওভারে বোলিং করতে এসে পেসার ওয়াহাব রিয়াজ দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন খুলনার লোয়ার অর্ডার। এ ছাড়া মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মেহেদি হাসান ও থিসারা পেরেরা একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে এভিন লুইসের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে ভর করে পাঁচ উইকেটে খুলনা টাইটানসের কাঁধে ২৩৭ রানের রানের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে কুমিল্লার সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। চলমান আসর ও বিপিএলে কোনো দলের এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আরেকটু হলে তো দুদিন আগে গড়া রংপুর রাইডার্সের ২৩৯ রানের রেকর্ডই ভেঙে ফেলতো কুমিল্লা। কিন্তু আশা জাগিয়েও মাশরাফিদের ছাড়িয়ে যেতে পারেনি সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে কী ভুলটাই না করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ!

ব্যাট হাতে শুরুতেই ক্যারিবীয়ান ঝড় তোলেন ওপেনার লুইস। ব্যাটকে তরবারি বানিয়ে টাইটানস বোলারদের কচুকাটা করেছেন এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। অথচ লুইসের ব্যাটে যতটা আগ্রাসন ছিল ততটাই শান্ত সঙ্গী ছিল ‘লোকাল হিরো’ তামিম ইকবালের ব্যাট। ২৯ বলে ২৫ রান করে আউট হয়ে যান তামিম। ৭.২ ওভারে ৫৮ রানে ভাঙে কুমিল্লার উদ্বোধনী জুটি।

পরে বলেই ‘গোল্ডেন ডাক’ মেরে সাজঘরে ফিরে যান এনামুল হক বিজয়। এই জোড়া ধাক্কাটা লুইস ভালোভাবেই সামলে নিয়েছেন। সতীর্থ অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে নিয়ে গড়েন ৯৭ রানের টর্নেডো জুটিতে। যেখানে ইমরুলের অবদান ২১ বলে ৩৯ রান (চারটি চার, দুটি ছক্কা)।

সঙ্গী হারালেও যথারীতি রূদ্রমূর্তি ধরে রাখলেন লুইস। চট্টগ্রামের বাইশ গজে প্রলয় ঘটিয়ে দেন এই ক্যারিবীয়। করলেন আসরে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৪৯ বলে ১০৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে অজেয় থাকলেন লুইস। ইনিংসে পাঁচটি চার তার। এর দ্বিগুণ ছক্কা! শেষ দিকে ১৫ বলে ২৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস দেখিয়েছে অপরাজিত থাকা শামসুর রহমানের ব্যাট।

অথচ এমন ম্যাচে দ্যুতি ছড়ানো তাইজুল ইসলামের হাতে ্বলই তুলে দেননি মাহমুদুল্লাহ। তাইজুল উপেক্ষিত থাকার ম্যাচে তার দুই সতীর্থ শরিফুল হক (৫৩) ও সাদ্দাম হোসেন (৫৯) চার ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ১১২ রান!