দুর্দান্ত মুস্তাফিজ, রাজশাহীর আরেকটি চমক

এবারের বিপিএলের শুরু দিকটা ছিল নিষ্প্রাণ। রানখরায় ভুগছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটা। সেই ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে বিপিএল। সিলেট পর্বে কমবেশি রান হয়েছে। ঢাকায় দ্বিতীয় দফার ম্যাচগুলোতেও রাজত্ব করেছেন ব্যাটসম্যানরা। চট্টগ্রাম পর্বে তো রীতিমতো রান উৎসব চলছে। আজ দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে রানবন্যার সঙ্গে থ্রিলারও উপহার দিয়েছে চিটাগং ভাইকিংস ও রাজশাহী কিংস।

উত্তেজনার রেণু ছড়ানো ম্যাচে শেষ হাসি হাসল রাজশাহী কিংস। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে পাঁচ উইকেটে ১৯৮ রানের পাহাড় গড়েছে। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ওভারে আট উইকেটে ১৯১ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে চিটাগং ভাইকিংস। মেহেদি হাসান মিরাজের রাজশাহী জিতেছে সাত রানে।

টুর্নামেন্টের চলতি আসরে এটা রাজশাহীর পঞ্চম জয়। এই জয়ে কোয়ালিফায়ারের আশাটা ভালোভাবেই জাগিয়ে রেখেছে তারা। এর আগে আসরের তিন শক্তিশালী দল রংপুর রাইডার্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস এবং ঢাকা ডায়নামাইটসকেও হারিয়েছিল রাজশাহী। আজ ফর্মে থাকা ভাইকিংসকে হারিয়ে আরেকটা চমক উপহার দিল মিরাজের দল। এনিয়ে নিজেদের মাঠে দুই ম্যাচ খেলে দুটোতেই হারল চিটাগং ভাইকিংস। সবমিলিয়ে চলতি আসরে নবম ম্যাচে এটা মুশফিকদের তৃতীয় হার। তবে চট্টগ্রামে এসে ছন্দ হারালেও ছয় জয়ে যথারীতি শীর্ষে আছে ভাইকিংস।

অথচ ম্যাচটা প্রায় হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছিল ভাইকিংস। শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য ২৭ রান দরকার ছিল তাদের। ১৮তম ওভারে এসে ছয় রান দিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ রাজশাহীর হাতে এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। দল জেতানোর শেষ দায়িত্বটাও পড়েছে কাটার মাস্টারের হাতে। শেষ ওভারে ১২ রানের পুঁজি মুস্তাফিজ আগলে রাখলেন ঝড় তোলা সিকান্দার রাজা ও নতুন ব্যাটসম্যান রবিউল হককে আউট করে।

ম্যাচটা যে জমবে সেটা বোঝা গেছে ভাইকিংসের ইনিংসের শুরুতেই। ১৯৯ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় ওভার শেষ হওয়ার আগেই বিনা উইকেটে ৩১ রান তুলে ফেলে স্বাগতিকরা। ক্যামেরন ডেলপোর্ট আট বলে সাত রান করে ফিরে গেলেও দলকে লড়াইয়ে রাখেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ ও ইয়াসির আলি।

অষ্টম ওভারের আগে ৭৯ রান তুলে ফেলার পর ভাইকিংস খুইয়েছে দ্বিতীয় উইকেট। আফগান ঝড় থামান মিরাজ। শাহজাদ আউট হয়েছেন ২২ বলে ৪৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে। ইনিংসে তিনটি চার ও পাঁচটি ছক্কা মেরেছেন ভাইকিংসের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। তবে সঙ্গী হারালেও টিকে থাকেন এবারের বিপিএলের আবিষ্কার ইয়াসির আলি।

শাহজাদের দেখানো পথেই হাঁটেন তিনি। সতীর্থ ব্যর্থ হলেও ঝড়ো হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ইয়াসির। ৩৮ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে কক্ষপথেই রেখে গেছেন তিনি। সাতটি চার ও দুটি ছক্কা ছিল তার ইনিংসে। ২০ বলে ২২ রানে করা মুশফিককে ফিরিয়ে দারুণভাবেই ম্যাচে ফিরে আসে রাজশাহী কিংস। বাকি সময়ে একতরফা ভাবে রাজশাহী জিতে যাবে এমনটাই ভাবা হচ্ছিল।

কিন্তু হঠাৎই ম্যাচের রঙ পাল্টে দেন অফ ফর্মে থাকা সিকান্দার রাজা। আজ রাজশাহীর বিপক্ষেই জ্বলে উঠেছেন জিম্বাবুইয়ান তারকা। ১৫ বলের ইনিংসে দুটি করে চার-ছক্কায় ২৯ রান করে স্বাগতিকদের জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন তিনি। তাকে আউট করে ম্যাচের নায়ক বনে যান মুস্তাফিজ।

ম্যাচের শেষ ওভারের প্রথম বলেই রাজার স্টাম্প উড়িয়ে ফেলেন কাটার মাস্টার। চার ওভারে ২৮ রান দিয়ে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করায় মুস্তাফিজই হয়েছেন অন অব দ্য ম্যাচ। এ ছাড়া দুটি করে উইকেট নিয়ে পার্শ্ব নায়কের ভূমিকায় হাজির হয়েছেন মিরাজ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি।

এর আগে ম্যাচে টস জিতে রাজশাহী কিংসকে ব্যাটিংয়ে পাঠান চিটাগং ভাইকিংস অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ব্যাট হাতে দারুণ সূচনাই করেছে রাজশাহী। ষষ্ঠ ওভারে দলীয় সংগ্রহে হাফসেঞ্চুরি করেছে তারা। ফর্মহীনতায় বাদ পড়া আজ সৌম্য সরকার একাদশে সুযোগ পেয়ে ভালোকিছুর আশা জাগিয়েও ফিরে গেছেন সাজঘরে।

২০ বলে পাঁচটি চারের সুবাদে ২৬ রান করে আউট হয়ে গেছেন সৌম্য। তবে টিকে থাকলেন আরেক ওপেনার জনসন চার্লস। শুরু থেকেই ঝড় তোলা এই ক্যারিবীয়ান তুলে নিয়েছেন হাফসেঞ্চুরি। সাজঘরে ফেরার আগে ৪৩ বলে ৫৫ রান করেছেন চার্লস। ইনিংসে পাঁচটি চারের পাশাপাশি দুটি ছয় মেরেছেন তিনি।

অর্ধশতকের ইনিংস খেলার পথে দ্বিতীয় উইকেটে লরি ইভান্সকে নিয়ে ৭০ রানের দারুণ এক জুটি গড়েছেন চার্লস। জুটি ভাঙে বিপিএলের চলমান আসরের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানের বিদায়ে। ২৯ বলে চারটি চারে ৩৬ রান করেছেন ইভান্স।

শেষ দিকে ঝড় উঠেছে ক্রিশ্চিয়ান জোঙ্কার ও রায়ান টেন ডেসকাটের ব্যাটে। এই দুজনের ঝড়ো ক্যামিও ইনিংসের সুবাদে দলীয় সংগ্রহে দুশোর কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছে রাজশাহী কিংস। ১২ বলে ২৭ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে রান আউট হয়েছেন ডেসকাটে। তার ইনিংসে চারটিই ছিল ছক্কার মার।

কম যাননি জোঙ্কারও। ১৭ বলে ৩৭ রানের ঝড় দেখিয়েছে তার ব্যাট। ইনিংসে তিনটি ছক্কার পাশাপাশি একটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করেও দলকে দুশোর মুখ দেখাতে পারেননি জোঙ্কার। তবে রবিউল হকের প্রথম দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ঠিকই সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তিনি। দুটি বিমার দেওয়ার শাস্তি হিসেবে ওভারটা শেষ করতে পারেননি রবিউল হক।

তার শেষ তিনটি বল করেছেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। তাকেও উড়িয়ে মেরেছিলেন জোঙ্কার। কিন্তু লং অফে তাকে তালুবন্দী করেন মুশফিক। রাজশাহীর ইনিংসের সতীর্থরা ক্যাচ মিসের যে মহড়া বসিয়েছেন সেই ভুলটা আর করেননি ভাইকিংস অধিনায়ক। ভাইকিংসের বোলারদের পক্ষে সবচেয়ে সফল পেসার খালেদ আহমেদ দুটি শিকার করেছেন। ওভার প্রতি ছয় রান দেওয়া আবু জায়েদ রাহি ও ডেলপোর্ট একরি করে উইকেট নিয়েছেন।