খুলনার বিদায়, আশা বাঁচিয়ে রাখল সিলেট

বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের রবিন লিগ রাউন্ডের শেষ দিকে এসে পেণ্ডুলামের মতো দুলছে সিলেট সিক্সার্সের ভাগ্য। ভাগ্য নিজেদের অনুকূলে ফেরাতে মরণকামড়ই দিচ্ছেন সাব্বির-তাসকিনরা। এ যাত্রায় খুলনা টাইটানসকে হারিয়ে কোয়ালিফায়ারের আশা কিছুটা হলেও বাঁচিয়ে রাখলেন তারা।

আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে খুলনাকে ৫৮ রানের বড় ব্যবধানে রানে হারিয়েছে সিক্সার্স শিবির। আগে ব্যাট করতে নেমে মাহমুদুল্লাহদের চার উইকেটে ১৯৫ রানের পাহাড় ছুড়ে দিয়েছে অলোক কাপালির দল। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ওভারটুকুও খেলতে পারেনি খুলনা। ইনিংসের ১১ বল বাকি থাকতে ১৩৭ রানে গুটিয়ে গেছে মাহমুদুল্লাহর দল।

টুর্নামেন্টের চলতি আসরে ১০ ম্যাচে এটা খুলনার অষ্টম হার। এই হারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল ধুঁকতে থাকা দলটির। খুলনাকে বিদায় করে শেষ চারের স্বপ্নটা জিইয়ে রাখল সিলেট সিক্সার্স। ১০ ম্যাচের মধ্যে এটা তাদের চতুর্থ জয়। পরের রাউন্ডে যেতে হলে বাকি দুই ম্যাচ সিলেটকে জিততে তো হবেই, একই সঙ্গে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের দিকে।

অবশ্য বিশাল লক্ষ্য দেখে শুরুতে ভড়কে যায়নি খুলনা টাইটানস। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ব্যাট করেন টাইটানস ব্যাটসম্যানরা। ২৭ রানে উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন হলেও রানের চাকা সচল রাখে তারা। ছয় ওভারে দলীয় সংগ্রহ ৬০ ছাড়িয়ে লড়াইয়ের আভাস দিয়েছিল মাহমুদুল্লার দল। কিন্তু কয়েক বলের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় খুলনা।

৮২ রানে দলের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন ব্রেন্ডন টেলর। তাতেই ম্যাচটা পুরোপুরিভাবে সিলেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। মিডল অর্ডারে নামা আরিফুল হকের ২১ বলে ২৪ রানের ইনিংসটা খুলনার হারের ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র। আরিফুলই শেষ ব্যাটসম্যান যিনি ইনিংসে দু্ই অংকে যেতে পেরেছেন।

অথচ খুলনার টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানেই আউট হয়েছেন উইকেটে থিতু হয়ে। ২৩ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৩৪ রান করে বিদায় নিয়েছেন ওপেনার ব্রেন্ডন টেলর। উদ্বোধনী জুটিতে তার সঙ্গী জুনায়েদ সিদ্দিকি করেছেন ১১ বলে ২০ রান। এ ছাড়া আল আমিন ১৬ ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ ১১ রানে ফিরেছেন প্যাভিলিয়েন।

সিলেটের দুর্দান্ত বোলিং তোপে লোয়ার অর্ডারের কেউ উইকেটে দাঁড়াতেই পারেননি। তাদের দ্রুত গুটিয়ে দিতে মূল ভূমিকাটা রেখেছেন নাবিল সামাদ। তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন সিলেটের এই বোলার। সাত বলে ছয় রান দিয়ে দুটি শিকার করেছেন তাসকিন আহমেদ। এ ছাড়া সোহেল তানভীর, ইবাদত হোসেন, মোহাম্মদ নওয়াজ ও কাপালি একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সিলেট সিক্সর্সকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও আফিফ হোসেন। জেসন রয়কে ওপেনিংয়ে না নামিয়ে যে ঝুঁকিটা নিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট সেটা কাজে দিয়েছে। সিলেট উদ্বোধনী জুটিতে যোগ করেছে ৭১ রান।

অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলে জুটি বিচ্ছিন্ন করে খুলনা টাইটানসকে স্বস্তি এনে দেন তাইজুল ইসলাম; আউট করেন ২২ বলে ৩৪ রান (তিনটি চার ও দুটি ছক্কা) করা লিটনকে। পরে হাফসেঞ্চুরির আভাস পাওয়া আফিফকেও সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন খুলনার এই স্পিনার।

৩৭ বলে ৪৯ রানে আউট হয়েছেন আফিফ। তার ইনিংসে পাঁচটি চারের সঙ্গে ছিল দুটি ছক্কার মার। যার পরিবর্তিত হিসেবে ওপেনিংয়ে নেমেছেন আফিফ সেই জেসন আজ সুবিধা করতে পারেননি। ছয় বলে মাত্র এক রান করে ফিরে গেছেন ইংলিশ তারকা। স্কোর বোর্ডে বড় সংগ্রহ জমা করতে তাতে অবশ্য বেগ পেতে হয়নি সিলেট সিক্সার্সকে।

দুই ওপেনারের এনে দেওয়া শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে খুলনার বোলারদের শাসন করেছেন সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ নওয়াজ। নিজেকে হারিয়ে খোঁজা সাব্বির আজ আবার জ্বলে উঠেছেন। ২৯ বলে ৪৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে শেষ অবধি অজেয় ছিলেন তিনি। ইনিংসে চারটি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন সদ্যই জাতীয় দলে ডাক পাওয়া এই ব্যাটসম্যান।

কম যাননি শেষ জুটিতে তার সঙ্গী নওয়াজও। ২১ বলে ৩৯ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেছেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার। ঝড়ো ইনংসে তিনটি চার ও দুটি ছক্কা মেরেছেন নওয়াজ। এ ছাড়া ১০ বলে একটি করে চার-ছক্কায় ১২ করেন ধারাবাহিক পারফর্মার নিকোলাস পুরান। খুলনার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল তাইজুল নিয়েছেন তিনটি উইকেট।