রানপাহাড়ে পিষ্ট দুর্দান্ত চিটাগং

চলতি আসরের শুরু থেকেই ফর্মের তুঙ্গে চিটাগং ভাইকিংস। সাত ম্যাচের ছয়টিতে জিতে ঘরের মাঠে বিপিএল খেলতে এসেছে মুশফিকুর রহিমের দল। কিন্তু ঘরের মাঠে ভাইকিংসের শুরুটা হলো দুঃস্বপ্নের। আজ জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে রংপুর রাইডার্সের রানপাহাড়ে চাপা পড়েছে স্বাগতিক দলটি।

ম্যাচটার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ইনিংস শেষেই। ২৪০ রানের অবিশ্বাস্য লক্ষ্যমাত্রা ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো শুরু করলেও অলৌকিক কিছু করতে পারেনি চিটাগং ভাইকিংস। রংপুরের বোলিং তোপে ইনিংসের নির্ধারিত ওভারে আট উইকেটে ১৬৭ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে স্বাগতিকরা। রংপুর চলমান আসরের পঞ্চম জয়টি পেয়েছে ৭২ রানের বিশাল ব্যবধানে। অন্যদিকে আট ম্যাচে মধ্যে এনিয়ে দ্বিতীয়বার হারলেন মুশফিকরা। তবু শীর্ষস্থানে অটুট আছেন তারা।

অসম্ভবের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ১৮ বলে স্কোর বোর্ডে বিনা উইকেটে ২৮ রান জমা করে ভাইকিংস। তাতে নড়েচড়ে বসেছিলেন দর্শকরা। কিন্তু লড়াইয়ের আশা জাগিয়েও শুরুতেই চাপে ভেঙে পড়েছে মুশফিকুর রহিমের দল। তাদের ছন্দ পতনের শুরু হলো তৃতীয় ওভারের শেষ বলে। ১২ বলে ২০ রানের ছোটখাটো ঝড় তুলে বিদায় নেন ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ। পরের ওভারে সাজঘরে ফিরলেন নতুন ব্যাটসম্যান সিকান্দার রাজা।

উইকেটে এসেই ধুমধারাক্কা তিনটি ছক্কা মরে ফের লড়াইয়ের আশা জাগিয়ে তোলেন অধিনায়ক মুশফিক। আশার সমাধি হতেও সময় লাগল না। নাজমুল ইসলামের এলবির শিকার হয়ে ফিরে যান অধিনায়ক। রিভিউ নিয়েছিলেন ১১ বলে ২২ রান করা মুশি। কিন্তু তাতে কাজ হলো না, আম্পায়ার কলের ‘বলি’ হয়েছে তার উইকেট। স্বাগতিক দর্শকদেরে আক্ষেপ- আউটের কলটা না দিলেও পারতেন আম্পায়ার।

এরপরই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খুইয়েছে চিটাগং ভাইকিংস। এক প্রান্ত আগলে রেখে ওপেনার ইয়াসির শুধু নিঃসঙ্গ করে গেলেন। ১৪২ রানে দলের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন তিনি। মাশরাফির বলে ডি ভিলিয়ার্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৭৮ রানে থেমেছেন ইয়াসির। যা শুধু দলের হারের ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র। ইয়াসিরের আফসোস জাগানো ইনিংসে ছিল ছয়টি চার ও তিনটি ছক্কার মার।

এর আগে রানপাহাড়ে চড়া রংপুর রাইডার্সের ইনিংসের শুরুটাও ভালো ছিলো না। দলীয় মাত্র ছয় রানে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা ধাক্কা খায় ক্রিস গেইলের বিদায়ে। আবু জায়েদ রাহির বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান ক্যারিবীয় ব্যাটিং দৈত্য। রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি গেইলের। রংপুর রাইডার্সের বাঁ-হাতি ওপেনারকে ফিরিয়ে কি ভুল করেছে চিটাগং ভাইকিংস?

প্রশ্নটা উঠে গেল একটু পরই। কারণ গেইলের আউটের পরই যে শুরু হয়ে রাইলি রুশো ও অ্যালেক্স হেলসের ব্যাটিং বিস্ফোরণ। তাতে চিটাগং ভাইকিংসের ম্যাচ শুরুর আনন্দ বাতাসে মিশে গেছে। দ্বিতীয় উইকেটে ১৭৪ রানের জুটি গড়া দুই ব্যাটসম্যানই তুলে নিয়েছেন বিধ্বংসী শতক। শেষ পর্যন্ত ৫১ বলে ১০০ রানে অজেয় থাকলেন রুশো।

অপরাজিত ইনিংসে আটটি চার ও ছয়টি ছক্কা মেরেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই ব্যাটসম্যান। তবে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেননি হেলস। কাঁটায় কাঁটায় শতরান করে বিদায় নিয়েছেন তিনিও। ফেরার আগে ১১টি চার ও পাঁচটি ছক্কায় আগ্রাসী ইনিংসটা সাজিয়ে গেছেন ইংলিশ তারকা। তাতে এই প্রথম বিপিএল কোনো দলের এক ইনিংসে দেখল দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি। তবে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এমন ঘটনা আরো দুবার ঘটেছে। ২০১১ ও ২০১৬ সালে।

রুশো ও হেলস এই দুজনের সেঞ্চুরির ওপর দাঁড়িয়ে ইতিহাস গড়েছে রংপুর রাইডার্স। টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ইতিহাসে নিজেদের তো বটেই, বিপিএলে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। ভাইকংসের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাট করতে নামা রংপুর নির্ধারিত ওভার শেষে চার উইকেটে করেছে ২৩৯ রানের পাহাড়।

এই ইনিংসে রংপুর রাইডার্স টপকে গেছে টুর্নামেন্টে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ সংগ্রাহক ঢাকা ডায়নামাইটসকে। ২০১৩ সালে খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে চার উইকেটে ২১৭ রান তুলেছিল ঢাকা। গত আসরে আপ্রাণ চেষ্টা করেও ঢাকাকে টপকাতে পারেনি রংপুর। সেবার এই ঢাকার বিপক্ষেই এক উইকেটে ২০৬ রান করেছিল রংপুর।

এনিয়ে দ্বিতীয়বার বিপিএলে দলীয় সংগ্রহে দুশো ছাড়িয়েছে রংপুর। কদিন আগে সিলেট সিক্সার্সের ছুড়ে দেওয়া ১৯৪ রানের পাহাড় টপকে জিতেছিল রংপুর রাইডার্স। সিলেট সিক্সার্স আর কিছু রান করতে পারলে হতো সেদিনই চলমান আসরে প্রথমবারের মতো দুশো করতে পারতেন মাশরাফিরা।

আজ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রুশো ও হেলস ১৭৪ রানের জুটি গড়েছেন। হেলসকে ফিরিয়ে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলেছে চিটাগং ভাইকিংস। শেষ দিকে মোহাম্মদ মিঠুনের ১৫ ও নাহিদুল ইসলামের ১১ রানের ইনিংস রংপুরের সংগ্রহ সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছে।