অক্সফাম: ২৬ ধনীর সম্পদ ৩৮০ কোটি গরিবের সম্পদের সমান

ব্রিটেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে গরিব অর্ধেক মানুষের যে সম্পদ আছে সেই পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সবচেয়ে ধনী ২৬ জনের হাতে। আর ওই ২৬ জন ধনীর সম্পদের পরিমাণ ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। এই পরিমাণ সম্পদ রয়েছে বিশ্বের ৩৮০ কোটি মানুষের।

বিশ্বের চার সেরা ধনী। জেফ বোজেস (উপরে বামে), বিল গেটস (উপরে ডানে), বার্নার্ড আরনল্ট (নিচে বামে) এবং ওয়ারেন বাফেট

সোমবার অক্সফামের এক প্রতিবেদন এ তথ্য জানানো হয় বলে খবর দিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরা।

এই বৈষম্য কমিয়ে আনতে সম্পদশালীদের ওপর কর বাড়াতে বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর প্রতিদিন ২৫০ কোটি ডলার করে ধনীদের সম্পদ বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে ফোর্বসের তালিকায় থাকা শীর্ষ ধনী অ্যামাজনের সিইও জেফ বেজোসের প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছে, তার সম্পদ গত বছর ১১ হাজার ২০০ কোটি ডলার বেড়েছে। তার সম্পদের মাত্র ১ শতাংশ ইথিওপিয়ার পুরো স্বাস্থ্য বাজেটের সমান। যে দেশটিতে রয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যা।

আবার ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির সম্পদের পরিমাণ ভারতের স্বাস্থ্য খাতে কেন্দ্র ও রাজ্যের বাজেটের চেয়ে বেশি।

উল্টোদিকে পৃথিবীতে ধনীর ধন বাড়লেও কমেছে দরিদ্রের সম্পদ। গত বছর ৩৮০ কোটি মানুষের সম্পদ কমেছে ১১ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনী ও দরিদ্রের সম্পদের এই বৈষম্য অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি বিশ্বে অসন্তোষকেও উসকে দিচ্ছে।

অক্সফামের নির্বাহী পরিচালক উইনি বিয়ানিমা এই সংকট স্বীকার করে বলেন, বিশ্বব্যাপী মানুষ এখন ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এর অন্যতম কারণ সম্পদের বৈষম্য।

১০৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে অক্সফাম বলেছে, অতি ধনী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কয়েক দশক ধরেই কম হারে কর দিচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পেরে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

ধনীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, তারা যেন তাদের সম্পদের ওপর অতিরিক্ত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কর প্রদান করেন। এতে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা দিয়ে সুযোগবঞ্চিত ২৬ কোটি ২০ লাখ শিশুর কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া যাবে। আর স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত ৩৩ লাখ মানুষকে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যাবে।

পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক এই দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী জীবনযাপনের জন্য দিনে ৫.৫ ডলারেরও কম খরচ করতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, অক্সফাম এমন সময় এই প্রতিবেদন প্রকাশ করলো যখন সোমবার থেকেই সুইজারল্যান্ডের দাভোসে শুরু হচ্ছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলন। যেখানে বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতাদের পাশাপাশি থাকবেন বিশ্বের সেরা ধনীদের অনেকেই।