অবিশ্বাস্য ফ্রাইলিঙ্ক, চিটাগংয়ের থ্রিলার জয়

ম্যাচটা চিটাগং ভাইকিংসের হাতের মুঠোয় ছিল। জয়ের জন্য শেষ চার ওভারে মাত্র ২৬ রান দরকার ছিল মুশফিকুর রহিমের দলের। হাতে উইকেট ছিল চারটি। কিন্তু সহজ সমীকরণটা কঠিন থেকে কঠিনতর করে তোলে চিটাগং ভাইকিংস। ১৩৯ রানের পুঁজি নিয়ে ঢাকা ডায়নামাইটস রীতিমতো জয়ের সুবাসই পাচ্ছিল। কিন্তু শেষ ওভারে পাশার দান উল্টে দিলেন রবি ফ্রাইলিঙ্ক।

থ্রিলার ম্যাচটা জিতে নিল মুশফিকুর রহিমের দল (১৪৫/৭)। উত্তেজনায় ঠাঁসা ভাইকিংসের জয়ের শেষের নায়ক ফ্রাইলিঙ্ক। মোহর শেখের শেষ ওভারে ১৬ রান দরকার ছিল চিটাগংয়ের। অবিশ্বাস্য ফ্রাইলিঙ্ক তিনটি ছক্কা মেরে এক বল হাতে রেখেই নাটকীয়ভাবে হারতে বসা ম্যাচটা ভাইকিংসকে জিতিয়ে দেন। শেষ ওভারে ফ্রাইলিঙ্ক-সানজামুল নিলেন ২১ রান।

শেষ তিন বলে সাত রানের সমীকরণ। এমন সময় ওভারের দ্বিতীয় ছক্কা হাঁকান ফ্রাইলিঙ্ক। এরপরই ফ্ল্যাড লাইটের আলো স্বল্পতা। ভাইকিংসের জয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তাও। এমন অবস্থাতেই পঞ্চম বলটা ডেলিভারি দিলেন মোহর। কিন্তু তাতে কাজ হলো না। ওভারের তিন নম্বর ছক্কা হাঁকিয়ে চিটাগংয়ের পঞ্চম জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার।

১০ বলে ২৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে অজেয় থাকলেন ফ্রাইলিঙ্ক। এর আগে বল হাতে দুই উইকেট। দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরা হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান এই ক্রিকেটার। এক বল ও তিন উইকেট হাতে রেখে স্নায়ুক্ষয়ী জয়টা তুলে নিয়েছে ভাইকিংস। এই ম্যাচের আগে শেষ ওভারে ১৮ রান নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি ফ্রাইলিঙ্ক। সেদিন সুপার ওভারে হেরে যায় তার দল।

আজকের দ্বিতীয় ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের দাবিদার ছিলেন ঢাকা অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। ব্যাট হাতে ৩৪ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলে দলের ব্যাটিং বিপর্যয় সামলেছেন তিনি। বল হাতেও অবিশ্বাস্য ছিলেন সাকিব। চার ওভারে মেডেনসহ মাত্র ১৬ রান খরচায় চার উইকেট তুলে নিয়েছিলেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার। কিন্তু ফ্রাইলিঙ্ক তাণ্ডবে বৃথাই গেল সাকিবের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স।

এনিয়ে ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতলেন মুশফিকরা। পক্ষান্তরে চলতি আসরে এনিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ হারল সাকিবের ঢাকা। এমন ম্যাচে অগ্নিপরীক্ষাই দিতে হয়েছে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের। আজ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে স্বল্প পুঁজি নিয়েও কী দুর্দান্ত লড়াইটাই না করেছে তারা। ফ্রাইলিঙ্ক অতিমানবীয় ব্যাটিং না করলে হয়তো ম্যাচের গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো।

ঢাকার ছুড়ে দেওয়া ১৪০ রানের জবাব দিতে নামা চিটাগাংয়ের ইনিংসটা ছিল উত্থান-পতনের। ইনিংসের শুরুতে ঝড় তুলেও মাত্র ১২ বলে ৩০ রানে বিদায় নেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। তার আউটের পর থেকেই ধুঁকতে থাকে ভাইকিংস। রানের চাকা সচল রাখতে গিয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়ায় তারা। ইয়াসির ১৫ ও মুশফিক ২২ রানের ম্যাড়মেড়ে ইনিংস খেলে বিদায় নিয়েছেন।

মোসাদ্দেক হোসেন ৩৯ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৩৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে কক্ষপতে রেখে গেছেন। দুর্ভাগ্যবশত রান আউটে বিদায় নিয়েছেন তিনি। তার বিদায়ের পর পরই ম্যাচটা রীতিমতো রূপ নিয়েছে থ্রিলারে। যেখানে শেষ হাসি হাসল চিটাগং ভাইকিংস।

এর আগে নির্ধারিত কুড়ি ওভারে ঢাকাকে ‘অল্প’তে আটকাতে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন চিটাগংয়ের বোলাররা। সাকিবদের পতন হওয়া নয় উইকেটের তিনটি তুলে নিয়েছেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। আবু জায়েদ রাহি ও রবি ফ্রাইলিঙ্ক দুটি করে উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন। একটি শিকার খালেদ আহমেদের।

টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ঢাকা ডায়নামাইটস। ইনিংসের তৃতীয় বলেই কোনো রান না করে ফিরে যান ওপেনার রনি তালুকদার। উদ্বোধনী জুটিতে তার সঙ্গী সুনিল নারাইন ঝড়টা ঠিকঠাক তোলার আগেই বিদায় নেন। দুজনকেই সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন ফ্রাইলিঙ্ক।

নয় বলে তিনটি চার ও একটি ছক্কা ১৮ রানে ফিরেছেন নারাইন। তার সমান রান করেছেন হিনো কুন। যদিও ১৮ রানের জন্য ২১টি বল খরচ করেছেন তিনে নামা এই ব্যাটসম্যান। ২৭ রানে দুই উইকেট হারানো ঢাকার পুরো ইনিংসেই ছিল ব্যাটসম্যানদের সাজঘরে আসা যাওয়ার-মিছিল।

বিপর্যয়ের মুখে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৪ বলে ৩৪ রান করে বিদায় নিয়েছেন ঢাকা অধিনায়ক সাকিব। তার ইনিংসে দুটি চারের পাশাপাশি ছিল একটি ছক্কার মার। ১৮ বলের ইনিংসে পাঁচটি চারের সহায়তায় ২৭ রান করেছেন নুরুল হাসান সোহান। শেষ দিকে ঝড় তুলেছেন শুভাগত হোম। ১৫ বলে ২৯ রান করে রান আউট হয়েছেন তিনি।

ফেরার আগে ইনিংসটা তিনটি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন শুভাগত। ইনিংসের শেষ দিকে শুভাগত ও নুরুলের ছোটখাটো ঝড়ো ইনিংসের সুবাদে কোনোরকম লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে ঢাকা ডায়নামাইটস।