‘অখ্যাত’ ইভান্সের সেঞ্চুরির পর দুর্দান্ত রাব্বি-মুস্তাফিজ, রাজশাহীর জয়

লক্ষ্যটা কঠিন। কিন্তু অসম্ভব ছিল না। রাজশাহী কিংসের ছুড়ে দেওয়া ১৭৭ রানের কঠিন টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে লড়াইয়ের আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত নিঃশর্ত আত্মসমার্পণ করেছে কুমিল্লা ভিক্টোয়ানস। বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে তামিম-ইমরুলদের ১০ বল বাকি থাকতেই ১৩৮ রানে গুটিয়ে দিয়েছে মেহেদি হাসান মিরাজের দল।

আজ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে রাজশাহী কিংস জিতেছে ৩৮ রানে। বিপিএলের চলতি আসরে সপ্তম ম্যাচে এটা চতুর্থ জয় তাদের। পক্ষান্তরে সাত ম্যাচ খেলে তিনটিতে হারল কুমিল্লা। রাজশাহীর সমান জয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, চিটাগাং ভাইকিংসেরও। ছয় ম্যাচে পাঁচ জয় নিয়ে যথারীতি লিগ টেবিলের শীর্ষে আছে সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস।

জয়ের জন্য শেষ চার ওভারে ৪৫ রানের কঠিন সমীকরণ ছিল কুমিল্লার সামনে। তাদের আশা দেখাচ্ছিলেন উইকেটে জমে ওঠা শহিদ আফ্রিদি ও লিয়াম ডওসন। কিন্তু ১৭তম ওভার শেষ ম্যাচটা রাজশাহীর জন্য সহজ করে তোলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ওই ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মাত্র দুই রান দিয়েছেন কাটার মাস্টার।

দুর্দান্ত বোলিং করা মুস্তাফিজের একটা আক্ষেপ থাকতো। সেটা ১৯তম ওভারে এসে দূর করেছেন তিনি। নিয়েছেন ম্যাচের একমাত্র উইকেট। জয়ের পথে কাঁটা শেষ উইকেটটি তুলে নেন মুস্তাফিজ। তবে ম্যাচটা শেষ হয়ে গেছে আগের ওভারেই। ১৮তম ওভারে এসে আফ্রিদি-ডসন দুজনকেই সাজঘরে পাঠান কামরুল হাসান রাব্বি।

ওই ওভারে আরো একটি উইকেট নেন বাংলাদেশি পেসার। তিন ওভারে ১০ রানে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচের পার্শ্বনায়কের ভূমিকা রাখলেন রাব্বি। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সপ্তম উইকেট জুটিটা তিনিই বিচ্ছিন্ন করেছেন। ১৪ বলে ১৭ রানে ডসন এবং ১৫ বলে ১৯ রান করা আফ্রিদিকে বিদায় করেছেন রাব্বি।

শুধু মিডল অর্ডারের এই দুজনই নয়, কুমিল্লা ভিক্টোয়ানসের টপ অর্ডারের প্রায়সব ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন উইকেটে থিতু হয়ে। যদিও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি একজনও। ২৪ বলে দুটি করে চার-ছক্কায় তামিম ইকবাল ফিরেছেন ২৫ রানে। একটি চার ও ছক্কায় আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয় আউট হয়েছেন ২৩ বলে ২৬ রান করে।

এ ছাড়া শামসুর রহমান শুভ ১১ বলে ১৫, জিয়াউর রহমান ৮ বলে ১২ এবং অধিনায়ক ইমরুল কায়েস ১০ বলে ১৫ রানে আউট হয়েছেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ব্যাটসম্যানদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসব ইনিংস দলের পরাজয়ের ব্যবধান কমাতেই শুধু কাজে লেগেছে।

এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামা রাজশাহী কিংসের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের। ১৩ রানের মধ্যে তাদের হারাতে হয়েছে দুই উইকেট। ২৮ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন। শাহরিয়ার নাফীস (৫), মেহেদি হাসান মিরাজ (০) ও মার্শাল আইয়ুব (২) তিনজনের একজনও যেতে পারেননি দুই অংকে। শুরুর বিপর্যয়ের কারণে রাজশাহী শতরান করতে পারবে কি না তা নিয়েই জেগেছিল সংশয়।

সেখান থেকে কী দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনটাই না করেছে রাজশাহী! শঙ্কার কালো মেঘ উড়িয়ে দিয়েছে চতুর্থ উইকেটের জুটি। লরি ইভান্স ও রায়ান টেন ডেসকাটে মিলে গড়ে তোলেন ১৪৮ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি। যা বিপিএলের চলমান আসরের সর্বোচ্চ যুগলবন্দির রেকর্ড। এই জুটিতে মূখ্য ভূমিকা ইভান্সের।

ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে ইংলিশ অলরাউন্ডার তুলে নিয়েছেন বিপিএলের চলমান আসরের প্রথম সেঞ্চুরি। একই সঙ্গে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটাও খেললেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৬২ বলে ১০৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে অজেয় থেকে উইকেট ছেড়েছেন ইভান্স। তার ইনিংসের আগ্রাসনে ছিল নয়টি চার ও ছয়টি ছক্কার মার। রাজসিক এই ইনিংসে অবধারিতভাবেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন ইভান্স।

অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ইভান্সকে যোগ্য সঙ্গটাই দিয়েছেন রায়ান টেন ডেসকাটে। অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন তিনি। ৪১ বলের ইনিংসটা তিনি সাজিয়েছেন দুটি চার ও তিনটি ছক্কায়। শেষ অবধি ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন ডেসকাটে। কুমিল্লার শুরুর আনন্দ বাতাসে মিশে গেছে তাতেই। রাজশাহীর পতন হওয়া উইকেটের একটি শিকার মেহেদি হাসানের। বাকি দুটো ডসনের।