মিন্দানাওয়ে মুসলমানদের স্বায়ত্তশাসন: গণভোট সোমবার

ফিলিপাইনের মিন্দানাও দ্বীপের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে নিয়ে দেশটির পার্লামেন্টে যে বিল পাস হয়েছে তার পক্ষে-বিপক্ষে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। দুটি অঞ্চলে দুই পর্বের গণভোটের প্রথম পর্ব আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হবে। আর দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি।

মিন্দানাওয়ের স্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে বিল পাস হওয়ায় আনন্দ মিছিল

এর আগে গত বছরের মে মাসে বাঙসামোরো অর্গানিক (মৌলিক) ল (বিওএল) শীর্ষক ওই আইনটি ফিলিপাইনের পার্লামেন্টে বিপুল ভোটে পাস হয়। আইনটির পক্ষে ভোট দেন ২২৭ জন। আর বিপক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ১১টি।

এদিকে, গণভোটের ঠিক আগের দিন মিন্দানাওয়ের জনগণের মতামত নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুর্কি গণামধ্যম আনাদলু।

এতে বলা হয়েছে, মিন্দানাওয়ের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে সেখানকার সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদেরও সমর্থ রয়েছে।

স্থানীয় ইভ্যাঞ্জিক্যাল খ্রিস্টান অ্যাল্ড্রিন পেনামোরা এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা ওই আইনকে সমর্থন করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আইনটি এই অঞ্চলে ব্যাপক অবদান রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, আইনটির কারণে এখানকার খ্রিস্টান, মুসলিম (আদিবাসী), লুমাদস এবং অন্য সব মানুষের জন্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে।’

স্থানীয় মুসলিম নেতা আঞ্জারিহ মাস্তুরা মাতালাম বলেন, ‘বাঙসামোরো মৌলিক আইন আমাদের অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুফল বয়ে আনবে।’

তিনি বলেন,‘আইনটিকে আমরা এই অঞ্চলের ভবিষ্যত এবং আমাদের সন্তানদের ভরসা হিসেবে মনে করি। আমি বিশ্বাস করি, আইনটি মোরোদের জন্য উন্নয়ন, প্রগতি ও শান্তি নিয়ে আসবে।’

প্রসঙ্গত, মোরোদের স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে দীর্ঘ ৫০ বছরের প্রচেষ্টা থাকলেও সম্প্রতি দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুর্তেতে। কারণ তিনি ওই অঞ্চলে ২২ বছর মেয়র ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৮৯৮ সালে স্প্যানিশরা যখন ফিলিপাইনকে আমেরিকানদের হাতে তুলে দেয় তখন থেকেই ওই অঞ্চলে মুসলমানদের স্বাধীনতা চলে যায়। এর আগে পুরো ষোড়শ শতক স্প্যানিশরা ফিলিপাইন শাসন করে।

এরপর ১৯৪৬ সালে আমেরিকানরা ফিলিপাইনের শাসনভার খ্রিস্টানদের হাতে তুলে দেয়। তারপর ম্যানিলা সরকারের খ্রিস্টান স্যাটেলমেন্ট নীতির কারণে এখনও বঞ্চিতই হচ্ছেন বাঙসামোরো জনগণ।

দক্ষিণ কোরিয়ার সমান আয়তন বিশিষ্ট মিন্দানাও ফিলিপাইনের সবচেয়ে অনুন্নত এলাকা। কিন্তু সেখানে নিকেলের খনি পাওয়া গেছে এবং বড় বড় ফলের বাগান রয়েছে। এ ছাড়া সরকার সেখানে পাম অয়েলের ফার্ম করতে চাইছে। যুগের পর যুগ ধরে চলা যুদ্ধ, আইন শূন্যতা ও সংঘাতের কারণে বিনিয়োগকারীরা সেখানে যেতে আগ্রহী ছিল না।

উল্লিখিত বিল পাস হওয়ায় স্থানীয় শাসকবর্গ, আইন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা থাকবে। তবে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বৈদেশিক নীতি ও অর্থ সংক্রান্ত নীতি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।