অবিশ্বাস্য ফরহাদ, জয়ে ফিরল চ্যাম্পিয়নরা

জয়ের খুব কাছে গিয়েও দুই দুবার হতাশ হতে হয়েছিল রংপুর রাইডার্সকে। আজ সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষেও জয়ে ফেরার আভাস দিয়েছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু সহজ ম্যাচটা কঠিন করে ফেললেন মাশরাফিরা। একটা পর্যায়ে তো হারের মুখেই পড়েছিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত ফরহাদ রেজার বুড়ো হাড়ের ভেলকিতে বাজিমাত করেছে রংপুর; তুলে নিয়েছে আসরের তৃতীয় জয়। পক্ষান্তরে এনিয়ে সাত ম্যাচের পাঁচটিতেই হারল সিলেট সিক্সার্স।

জয়ের জন্য শেষ তিন ওভারে ৩৫ রান দরকার ছিল অতিথিদের। দল এমন কঠিন সমীকরণের মুখোমুখি হওয়ার আগেই বিদায় নেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রাইলি রুশো ও ঝড় শুরু করা এবি ডি ভিলিয়ার্স। দলকে জেতানোর দায়িত্ব পড়ল মোহাম্মদ মিঠুন ও নাহিদুল ইসলামের কাঁধে। ১৮তম ওভারে এসে দুজনকেই সাজঘরে পাঠিয়েছেন তাসকিন আহমেদ।

ব্যাট হাতে ঝড় তোলো ডি ভিলিয়ার্স, রুশো এই দুজনেরই ঘাতক ছিলেন তাসকিন। তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে জয়ের আশায় ছিল সিলেট। কিন্তু নিজের শেষ ওভারটি করতে এসে প্রথম তিন বলেই একটি করে চার-ছক্কা হজম করে ১১ রান দিয়ে ফেলেন তাসকিন। পরের তিন বলে কোনো রান না দিয়ে দুই উইকেট!

ম্যাচের রোমাঞ্চ তখন তুঙ্গে। ম্যাচের নাটাই প্রায় সিলেটের হাতে। শেষ দুই ওভারে রংপুরের সমীকরণ দাঁড়ায় ১২ বলে ২৪। স্বাভাবিকভাবেই নতুন দুই ব্যাটসম্যান ফরহাদ ও মাশরাফির জন্য কাজটা কঠিন। এমন কঠিন ম্যাচটার কী সুন্দর সমাপ্তিই না টানলেন ফরহাদ। ১৯তম ওভারে মেহেদি হাসানের শেষ বলে ১৪ রান নেন তিনি। প্রথম দুই বলে মাশরাফি নিয়েছেন পাঁচ রান।

শেষের আগের ওভারে এলো ১৯! পরে ছয় বলে পাঁচ রানের হিসেবটা সহজেই মিলিয়ে ফেলে রংপুর। তিন বল বাকি থাকতেই দারুণ জয় তুলে নেয় চ্যাম্পিয়নরা। মাশরাফিদের চার উইকেটে জিতিয়ে শেষের নায়কের ভূমিকা পালন করলেন ফরহাদ। এই ফরহাদের কারণেই রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে জেতা ম্যাচটা হেরেছিল রংপুর। আজ দলকে জিতিয়ে যেন সেটারই প্রায়শ্চিত্ত করলেন ফরহাদ।

লক্ষ্যটা ১৯৫ রানের। এমন কঠিন চ্যালেঞ্জের বিপরীতে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দুই বলেই ক্রিস গেইলকে হারাতে হয় রংপুরকে। শুরুর এই কঠিন চাপ থেকে দলকে উদ্ধার করেন রুশো। দ্বিতীয় উইকেটে অ্যালেক্স হেলসকে নিয়ে গড়েন ৬৩ রানের জুটি। জুটি ভাঙে হেলস ২৪ বলে ৩৩ রানে (দুটি করে চার-ছক্কা) বিদায় নিলে।

পরে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ডি ভিলিয়ার্সকে নিয়ে রুশোকে নিয়ে যোগ করেন আরো ৬৭ রান। ম্যাচটা হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল রংপুরের। কিন্তু ১৪তম ওভারে এসে রুশো-ডি ভিলিয়ার্সকে বিদায় করে দুর্দান্তভাবেই সিলটকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন তাসকিন। রুশো ফিরতে পারতেন আরো অনেক আগেই। সেটা সম্ভব হয়নি সিলেট ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাতে। যেটার মূল্য দিতে হয়েছে ম্যাচ হেরে।

রানআউটসহ মোট চারবার সুযো পাওয়া রুশো শেষ পর্যন্ত করলেন ৩৫ বলে ৬১ রান। ইনিংসে নয়টি চারের পাশাপাশি দুটি ছক্কা। পরিস্থিতির দাবি মোটানো এই ইনিংসের সুবাদে ম্যাচ সেরা হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান। দুটি করে চার-ছক্কায় ডি ভিলিয়ার্স বিদায় নিয়েছেন ২১ বলে ৩৪ রান করে।

মিঠুন ১৪ ও নাহিদুল ১৯ রান করে সাজঘরে ফিরে গেছেন। এরপরই ফরহাদের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং। ছয় বলে ১৮ রান করে প্রায় হারতে বসা রংপুরকে কী নাটকীয়ভাবেই না জেতালেন তিনি! ইনিংসে দুটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মেরেছেন ফরহাদ। সিলেটের পক্ষে চার উইকেট তুলে নেওয়া তাসকিন ছিলেন ম্যাচের সবচেয়ে সফল বোলার। কিন্তু বৃথাই গেল তার আগুনঝড়া পারফরম্যান্স।

এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে টুর্নামেন্টের চলতি আসরে সর্বোচ্চ রানের নজির গড়েছে সিলেট সিক্সার্স। স্বাগতিকদের প্রায় দুশো রানে পৌঁছে দেওয়ার কাণ্ডারী সাব্বির রহমান ও নিকোলাস পুরান। এই যুগলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সুবাদে নির্ধারিত ওভারে চার উইকেটে ১৯৪ রানের পাহাড় গড়ে সিলেট সিক্সার্স।

আগের দুই ম্যাচে বড় সংগ্রহের ভিত সিলেট পেয়েছিল অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে চড়ে। কাল বিপিএলের নিজের শেষ ম্যাচে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ান বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। ওয়ার্নার আউট হয়েছেন ২১ বলে ১৯ রান করে।

দারুণ শুরু করেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি ওপেনার লিটন দাস ও তিনে নামা আফিফ হোসেন। আট বলে একটি করে চার-ছক্কায় ১১ রান করেছেন লিটন। ১১ বলে ১৯ রান করা আফিফ দুর্ভাগ্যবশত রান আউটে কাঁটা পড়েছেন। ফেরার আগে তিনটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন আফিফ।

এই ত্রয়ীর ছোটখাটো এসব ইনিংস সিলেটের বড় সংগ্রহে কিছুটা হলেও অবদান রেখেছে। তবে রানপাহাড়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছেন নিজেকে হারিয়ে খোঁজা সাব্বির রহমান। আজ রংপুর রাইডার্সের বোলারদের কচুকাটা করেছেন তিনি পাঁচটি চার ও ছয়টি ছক্কায়। শেষ পর্যন্ত ৫১ বলে ৮৫ রানে আউট হয়েছেন সাব্বির।

সাব্বিরের এনে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বিস্ফোরণ ঘটান পুরান। ৪৭ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে সিলেটকে দুশোর খুব কাছাকাছি পৌঁছে দেন তিনি। ২৭ বলের ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছেন চারটি চার ও তিনটি ছক্কায়। সিলেটের পতন হওয়া চার উইকেটের দুটি নিয়েছেন মাশরাফি। একটি শিকার শফিউল ইসলামের।