ঢাকাকে মাটিতে নামাল রাজশাহী

আসর শুরুর আগেই একটা চমক উপহার দিয়েছে রাজশাজী কিংস। দলে অভিজ্ঞ ও তারকা ক্রিকেটারদের বাদ দিয়ে নেতৃত্বের জোয়াল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি মেহেদি হাসান মিরাজের ছোট্ট কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে। জাতীয় দলের এই অলরাউন্ডারের নেতৃত্ব হলো আরো চমকপ্রদ।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চলতে আসরে মিরাজের নেতৃত্ব দুর্দান্ত পারফর্ম করে চলেছে রাজশাহী কিংস। মিরাজের অধিনায়কত্বে আগের ম্যাচে মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুর রাইডার্সকে নাটকীয়ভাবে হারিয়েছে রাজশাহী। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কের পর এবার টি-টোয়েন্টির দলপতি সাকিব আল হাসানকে হারিয়ে দিলেন মিরাজ।

আজ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শুরুর ধাক্কা সামলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ছয় উইকেটে ১৩৬ রানের লড়াকু পুঁজি তোলে রাজশাহী কিংস। জবাব নিতে নেমে নির্ধারিত ওভারে নয় উইকেটে মাত্র ১১৬ রান তুলতে সক্ষম হয়। মিরাজরা জিতলেন ২০ রানে। টুর্নামেন্টের এই অসারে এটা রাজশাহীর তৃতীয় জয়। আর ঢাকার প্রথম হার।

অথচ ঢাকা ডায়নামাইটস রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। প্রতিপক্ষ দলগুলো সাকিবদের হারাবে দূরে থাক, যেন দাঁড়াতেই পারছিল না। অবশেষে পঞ্চম ম্যাচে এসে ধরাশায়ী হলো সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের মাটিতে নামিয়ে আনল মিরাজের রাজশাহী। মাত্র ১৩৬ রানের পুঁজিটা কী দুর্দান্তভাবেই না আগলে রাখলেন মিরাজরা।

লক্ষ্যটা ১৩৭ রানের। আসরের শুরু থেকে ঢাকা ডায়নামাইটস যে রকম আগুন ফর্মে ছিল, তাতে করে লক্ষ্যটাকে কোনো ব্যাপার মনে হচ্ছিল না। কিন্তু ঢাকাকে বিপাকে ফেলল সিলেট স্টেডিয়ামের রহস্যময় উইকেটে। সিলেটের উইকেটে যেন বিষ ঢেলে দিয়েছিল। সেই বিষেই শেষ সাকিবরা।

সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৩ মধ্যে ঢাকা হারিয়েছে তিন উইকেট। দুই ওপেনার সুনিল নারাইন (৬) ও হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের (১) পথ ধরে ফিরে গেলেন আন্দ্রে রাসেল (১১)। শুরুর এই ভয়বাহ বিপর্যয় আর সামলে উঠতে পারেননি সাকিবরা। নিয়মিতি বিরতিতে উইকেট খুইয়েছে তারা।

সাবেক চ্যাম্পিয়নদের জন্য অস্বস্তির বিষয় হচ্ছে, মিডল ও লোয়ার অর্ডারের ছয়জন ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন উইকেটে থিতু হয়ে। কিন্তু রনি তালুকদার (১৪), সাকিব আল হাসান (১৩), কাইরেন পোলার্ড (১৩), মোহাম্মদ নাঈমরা (১৭)। শেষ দিকে নুরুল হাসানের ১৪ বলে ১৯ রানের ইনিংসটা শুধু ঢাকার হারের ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র।

এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামা রাজশাহী কিংসের ব্যাটসম্যানদেরও রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ মিরাজ। এদিন ১১ বলে এক রান করে আউট হয়ে গেছেন রাজশাহী অধিনায়ক। দুই রানেই প্রথম উইকেটের পতন।

ধাক্কাটা দ্বিতীয় উইকেটে ৭৫ রানের জুটিতে সামলে নেন শাহরিয়ার নাফীস ও মার্শাল আইয়ুব। নাফীস ব্যাট চালিয়েছেন ধীরে সুস্থে। ২৭ বলে ২৫ রান করেছেন তিনি। সেই তুলনায় মার্শাল ভালোই আগ্রাসী ছিলেন। ৩১ বলে তিনটি চার ও দুটি ছক্কার সুবাদে ৪৫ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেনি তিনি।

মার্শালের এই ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের পুঁজি তুলেছে রাজশাহী। অবদান আছে রায়ান টেন ডেসকাটে এবং জাকির হাসানেরও। ডেসকাটে ১৬ বলে ১৬ রানের ঘুমপাড়ানি ইনিংস খেলেছেন। ১৮ বলে কুড়ি রান এসেছে জাকিরের ব্যাট থেকে। রাজশাহীর পতন হওয়া ছয় উইকেটের তিনটি নিয়েছেন নারাইন। ক্যারিবীয় তারকা চার ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ১৯।

এমন দারুণ বোলিংয়ের পরও ঢাকাকে জেতাতে পারলেন না তিনি। নারাইনের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল ছিলেন আরাফাত সানি। ডানহাতি এই স্পিনারের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ের কারণেই তো জিততে পেরেছে রাজশাহী। চার ওভারে মেডেনসহ মাত্র আট রান দিয়ে তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন সানি। যা তাকে করে তুলেছে ম্যাচ সেরার দাবিদার। দুটি শিকার করে বোলিং ইনিংসে পার্শ্বনায়ক হলেন মিরাজ।