ইতিহাসের দীর্ঘতম অবরোধের কবলে যুক্তরাষ্ট্র

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণকে কেন্দ্রকরে সরকার ও বিরোধীদলের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হওয়া অবরোধ ২৩তম দিনে গড়াচ্ছে। যা দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম অবরোধ।

বিবিসির খবরে বলা হয়, গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের আংশিক সেবা বন্ধের ২২তম দিন অতিবাহিত হয়েছে। যা দেশটির ইতিহাসের আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। এর আগে ১৯৯৫-৯৬ সালে টানা ২১ দিনের অবরোধ আরোপ করেছিলেন তৎকালীন শাসক বিল ক্লিনটন।

এদিকে দেয়াল নির্মাণের তহবিল না পাওয়া পর্যন্ত আংশিক সরকারি সেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন বলে গতকালও জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অন্যদিকে বিরোধী দল ডেমোক্রেটও ট্রাম্পের দাবি ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে অস্বীকার জানিয়েছে।

যার কারণে দেশটির সরকারি কর্মচারীদের এক চতুর্থাংশ এখন কর্মহীন এবং আট লাখের মত শ্রমিক বিনা বেতনে আছেন। গতকাল শুক্রবার ছিল তাদের বেতন পরিশোধের দিন। বছরের প্রথম মাসেই তারা বেতন পাননি।

এদিকে, দেয়াল নির্মাণের তহবিল পেতে সিনেটরদের বাদ দিয়েই দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারির হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি গত বৃহস্পতিবার টেক্সাসে দেয়াল নির্মাণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে বলেন, ‘কংগ্রেস সম্তবত সংকট সমাধানে সহজ পথে এগিয়ে আসবে। যদি এমনটা না হয় তাহলে আমাকে জরুরি অবস্থা জারি করতে হবে।’

তবে বিবিসির যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধির ধারণা ডেমোক্রেটরা ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় চাইবে।

শ্রমিকরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন? শুক্রবার বছরের প্রথম বেতন তোলার দিনে ব্যাংক থেকে খালি হাতে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেস্লিপের ছবি শেয়ার করেছেন সরকারি অনেক কর্মকর্তা কর্মচারি। তাদের একজন নাসার প্রকৌশলী ওসকার মুরিলো। তিনি টুইটারে চেক শেয়ার করে লিখেছেন তাকে খালি হাতে ব্যাংক থেকে ফিরতে হয়েছে।

ক্যাট হেনিফার নামের একজন টুইটারে তার ভাইয়ের পেস্লিপের ছবি পোস্ট করেছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে ট্রাফিক কন্টোলার হিসেবে মাত্র এক সেন্ট বেতন পাবেন।

ওয়াশিংটন ডিসির খাদ্যের মার্কেটে শনিবারও শ্রমিকরা বেতন পাননি। রাজধানীর ফুড ব্যাংকের প্রধান রাধা মুঠিয়া বলেন, ‘কয়েক হাজার শ্রমিক ওয়াশিংটন ডিসি এলকায় প্যাকিংয়ের কাজ করছেন তারা এখনো বেতন পাননি।’

এদিকে, চাকরি খোঁজার ওয়েব সাইটগুলোতে সরকারি চাকরিজীবীরা তাদের শ্রম বিক্রির বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন।

অপরদিকে অনেক শ্রমিক সরকারের বিভিন্ন ধরনের মূর্তি ও প্লেকার্ড তৈরি করে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আর হাজার হাজার শ্রমিক অবরোধকালীন সময়ে বেকার ভাতার দাবিতে অবেদন করেছেন।

এমন অবস্থা আর কিছুদিন বিরাজ করলে মিয়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে নিরাপত্তার অভাবে বিভিন্ন দেশের এজেন্টরা এখনই বিমান ওঠানামায় অশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

রাজনৈতিক অবস্থা কেমন? এদিকে শুক্রবার সিনেটের উচ্চ কক্ষ ও নিম্ন কক্ষে বিকল্প উপায়ে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধে বিল পাস হয়েছে। এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সে বিলে স্বাক্ষর করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সিনেটররা।

অপরদিকে সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যুতে শুক্রবার স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ট্রাম্প। সেখানেও তিনি ডেমোক্রেটদের সীমান্তে স্টিল দিয়ে দেয়াল নির্মাণের জন্য তহবিল দেয়ার ব্যাপারে আহ্বান জানিয়েছেন।