সৌদি অবরোধের মাঝেও কাতারের টিকে থাকার রহস্য
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগে ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের চারটি প্রতিবেশী দেশ কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে। নিজেদের কূটনৈতিক সফলতা ও অর্থনৈতিক শক্ত অবস্থানের কারণে গত দেড় বছর ভালোভাবেই এ অবরোধ মোকাবেলা করতে পেরেছে মধ্যপ্রাচ্যের এই ছোট্ট দেশটি।
বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি খবরে বলা হয়, অবরোধকালে কাতার দুই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। প্রথমত, তাদের প্রমাণ করতে হচ্ছে ওসামা বিন লাদেনের মতো কোন সন্ত্রাসী ও তার সংগঠনকে তারা সমর্থন করছে না। দ্বিতীয়ত, বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়া যে তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি কতটা মজবুত। কাতারে বিনিয়োগ করলে লাভসহ তা তুলে নেয়া সম্ভব।
২০১৬ সালের শেষের দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই প্রথম বিদেশ সফরে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে মধ্যপ্রাচ্য সফরে আসেন। এরপরই মূলত সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও মুসলিম ব্রাদারহুডের মত সংগঠনগুলোর আধিপত্য হ্রাস করে ইসরায়েলের স্বার্থ হাসিলে ট্রাম্প সৌদি আরবকে কাজে লাগাচ্ছে। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করে অন্যদের চাপে ফেলা।
এ চারটি দেশ অবরোধ তুলে নেবার বিনিময়ে কাতারকে যে ১৩টি শর্ত দিয়েছিল তাতে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। শর্তগুলো অন্যতম হলো- ইরানের সাথে কাতারের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করা, আল-জাজিরা টিভি চ্যানেল বন্ধ করা, গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাসকে সহযোগিতা বন্ধ করা। তবে কাতার তাদের একটি শর্তও মানেনি। ফলে ১৯ মাস পরেও অবরোধ বহাল রয়েছে।
এদিকে কাতার অবরোধ সত্ত্বেও তাদের অর্থনীতি চাঙ্গা রেখেছে। এর ফলে তারা সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে কী না সে প্রশ্ন এখন আর আলোচনার মধ্যে নেই।
অন্যদিকে তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদি আরব বেশ বিপাকে আছে। এরমধ্যে গত মাসে গালফভুক্ত দেশের প্রতিনিধি সম্মেলনে কাতারের আমিরকে শেখ তামিম বিন হামাদ আমন্ত্রণ জানান সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ। যদিও কাতারের প্রধান ওই প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দেননি, শুধু প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।
অবরোধ আরোপের প্রথম কিছুদিন কাতার সৌদি জোটের সঙ্গে কয়েক দফা সমঝোতার চেষ্টা করলেও পরে বিকল্প পথ বেছে নেয়। এ সময় কাতারের পাশে দাঁড়ায় তুরস্ক এবং ইরান। দেশের ভেতরে উৎপাদন বাড়ানো শুরু করে। দুধের চাহিদা মেটাতে হাজার-হাজার গরু আমদানি করে। ফলে সৌদি জোটভুক্ত চারটি দেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানি হতো সেই ঘাটতি পুরণে সক্ষম হয় কাতার।
কাতার বিনিয়োগ ফান্ডের জ্যেষ্ঠ পরিচালক আকবর খান বলেন, কাতার বেশ ভালোভাবেই সংকট মোকাবেলা করেছে। অবরোধের তিনমাসের মাথায় হামাদ সমুদ্র বন্দরে ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প উন্মুক্ত করে। এর মাধ্যমে গভীর সমুদ্র বন্দরে পণ্যবাহী অনেক জাহাজ ভিড়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি কাতার মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে, বিশেষ করে আমেরিকা ও জার্মানির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করে। সেইসঙ্গে চীনও কাতারে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে।
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কাতার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শ্রম আইনের সংস্কার, বেসরকারিকরণ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা গঠন। তাছাড়া ২০২১ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্র এই দেশটি।
ছোট্ট আয়তনের দেশটিতে রয়েছে বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের মজুত। গ্যাস মজুতের দিক থেকে কাতার বিশ্বে তৃতীয়। ফলে তারা আমদানির বিকল্প পথ বের করতে পেরেছে।
তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিতে কাতার বিশ্বে প্রথম। ২০১৭ সালে দেশটি ৮১ মিলিয়ন টন এলএনজি রপ্তানি করেছে, যেটি বিশ্বের মোট প্রাকৃতিক গ্যাসের ২৮ শতাংশ। দেশটি প্রতিদিন ছয় লক্ষ ব্যারেল তেল রপ্তানি করছে। তেল এবং গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ভিত্তি করে অবরোধ সত্ত্বেও কাতারের অর্থনীতি বিস্তৃত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলছে, ২০১৭ সালে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে তা বড়ে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ১ শতাংশে।
লন্ডন ক্যাপিটাল ইকনমিকসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক জেসন টাভি বলেন, কাতারের নিজস্ব জনসংখ্যা মাত্র তিন লাখের মতো। সুতরাং সরকার চাইলে তাদের সবাইকে সরকারি চাকরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। এরজন্য বেসরকারি খাতের প্রয়োজন নেই।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, কাতার যদি না চায়, সেক্ষেত্রে ব্যবসা বান্ধব বৈচিত্র্যপূর্ণ অর্থনীতি দেশটির জন্য খুব একটা প্রয়োজনীয় নয়। কেননা শুধু গ্যাসের উত্তোলন বাড়িয়ে দেবার মাধ্যমেই কাতার টিকে থাকতে পারবে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.