'জিরো থেকে হিরো' বনে যাওয়ার গল্প...

রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে টসের পর ঢাকা ডাইনামাইটস অধিনায়ক সাকিব আল হাসান জানালেন একাদশে একটি পরিবর্তন আছে। জায়গা দেওয়া হয়েছে আল ইসলাম আলিসকে। তারপর থেকেই আলোচনা, কে এই আল ইসলাম আলিস? ক্রিকেট পুস্তক ঘেঁটে এই তরুণ স্পিনারের খোঁজ মিললো না। সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিকরাও চিনতে পারছেন না আল ইসলামকে।

ম্যাচ শুরুর পর পর আগ্রহটা আর ততো থাকল না। বোলিংয়ের সুযোগ পাওয়ার আগেই যে পর পর দুটি সহজ ক্যাচ মিস করলেন! নিজের করা বলেও আরেকটা ক্যাচ মিস, অর্থাৎ তিন তিনটি ক্যাচ মিস আল ইসলামের। উড়ে এসে অভিষেক হওয়া তরুণের চারপাশের পরিবেশ তখন কঠিনের চেয়েও কঠিন।

'জিরো থেকে হিরো' বনে যাওয়ার গল্পটা তখনই শুরু। প্রথম দুই ওভারে ১২ রান দেওয়া আলিস নিজের তৃতীয় ওভারের শেষ তিন বলে মোহাম্মদ মিঠুন, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও ফরহাদ রেজাকে তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিক করে ফেললেন, অভিষেকেই বিশ্বরেকর্ড।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়। শেষ ওভারে জিততে রংপুরের প্রয়োজন তখন ৬ বলে ১৪ রান। প্রথম দুই বলে দুটো চার হজম করলেন আল ইসলাম। খেলা গড়ালো শেষ বল পর্যন্ত। রংপুরের তখন এক বলে চার রান প্রয়োজন। স্ট্রাইকে প্রথম দুই বলে চার হাঁকানো শফিউল। কিন্তু আল ইসলাম সে সুযোগ দিলেন না। শেষ বলে মাত্র এক রান দিলেন তিনি। শেষ চার বলে মাত্র তিন রান!

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে আরেক পশলা বিস্ময়বৃষ্টি উপহার দিলেন অচেনা এই তরুণ। জানালেন ঢাকা ডায়নামাইটসের নেট বোলার ছিলেন তিনি। সেখানে ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের নজরে পরেন। তাতেই তার সিনেমাটিক বিপিএল অভিষেক।

আল ইসলামের মুখেই শুনুন বাকিটা, 'আমার নাম আলিস আল ইসলাম। আমি ঢাকা ডায়নামাইটসের নেট বোলার ছিলাম। আগে আমি ঢাকা ফাস্ট ডিভিশনে খেলেছি। নেট বোলিং করার সময় সুজন (ঢাকা কোচ খালেদ মাহমুদ) স্যার আমাকে দেখেন। দেখে ওনার বিশ্বাস হয় যে আমি ভালো করতে পারব, আমাকে টিমে নেয়া। টিম ম্যানেজমেন্ট, প্লেয়াররাও আমাকে সাপোর্ট করে। তারপর আমি সেরা একাদশে।'

আলিস জানালেন ঢাকা সাভারের বলিয়াপুরে তার বাড়ি। ক্রিকেট খেলা শুরু করেছেন কাঠালবাগান গ্রিন ক্রিসেন্ট ক্লাব থেকে। তারপর কয়েক বছর সেকেন্ড ডিভিশন খেলার পর ফাস্ট ডিভিশন, তারপর বিপিএল।

কখন জানলেন বিপিএলে অভিষেক হচ্ছে? আলিসের উত্তর, '(বৃহস্পতিবার) গতকাল সন্ধ্যায় জানতে পারি খেলব। স্যার (খালেদ মাহমুদ সুজন) আমাকে ডেকে বলেন শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে। আমি প্রস্তুতই ছিলাম। তবে এতো বড় স্টেডিয়ামে, এতো বড় টুর্নামেন্টে প্রথম খেলা। আমি প্রথমে নার্ভাস ছিলাম, তবে তারপরও ভালো হয়েছে।'

আলিস মোহাম্মদ মিঠুনের দুটি ক্যাচ ছেড়েছিলেন নিজে বোলিং করতে আসার আগেই। পরপর দুটি ক্যাচ মিস, তারপর কী মনে হচ্ছিল কিছু করতে পারবেন? আলিসের উত্তর, 'আসলে এটা আমার বিপিএলে প্রথম ম্যাচ। খোলাসা করে বলতে গেলে স্টেডিয়ামে এটাই আমার প্রথম ম্যাচ। আমি আসলে অনেক নার্ভাস ছিলাম। তবে ক্যাচ দুটি ড্রপ করার পর সতীর্থরা অনেক সাপোর্ট করেছে আমাকে, কোচ সাপোর্ট করেছেন। সবাই আসলে অনেক সাহস দিয়েছেন। তাতে আমার মনে হয়েছে যে, ভালো জায়গায় বলটা করতে পারি তাহলে ভালো কিছু হতে পারে। আমি শুধু ভালো জায়গায় বল করতে চেয়েছি।'