নিষ্প্রাণ ম্যাচে রাজশাহীর প্রথম জয়

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চলমান আসরের পরিচিত দৃশ্য হয়ে উঠেছে দর্শকখরা। নেপথ্য কারণ রানের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে ব্যাটসম্যাদের। একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়ে যাচ্ছেন বোলাররা। উইকেট পাচ্ছেন নিয়মিতই। কিন্তু স্টেডিয়ামমুখি দর্শকরা যে বাইশ গজে ব্যাটসম্যানদের রাজত্ব দেখতে চান!

আজ ব্যাটিং রাজ করেছে রাজশাহী কিংস। সেটা নিয়ে খুব আগ্রহ ছিল না দর্শকদের। থাকার কথাও নয়। পরে ব্যাট করা দলের লক্ষ্য যখন মামুলি দাঁড়ায় তখন দ্বিতীয় ইনিংসটা আসলে খেলার জন্য খেলা। খুলনা টাইটানস-রাজশাহী কিংস ম্যাচেও তাই হলো। নির্ধারিত ওভারে খুলনাকে ১১৭ রানে বেঁধে দিয়ে সাত উইকেট ও সাত বল হাতে রেখেই সহজ জয় তুলে নিয়েছে রাজশাহী।

আসল ম্যাচটার ভাগ্য প্রথম ইনিংসেই প্রায় নির্ধারণ হয়ে গেছে। দেখার বিষয় ছিল রাজশাহী জয়ের জন্য কতটা সময় নেয় তা নিয়ে। মেহেদি হাসান মিরাজের দল হেসেখেলেই জয় তুলে নিয়েছে। টানা দ্বিতীয় হারা ম্যাচে খুলনার বোলিং বিভাগের সাফল্য বলতে তিনটি উইকেট।

অবশ্য সহজে জিতলেও রান তাড়ার শুরুতে পা হড়কাতে হয়েছে রাজশাহীকে। দলীয় ১১ রানে বিচ্ছিন্ন হয় তাদের উদ্বোধনী জুটি। পাঁচ বলে মাত্র ছয় রান করে বিদায় নেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজ। তাকে আরিফুল হকের ক্যাচে পরিণত করেন তাইজুল ইসলাম।

শুরুর ধাক্কার পরও জয়ের জন্য খুব একটা বেগ পেতে হয়নি রাজশাহী কিংসকে। দ্বিতীয় উইকেটে ৮৯ রানের জুটি গড়ে স্বাচ্ছ্যন্দেই দলকে জয়ের সন্নিকটে নিয়ে যান মেহেদি হাসান মিরাজ ও মুমিনুল হক। হাফসেঞ্চুরির আভাস দিয়েছিলেন দুজনই। কিন্তু আশা জাগিয়েও মুমিনুল ফিরে গেছেন ৪৩ বলে ৪৪ রান করে।

তবে মিরাজ ঠিকই হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। খেলেছেন টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা ৫১ রানের ইনিংস। ৪৫ বলের ইনিংসটা রাজশাহী অধিনায়ক সাজিয়েছেন ছয়টি চার ও এক ছক্কায়। শেষ দিকে তাকে সঙ্গ দিতে এসে সৌম্য সরকারও প্রস্তর যুগের ব্যাটিং করেছেন। ১৭ বলে করেছেন ১১ রান।

শম্বুক গতির ব্যাটিং করেছে খুলনা টাইটানসও। রাজশাহী কিংসের আাঁটসাঁট বোলিংয়ের বিপরীতে নির্ধারিত কুড়ি ওভারে নয় উইকেটে মাত্র ১১৭ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনা। বল হাতে জাদুকরি কিছু করতে পারেনি খুলনা। প্রত্যাশিতভাবেই আসরের প্রথম জয় তুলে রাজশাহী।

অথচ খুলনার ইনিংসের শুরুটা একেবারে মন্দ ছিল না। টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা করেছেন জুনায়েদ সিদ্দিকি। তাকে যোগ্য সঙ্গটাই দিয়েছিলেন ওপেনার পল র্স্টালিং। পঞ্চম ওভারেই বিনা উইকেটে ৪০ রান করে ফেলেন তারা।

পরে মুস্তাফিজের শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফিরে যান স্টার্লিং। উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়াটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় খুলনার জন্য। স্টার্লিং সাজঘরে ফিরলেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে খুলনার টপ অর্ডার। বিনা উইকেটে ৪৪ থাকা খুলনার চার উইকেট শেষ ৬৪ রানে।

এই উইকেট ঝড়ে ঝরে গেছে স্টার্লিং (১৬), জুনায়েদ সিদ্দিকি (২৩), জহুরুল ইসলাম (১) এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের (১১) উইকেট। আচমকা এই বিপর্যয় আর সামলে উঠতে পারেনি খুলনা টাইটানস। আশা জাগিয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি ডেউইড মালান (২২) ও আরিফুল হক(১২)। ডেভিড ভিসে ১৪ রান করেছেন শেষ দিকে।

এসব ছোটখাটো ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়ে কোনো রকম দলীয় সংগ্রহ এক শ ছাড়িয়েছে খুলনা। রাজশাহীর পক্ষে সর্বোচ্চ তিন উইকেট শিকার করেছেন উদানা। মুস্তাফিজুর রহমান উইকেট নিয়েছেন দুটি। কাইস, সৌম্য ও আরাফাত সানির শিকার একটি করে।
তন্মধ্যে পাদ প্রদীপে ছিলেন মুস্তাফিজ। এদিন যে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এক শ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন কাটার মাস্টার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা টাইটানস: ১১৭/৯
রাজশাহী কিংস: ১১৮/৩
ফল: রাজশাহী কিংস সাত উইকেটে জয়ী