চার-ছক্কার বদলে উইকেটের বৃষ্টি

এমনিতেই বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে হতাশ ভক্তরা। তাদের আরো হতাশ করল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচ। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে হাজার পাঁচেক দর্শক চার-ছক্কা দেখার যে আশা নিয়ে এসেছিলেন তাদের নিরাশ করেছে রংপুর রাইডার্স ও চিটাগাং ভাইকিংস।

প্রস্তুতির মতো টুর্নামেন্টের শুরুটাও হলো বড্ড নিষ্প্রাণভাবে। আগে ব্যাট করতে নেমে ছন্নছাড়া ব্যাটিং করেছে রংপুর রাইডার্স। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দল আজ এক শ রানও করতে পারল না। মাত্র ৯৮ রানে রানে গুটিয়ে গেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। চিটাগাংয়ে দাপুটে বোলিংয়ের সামনে তো রংপুরের নয়জন ব্যাটসম্যানই যেতে পারেননি দুই অংকে!

এই রান তাড়া করতে গিয়ে ঘাম ছুটে গিয়েছে চিটাগাং ভাইকিংসের। চট্টলার ফ্র্যাঞ্চাইজিকে শেষ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন মাশরাফিরা। শেষ পর্যন্ত পাঁচ বল ও তিন উইকেট অক্ষত রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলেছে মুশফিকুর রহিমের চিটাগাং (১০১)।

ঘুমপাড়ানি ম্যাচে দর্শকরা বিনোদন যা পেয়েছেন নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে বোলার মাশরাফি ও ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আশরাফুলের খুনসুঁটি থেকে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পাঁচ বছর পর বিপিএলে ফিরে শুরুতেই রংপুর অধিনায়ককে মোকাবেলা করেছেন আশরাফুল। প্রথম বলেই রান নিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার।

তখনই ঘটে গেল মজার ঘটনাটা। রান নেওয়ার জন্য দৌড় দিয়ে নন স্ট্রাইকিং প্রান্তের খুব কাছে চলে এসেছিলেন আশরাফুল। তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন বোলার মাশরাফি। তখনই ঠাট্টা করে হাত দিয়ে মাশরাফির পিঠে আলতো করে আঘাত করেন আশরাফুল। অধিনায়কও কম যাননি।

বোলিং প্রান্তে হাঁটা দেওয়ার সময় আশরাফুলকে উদ্দেশ্য করে পেছন থেকে পা উঁচিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি। যদিও ততক্ষণে নিরাপদ দূরত্বে চলে গেছেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। কিন্তু আশরাফুলকে আসলে যে জায়গায় দেখতে চেয়েছিলেন ভক্তরা সেখানে পৌঁছাতে পারেননি তিনি।

পুনর্জন্মের ম্যাচে পাঁচ বলে মাত্র তিন রানে সাজঘরে ফিরে গেছেন আশরাফুল। তার মতো এদিন বেহাল দশা হয়েছে চিটাগাং ভাইকিংসের অন্য ব্যাটসম্যানেরও। আজ দুই অংক ছুঁতে পারলেন চিটাগাংয়ের মাত্র তিনজন। সর্বোচ্চ ২৩ বলে ২৭ রান করেছেন মোহাম্মদ শাহজাদ। ইনিংসে চারটি চার মেরেছেন আফগান তারকা।

উইকেট পতনের মিছিলে মুশফিকুর রহিম টিকে ছিলেন অনেকক্ষণ। ৩১ বলে ২৫ রানে ফিরে গেছেন চিটাগং অধিনায়ক। সাত নম্বরে নেমে ১০ বলে ১০ রান করেছেন নাঈম হাসান। অবশ্য নাঈম যা করার বল হাতেই করে গেছেন। চার ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে দুই উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি।

যা তাকে দিচ্ছে পার্শ্ব নায়কের চরিত্র। ম্যাচ সেরার দাবিদার রবি ফ্রাইলিঙ্ক। এদিন রংপুর রাইডার্সের টপ অর্ডার ধসিয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার। চার ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচ করে চার উইকেট তুলে নিয়েছেন ফ্রাইলিঙ্ক। জয়সূচক চার মারা ফ্রাইলিঙ্ক ১২ রানে অজেয় ছিলেন।

ম্যাচটা ঠিকঠাক শুরুর আগেই ধসে পড়ে রংপুরের টপ অর্ডার। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় চ্যাম্পিয়নরা। ১০ রানে তারা হারায় তিন উইকেট। ৩৫ রানের মধ্যে শেষ সাত উইকেট! চ্যাম্পিয়ন দল দলীয় সংগ্রহ অর্ধশত ছাড়াতে পারবে কিনা তানিয়েই জেগেছিল সংশয়। সেটা উড়িয়ে দিয়েছেন রবি বোপারা।

ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে ইংলিশ অলরাউন্ডার খেলেছেন ৪৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। অষ্টম উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়ার পথে বোপারা সঙ্গ পেলেন সোহাগ গাজীর। ১৭ বলে তিনটি চারে ২১ রানে আউট হয়েছেন সোহাগ। দলীয় ৮৪ রানে জুটি ভাঙতেই ফের ধস নামে রংপুরের ব্যাটিং অর্ডারে।

ইনিংসের শেষ বলে অলআউট হয়ে যায় রংপুর। তাদের গুটিয়ে দিতে অবদান ছিল আবু জায়েদ রাহিরও। যদিও দুই উইকেট নেওয়ার জন্য ৩০ রান দিতে হয়েছে তাকে। ১৫ রান দিয়ে এক উইকেট শিকার করেছেন খালেদ আহমেদ। যা তার উদার মানসিকতা অনেকটাই আড়াল করে দিয়েছে।