বিপিএলে নজর কাড়তে পারেন যারা...

ক্রিকেট রসিকদের জিভে জল চলে আসার জোগাড়, দেখতে দেখতে যে এসে গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ষষ্ঠ আসর। আগামী শনিবার মাঠে গড়াবে ষষ্ঠ বিপিএলের প্রথম ম্যাচ। তার আগে শিরোপার ঘ্রাণ নিতে কোচ-অধিনায়করা ব্যস্ত বিভিন্ন ছক কষতে। প্রতিটি খেলোয়াড় ঘাম ঝরাচ্ছেন নিজেদের তৈরি করতে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আয়োজনে দেশি-বিদেশি সব ক্রিকেটাররাই চাইবেন আলাদাভাবে আলো ছড়াতে। কিন্তু সবাই তো আর পারবেন না। কারা কারা আলাদাভাবে আলো ছড়াবেন সেটা এখন নিশ্চিত করে বলাও সম্ভব নয়। তবে আন্দাজ তো করাই যায়।! দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ষষ্ঠ বিপিএলে আলাদাভাবে যারা আলো ছড়ানোর সম্ভাবনা যাদের তাদের নিয়ে এই আলোচনা-

সাকিব আল হাসান: আঙ্গুলের ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা সাকিব এই মুহূর্তে আছেন স্বপ্নের ফর্মে। উইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে সেরা হয়েছিলেন সাকিব। ব্যাট হাতে ১১৫ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন নয় উইকেট। ওয়ানডে সিরিজে সাকিব রান করেছেন ৯৫, বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ৩টি। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১০৩ রান করার পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন আটটি। বিপিএলের আগ মুহূর্তে টি-টোয়েন্টি সিরিজেই খেলেছেন সেরা ক্রিকেট। তাছাড়া বিশ্বজুড়ে ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট খেলার অসাধারণ অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের। বিপিএল বরাবরই উজ্জল ছড়ানোর আত্মবিশ্বাসও আছে। সব মিলিয়ে এবারের বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়কের অন্যতম সেরা পারফরমার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ: টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদুল্লাহ এই মুহূর্তে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। সর্বশেষ উইন্ডিজ সিরিজে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত খেলেছেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। অনিয়মিত বোলার হিসেবে বল হাতে তিন ম্যাচে নিয়েছেন পাঁচ উইকট, নিচের দিকে নেমে ব্যাট হাতে করেছেন ৬৬ রান। ম্যাচের গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়ার যে ক্ষমতা সম্প্রতি তার দুর্দান্ত প্রদর্শন দেখিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। তাছাড়া বিপিএলের গত দুই আসরে ব্যাটে-বলে এবং নেতৃত্বে আলাদাভাবে নজর কাড়ার ইতিহাস আছে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের। অভিজ্ঞতার সাথে যেহেতু দুর্দান্ত ফর্মেও আছেন ফলে আলাদাকরে নজর কাড়ার সম্ভাবনা আছে খুলনা টাইটানসের অধিনায়কেরও।

মাশরাফি বিন মর্তুজা: বিপিএলে বোলার মাশরাফির চেয়ে অধিনায়ক মাশরাফিই বেশি আলোচিত। ক্ষুরধার অধিনায়কত্বে ঢাকা, কুমিল্লা ও রংপুরের হয়ে শিরোপা জিতেছেন। বিপিএলে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জেতা অধিনায়ক মাশরাফি। সম্প্রতি যেভাবে বোলিং করছেন তাতে এবার বোলার মাশরাফিও হয়তো আলাদাভাবে নজর কাড়বেন। গত এক বছর বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে কম রান খরচ করে উইকেটে তুলে নিয়ে দেখিয়েছেন। গত উইন্ডিজ সিরিজেও বোলার মাশরাফিকে দুর্দান্তভাবে দেখা গেছে। ক্ষুরধার অধিনায়কত্বের পাশাপাশি দুর্দান্ত বোলিংটাও যোগ হওয়াতে এবারও আলাদাভাবে নজর কাড়তে পারেন মাশরাফি। গতবারের মতো এবারও রংপুর রাইডার্সকে নেতৃত্ব দিবেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।

তামিম ইকবাল: চোটের কারণে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন। তারপর ফিরে সম্প্রতি শেষ হওয়া উইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সুবিধা করতে পারেননি। তবে গত সিরিজে টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে না পারলেও তামিম আলাদাভাবে আলো ছড়াতে পারেন। গত কয়েক বছরের অসাধারণ ধারাবাহিক তামিমকে ঘিরে বাংলাদেশের ইনিংস গড়ার পরিকল্পনা করা হয়। একপ্রান্ত আগলে রেখে রানের গতি ঠিক রেখে ইনিংস গড়ার দায়িত্ব থাকে তামিমের কাঁধে। যাতে অন্যপ্রান্তে ধস নামলেও তার খুব বাজে প্রভাব না পড়ে এবং মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা সহজেই রান তুলতে পারেন। আর ধস না নামলে নিজেই ঝড় তুলবেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়েও যদি তামিম জাতীয় দলের এই রোলটা প্লে করতে পারেন তাহলে সহজেই আলোচনায় চলে আসবেন। কারণ মিডল অর্ডারে কুমিল্লার দুর্দান্ত কিছু ব্যাটসমান আছে। স্টিভেন স্মিথ, শোয়েব মালিক, শহীদ আফ্রিদি, থিসারা পেরেরার মতো ব্যাটসম্যানরা আছেন কুমিল্লার মিডল অর্ডারে। এরা যদি মিডল অর্ডারে রান তুলতে পারেন তাহলে তামিমের কৃতিত্বটা বড় করে দেখা হবে। তাছাড়া কুমিল্লাকে নেতৃত্বও দিবেন। ফলে অধিনায়ক হিসেবেও আলোচনায় আসার সুযোগ অভিজ্ঞ এই ওপেনারের।

মুশফিকুর রহিম: বলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রান তোলার অসাধারণ ক্ষমতাবান মুুশফিকুর রহিমও আলাদাভবাবে নজর কাড়তে পারেন। মিডল অর্ডারে বরাবরই নির্ভরতার প্রতীক হতে দেখা গেছে মুশফিককে। তাছাড়া ফর্মটাও সাথে আছে, সর্বশেষ উইন্ডিজ সিরিজে দারুণ ক্রিকেট খেলেছেন। গত বছর বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন মুশফিক। বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দেওয়া মুশফিক এবারের বিপিএলে চিটাগং ভাইকিংসকে নেতৃত্ব দিবেন। ফলে নেতৃত্বেও আলাদাভাবে নজর কাড়তে পারেন তিনি।

লিটন দাস: জাতীয় দলের হয়ে বেশ কিছু ম্যাচ খেলে ফেললেও এখনো ধারাবাহিকতা খুঁজে পাননি লিটন দাস। তবে সর্বশেষ উইন্ডিজ সিরিজে ব্যাট হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। উইন্ডিজের গতিময় পেসারদেরও রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন লিটন। তাছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই ভালো ব্যাটিং করার ইতিহাস আছে তার। ফলে বিপিএলে আলো ছড়াতে পারেন লিটন দাসও।

মোস্তাফিজুর রহমান: তরুণ বাঁ-হাতি পেসারের আগেই সেই ছন্দটা এখন অবশ্য নেই। তবে ম্যাচের মোড় ঘুরে দেওয়ার মতো ওভার কিন্তু নিয়মিতই করে যাচ্ছেন মোস্তাফিজ। শেষ দিকে দুর্দান্ত এক বা দুই ওভার করে একাই ম্যাচের গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারেন তিনি। তাছাড়া সম্প্রতি নিয়মিত উইকেটও তুলে নিতে পারছেন। তাছাড়া স্বরূপে ফেরার যে তাড়না বিপিএলে সেটা বেশিই থাকবে মোস্তাফিজের। আইপিএলের মতো টুর্নামেন্ট খেলার অভিজ্ঞতা তো আছেই। সব মিলিয়ে নজর কাড়তে পারেন মোস্তাফিজ।

সাব্বির রহমান: নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেটের বাইরে হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান। তবে শোনা যাচ্ছে 'বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হও' ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার এমন বার্তা পেয়ে নিজ উদ্যোগে পুরোদমে অনুশীলন করে যাচ্ছেন সাব্বির রহমান। জাতীয় দলে ফেরার সাব্বিরের সবচেয়ে বড় হাতিয়ারই হচ্ছে এই বিপিএল। এই আসরে ভালো করতে পারলে জাতীয় দলের ঢোকার রাস্তাটা সহজ হয়ে যবে। সাব্বির অবশ্যই প্রাণপনে চেষ্টা করবেন। তাছাড়া হার্ডহিটিংয়ের পারদর্শিতা তো আছেই। সব মিলিয়ে নজর কাড়তে পারেন সাব্বির।

মোহাম্মদ আশরাফুল: মোহাম্মদ আশরাফুলের পরিবেশ সাব্বিরের মতোই। নিষিদ্ধ ছিলেন দীর্ঘদিন। নিষেধাজ্ঞা শেষে এখন জাতীয় দলে ফেরার জন্য ব্যাকুল। এই বিপিএলেই স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন, তারপর এবার সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই খেলার। নিশ্চিয় 'জেদ' থাকবে সাবেক অধিনায়কের। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে ঘরোয়া ক্রিকেটে বহু রান করেছেন। আর তার প্রতিভা, সামর্থ্য তো প্রশ্নাতীত। সব মিলিয়ে জাতীয় দলে ফেরার হাতিয়ার হিসেবে বিপিএলে আলাদাভাবে নজর কাড়তে বদ্ধ পরিকর মোহাম্মদ আশরাফুল। লক্ষ্য পূরণ হতেও পারে সাবেক অধিনায়কের।