কোন পথে যাবে বিএনপি?

সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পারজয়ের পর বিএনপি কীভাবে সামনের দিকে এগোবে? আন্দোলনের যাবে নাকি আবারও পাঁচ বছর অপেক্ষা করবে? এসব নিয়ে এখন দলের ভিতর ও বাইরে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। আবার কেউ প্রশ্ন তোলছেন যে, জোরদার আন্দোলনের সক্ষমতা কি আদৌ বিএনপির আছে?

বিএনপির নেতৃবৃন্দের মন্তব্য অনুযায়ী, এ সংকট থেকে বেরোনোর জন্য রাজপথের আন্দোলন ও আইনি লড়াইকে বেছে নিতে চায় দলটি। দলের নেতারা বলছেন, তারা ভোট বর্জন করেছেন। এজন্য পুনঃভোটের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে গতকাল সোমবার বিকেলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। জানা গেছে, সেই বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও কলে যুক্ত হয়েছিলেন। বৈঠকে নিজেদের ভুল ও দুর্বলতার পর্যলোচনা শেষে তাৎক্ষণিক কিছু করণীয় নির্ধারণ করা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, সংক্ষিপ্ত এ বৈঠকে বিএনপি দুই কৌশল নিয়ে সামনের দিকে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমত আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ, পাশাপাশি আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া।

একই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংবাদ সম্মেলনেও। তিনি বলেছেন, বিএনপি এ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সেই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও জানান, নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, নির্বাচনে বিজয়ী ধানের শীষের পাঁচজন শপথ নিবেন না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানও বলেছেন, ‘পুনঃভোটের দাবি বিএনপি আন্দোলন ও আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আদায় করবে।’

আন্দোলনের কর্মসূচি কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৈঠক আরও হবে, আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে সেখানে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নির্ধারণ করে আন্দোলনের দিকগুলো নির্ধারিত হবে।’

তবে গতকাল রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ধানের শীষের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করবে। কেন্দ্রীয়ভাবে আগামী বৃহস্পতিবার ইসিতে গিয়ে অনুষ্ঠানিকভাবে স্মারকলিপি দেয়া হবে।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, যদি কোনো দল বা প্রার্থী নির্বাচনের ফল নিয়ে আইন লড়াই যেতে চায়- তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ছয় মাস অর্থাৎ ১৮০ দিনের মধ্যেই অভিযোগ করতে হবে। তাদের অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে সেই আসন বা সারাদেশে পুননির্বাচনের সুযোগ আছে।

গত রোববার অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসনে জয়ী হয়। আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। এর মধ্যে বিএনপি পায় পাঁচটি আসন।

ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী পাঁচজন হলেন- বগুড়া-৪ আসনে মোশারফ হোসেন, বগুড়া-৬ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুনুর রশিদ এবং ঠাকুরগাঁও-৩ জাহেদুর রহমান।

এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম থেকে বিজয়ী দুজন হলেন, সিলেট-২ আসনে মোকাব্বির খান ও মৌলভীবাজার-২ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ।