বহুল প্রত্যাশিত ভোট আজ

বহুল প্রত্যাশিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট আজ। রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার ২৯৯ আসনে সাড়ে ১০ কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৯৩ আসনে ব্যালটে এবং ৬টিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া হবে। এছাড়া এক প্রার্থীর মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট পিছিয়ে ২৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। নিবন্ধিত ৩৯ দলের ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ১ হাজার ৮৬১ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন।

ইতোমধ্যে একযোগে সারা দেশে সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটে নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তায় বিভিন্ন বাহিনীর ৬ লাখ ৮ হাজার সদস্য মাঠে রয়েছে। সঙ্গে রয়েছেন ১ হাজার ৩২৮ জন নির্বাহী হাকিম এবং ৬৪০ জন বিচারিক হাকিম। নির্বাচনী অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটিতে ২৪৪ জন সদস্য কাজ করবেন।

এবার ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৬ হাজার ৮২৩ জন ভোটারের মধ্যে ৫ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৬২০ জন পুরুষ এবং ৫ কোটি ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ২০৩ জন নারী ভোটার রয়েছেন। এরা সবাই ৪০ হাজার ৫১টি ভোট কেন্দ্রের ২ লাখ ৫ হাজার ৬৯১টি ভোটকক্ষে ভোট দিবেন।

এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত প্রায় সব দল অংশ নিলেও ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’ এবং হামলা-সংঘাত নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এসেছে। তবে শেষ সময়ে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ভোটের দিন সংশ্লষ্ট সবাইকে নিরপেক্ষ থেকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে কোনো ধরনের সহিংসতা হলে তা কঠোর হাতে দমনের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, এ নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রায় ৭ লাখ সদস্য, ৭ লাখের মতো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক মিলিয়ে ১৫ লাখ মানুষ নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন।

নির্বাচনে ৬ লাখ ৬২ হাজার ১১৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৪০ হাজার ১৮৩ জন এবং ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া পোলিং এজেন্ট হিসেবে ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন দায়িত্ব পালন করবেন। ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৮২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রয়েছেন।

কেন্দ্রে ভোট গণনা শেষ হলে লিখিত ফলাফল রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাবেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা। রিটার্নিং কর্মকর্তারা সেই ফল ইসিতে পাঠালে ঢাকায় নির্বাচন ভবনের স্থাপিত বিশেষ মঞ্চ থেকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হবে।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ শরিক ১৬টি দল ‘নৌকা’ প্রতীকে এবং বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ শরিক ৮টি দল ‘ধানের শীষে’ নির্বাচন করছে। এছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে, গণতান্ত্রিক বাম জোটের ৮টি দল ‘কোদাল’ এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ‘হাতপাখা’, বিএনএফ ‘টেলিভিশন’, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ‘বটগাছ’, ইসলামী ঐক্যজোট ‘মিনার’, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল ‘বাঘ’ ও জাকের পার্টি ‘গোলাপ ফুল’ প্রতীকে ভোটে রয়েছে।

এর মধ্যে প্রধানত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পর হামলা ও সহিংসতার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনেছে। এই নির্বাচনী সংঘাতে কয়েকজনের প্রাণ হারিয়েছেন। উত্তপ্ত ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবির থেকে ভোটকেন্দ্র দখলে রাখার বার্তা আসায় জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল বা শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভোটের দিন ২৪ ঘণ্টা নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সি ক্যাব, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো, লঞ্চ, ইজিবাইক, ইঞ্জিনবোট ও স্পিডবোট চলাচলে বিধিনিষেধ রয়েছে। এছড়া মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে শনি থেকে সোমবার পর্যন্ত এই তিন দিন নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

ইভিএমে ভোট হওয়া ৬টি আসনে ৮৪৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ সব কেন্দ্রে ৫ হাজার ৪৫টি ভোটকেক্ষে ২১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৪ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ৪৮ জন প্রার্থীর এই ছয় আসন হলো- রংপুর-৩, খুলনা-২, সাতক্ষীরা-২, ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩ ও চট্টগ্রাম-৯।

ভোটের নিরাপত্তায় বিভিন্ন বাহিনীর ৬ লাখ ৮ হাজার সদস্যের মধ্যে ১ লাখ ২১ হাজার পুলিশ; ৪ লাখ ৪৬ হাজার আনসার ও ৪১ হাজার গ্রাম পুলিশ রয়েছেন। এছড়া ৯৮৩ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) বিজিবি, ৬০০ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) র‌্যাব, ৩৮৯ উপজেলায় ৪১৪ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন ) সেনাবাহনী, ১৮ উপজেলায় ৪৮ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) নৌবাহিনী এবং ১২ উপজেলায় ৪২ প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন) কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনে ৮১টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ জন ৯০০ জন প্রতিনিধি, ৩৮ জন বিদেশি পর্যবেক, বিদেশি মিশনের ৬৪ জন কর্মকর্তা এবং দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ৬১ জন কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন। তবে ইসি সূত্রে জানা গেছে, দেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ১৮ হাজারের কম হবে।

উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর প্রথম দফায় তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি নূরুল হুদা। এরপর ১২ নভেম্বর পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ২৮ নভেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ ডিসেম্বর, ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ ও ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে।