নারায়ণগঞ্জে উদ্ধার ৪০ গুইসাপ!

কোথাও বড় গুইসাপ আবার কোথাও কালোগুই নামে পরিচিত প্রাণীটি পাহাড়, বনাঞ্চল বা উপকূলীয় এলাকায় দেখা মিললেও নারায়ণগনঞ্জে লোকালয়ের কাছকাছি দেখা মিলেছে ৪০টি রামগদি (Water Monitor Lizard) বা কালগুইসাপ। যেগুলোকে পুর্নবাসনের উদ্যোগ নিয়েছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

গতকাল বুধবার বিকেলে নয়টি রামগদি বা কালগুইকে উদ্ধারের পর গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান অবমুক্ত করা হয়। এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থী মইন মাহমুদ ও স্থানীয় সংগঠন একাত্তর মেম্বারের সদস্যরা। উদ্ধারাভিযানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন ঢাকার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকন আর তদারকিতে ছিলেন আবদুল্লাহ আস সাদিকের পাশাপাশি বন্য প্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা।

বন বিভাগের কমর্কর্তার জানান, শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে বিলুপ্তপ্রায় হওয়ার পথে গুইসাপগুলো। তবে নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ রেললাইন পার্শ্বে একটি খালের ধারে কালগুইগুলোর খবর পাওয়ার পর প্রাণীগুলোকে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট উদ্ধারাভিযান পরিচালনা করে নয়টি গুইসাপ উদ্ধারে সম্ভব হয়।

বন বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আবদুল্লাহ আস সাদিক জানান, কালগুইয়ের আবাসস্থল প্রধানত এখন সুন্দরবন এলাকায়। তাই জনবসতি এলাকায় রামগদি পাওয়া বিরল ঘটনা। নারায়ণগঞ্জের ময়লা-আবর্জনাপূর্ণ একটি খালের পাড়ে ছিল নয়টি কালগুই। এদের আবাসস্থল ক্রমশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।

আব্দুল্লাহ আস সাদিক জানান, IUCN Red list ২০১৫ অনুযায়ী দেশে রামগদি বা কালগুই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রাণীগুলোকে সংরক্ষণের জরুরী হয়ে পড়েছে। তবে আপাতত সব কালগুইকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে না।

বন বিভাগ জানায়, আপাতত ২৫ শতাংশ কালগুইকে পুর্নবাসনে সরিয়ে নেয়া হবে। গাজীপুরে ভাওয়াল উদ্যানে এগুলো টিকে থাকলে তবেই নতুন স্থায়ী আবাস সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হবে। আর বাকি ৭৫ শতাংশ কালগুই এখন নারায়ণগঞ্জেই থাকবে। নারায়ণগঞ্জে কোন সংরক্ষিত এলাকা পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে ওই এলাকাগুলোতেও আবাস গড়ে তোলা হবে।

জানা গেছে, প্রতিটি রামগদি বা কালগুই দৈর্ঘ্য পাঁচ থেকে সাত ফুটের মতো। তবে নয় ফুট দৈর্ঘ্যের কয়েকটি রামগদিকে খালটিতে দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় গুইসাপ বা রামগদি হলো বড় জাতের গিরগিটি। এগুলো ১০ ফুটের বেশি লম্বা হয়। এগুলো দ্রুত সাঁতার কাটতে পারে, আবার দ্রুত গাছেও উঠতে পারে। চামড়ার জন্য চোরাশিকারিরা রামগদি ধরে থাকে। রামগদি দেখতে গাঢ় বাদামি ও কালচে রঙের হয়। এর সঙ্গে হলুদে ভাবও থাকে। পা ও নখ লম্বাটে। লেজ চ্যাপ্টা। এরা কাঁকড়া, শামুক, ইঁদুর, হাঁস-মুরগির ডিম, পচা–গলা প্রাণী খেয়ে থাকে। মাছ, সাপ, ব্যাঙ, ছোট কুমির, কুমিরের ডিম, কচ্ছপ খাওয়ার কারণে এ ধরনের গুইসাপ নদী বা খালের ধারে আবাসস্থল গড়ে থাকে।