মনোনয়ন নিয়ে আসনে আসনে আ. লীগ নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৯ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ৩০০ আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন ৪ হাজার ২৩ জন। স্বাভাবিকভাবেই বেশিরভাগ মনোনয়ন প্রত্যাশীই মনোনয়ন পাননি। প্রার্থী নির্বাচনের পর মনোনয়ন না পাওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

কেন্দ্রের কড়া হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধের মতো ঘটনাও ঘটাতে দেখা যাচ্ছে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে চেষ্টা করেও বাগে আনা যাচ্ছে না ক্ষুব্ধ নেতাদেরকে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ার কারণে অনেকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হচ্ছেন। অনেকে দল ত্যাগ বা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়ই হয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুর রহমান। উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নও উত্তোলন করেছেন তিনি। আশরাফুর রহমান ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।

ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এমদাদুল হকও নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন তুলেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়াতে নরসিংদীর শিবপুরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সাংসদ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও তার অনুসারীরা। বিক্ষোভে অংশ নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহস্রাধিক নেতাকর্মী।

একই কারণে সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক আলোচিত সাংসদ গোলাম মাওলা রনি। বিএনপি থেকে তাকে পটুয়াখালী-৩ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা-২ আসনে মনোনয়ন না দেয়ার কারণে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহীন আহমেদ ও তার অনুসারিরা। বিক্ষোভে ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে অযোগ্য বলে দাবি করা হয়।

নেত্রকোনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়ন পাওয়া মানু মজুমদারের মনোনয়নয় বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। সোমবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

ঢাকা-১৩ আসন থেকে মনোনয়নপত্র তুললেও কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীক কবির নানককে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। সোমবার সন্ধ্যায় এক বিশেষ বর্ধিত সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায় তাকে।

এদিকে, মনোনয়ন বঞ্চিতদের এমন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আপনারা জানেন, একটি আসনের বিপরীতে গড়ে ১৩ জন করে মনোনয়ন তুলেছেন। এক আসনে মনোনয়ন পাবেন একজন। সবাইকে তো খুশি করা যাবে না। তবে মনোনয়ন না পেয়ে সংগঠন বহির্ভূত কোনো কাজ করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। অপরাধের মাত্রা বেশি হলে প্রয়োজনে তাকে বহিষ্কার করা হবে।'