জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: গর্ভপাত বাড়ছে বাংলাদেশে

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়েই। এর প্রভাবে নিজ দেশে মৃত্যুর হার বেড়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আগামী কয়েক দশকের এ হার আরো বাড়বে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে। সোমবার প্রাকশিত বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলা হয়, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার নারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে ওই অঞ্চলে বেড়েছে গর্ভপাত। আর পরিবেশ, পশু-পাখি তো রয়েছেই ঝুঁকিতে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কৃষি উৎপাদন হ্রাস, স্বাস্থ্য-সমস্যা ও বাস্তুচ্যুতিসহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে বাংলাদেশকে। 

প্রতিবেদনটি তৈরি করতে সংবাদমাধ্যমটি কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকা সরজমিনে দেখে। সেখানে বেশকিছু ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলা হয়, তেমনই এক নারী চকরিয়ার ফেইল্লাপাড়ার আল-মুন্নাহার। যিনি তিন ছেলে সন্তানের জননী। এরপর তিনি আরো একটি মেয়ে সন্তানের আশায় আছেন। কিন্তু এরইমধ্যে বেশ কয়েকবার গর্ভপাত ঘটেছে।

আল মুন্নাহার বলেন, ‘ছেলের চেয়ে মেয়েই ভালো। ছেলেরা অনেক দুষ্ঠু হয়, বাবা মাকে দেখতে চায় না। কিন্তু মেয়ে দূরে থাকলেও বাবা মায়ের খেয়াল রাখার চেষ্টা করে।’

মুন্নাহারের মতো ওই গ্রামের অনেক নারীই এ গর্ভপাতের শিকার। ‘নব্বইয়ের দশকে গ্রামটিতে ছিল আবাদি জমি। দিন দিন জমির লবণাক্ততা বাড়ার কারণে আর ফসল হয় না। বাধ্য হয়ে সবাই চিংড়ি চাষ অথবা লবণ উৎপাদনে ঝুঁকছেন।’

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানী ড. এস এম মনজুর হানিফি জানান, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তা সংস্থাগুলো বুঝতে পেরেছেন। তবে এখনো খুব একটা জোড়ালো নয়।’

তিনি মনে করেন, ‘সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার জমিগুলোতে ক্ষতি দৃশ্যমান হলেও মানুষের শরীরের ক্ষতি গবেষণা সংস্থাগুলো লক্ষ করেননি।’

সংস্থাটি বলছে, ‘চকরিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। গত ৩০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ এলাকায় ছোট খাটো যেসব পরির্ব্তন এসেছে, সেগুলোও প্রতীয়মান হচ্ছে।’

খবরে বলা হয়, ‘আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায় দেখেছে সমুদ্র উপকূলের ২০ কিলোমিটার এলাকা বা সমুদ্র তটরেখা থেকে সাত মিটার উচ্চতায় যেসব গর্ভপাত নারী বসবাস করেন, তাদের গর্ভপাতের ঝুঁকি অন্যদের চাইতে এক দশমিক তিনগুণ বেশি।’

একই সময় চাঁদপুরের মতলবেও গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা। এতে দেখা গেছে, সমতল এলাকার নারীদের চেয়ে চকরিয়ার নারীদের গর্ভপাতের ঝুঁকি তিন শতাংশ বেশি। গর্ভপাত অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তবে লবণের আধিক্যের কারণে সমস্যাটি প্রকট করে তুলেছে চকরিয়ার মত এলাকায়- মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

লবণাক্ততার কারণে যে সমস্যা হয়: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ গ্রহণ করা উচিত নয়। সেখানে চকোরিয়ার মত উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ ইচ্ছায় অনিচ্ছায় দিনে ১৬ গ্রাম লবণ গ্রহণ করছে। এই অতিরিক্ত লবণের ফলে দুশ্চিন্তা, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক), হার্ট অ্যাটাক ও গর্ভপাতের মত বিভিন্ন রোগ হতে পারে।