আ. লীগের ৫০ প্রার্থী বদলের নেপথ্যে

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েটসহ অন্তত ৫০টি আসনে দলীয় প্রার্থী বদল করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য রয়েছেন অন্তত ৪১ জন। তাদের বদলে ৫০ জন নতুন প্রার্থী দিচ্ছে নৌকা। দলটির প্রার্থী তালিকা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু টানা দুই বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও কেন এই প্রার্থী বদল?

আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন কারণে প্রার্থী বদলের কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা যায়, যা ৫০টি আসনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এক- নতুন প্রার্থী এনে চমক দেয়া। দুই- বিতর্কিতদের বাদ দেয়া। তিন- জিততে পারবে এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া। তবে শেষ মুহূর্তে প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তনও আসতে পারে।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থী বদল করা যাবে। গত নির্বাচনেও শেষ দিনে প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন আনা হয়েছিলো। এবারও তেমন হতে পারে। এজন্যই প্রার্থীদের কাছ থেকে মনোয়ন প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি এককভাবে নির্ভর করছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ওপর।

আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৩০টি আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তবে এটিকে প্রাথমিক তালিকা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি দলটি। মহাজোট ও ১৪ দলের শরিক এবং নতুন মিত্রদের জন্যে বাকি ৭০টি আসন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন তার ছোট ভাই ড. একেএম আবদুল মোমেন। অবশ্য মুহিত নিজেই এটি চেয়েছেন। বাদ পড়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও। তাকে গেলোবারের মতো কোনো উপ-নির্বাচনে প্রার্থী করা হতে পারে।

এছাড়া দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের দুজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দু জন সাংগঠনিক সম্পাদক। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানকের বদলে ঢাকা-১৩ আসনে সাদেক খান, ফরিদপুর-১ আসনে আবদুুর রহমানের বদলে মনজুর হোসেন, শরীয়তপুর-১ আসনে বি এম মোজাম্মেল হকের বদলে ইকবাল হোসেন অপু ও মাদারীপুর-৩ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের পরিবর্তে আব্দুস সোবহান গোলাপ মনোনয়ন পেয়েছেন। মাদারীপুর-৩ এ মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনও।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে শরীয়তপুর-২ আসনে সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব) শওকত আলীর বদলে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম। একই কারণে জাতীয় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ফরিদপুর-২ আসনে জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সলকে প্রার্থী করা হচ্ছে।

বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের বদলে নেত্রকোনা-২ আসনে আশরাফ আলী খান, পিরোজপুর-১ আসনের একেএম আউয়ালের বদলে শ ম রেজাউল করিম, রাজশাহী-৫ আসনের আবদুল ওয়াদুদের বদলে ডা. মনসুর রহমান, কক্সবাজার-৪ আসনে আবদুর রহমান বদির বদলে তার স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী, টাঙ্গাইল-৩ আসনে আমানুর রহমান রানার বদলে তার বাবা আতাউর রহমান খান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে গোলাম রাব্বানীর বদলে ডা. সামিল উদ্দিন মনোনয়ন পেয়েছেন।

নেত্রকোনা-৩ আসনে ইফতিখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর বদলে কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে অসীম কুমার উকিল মনোনয়ন পেয়েছেন। মাগুরা-১ আসনে এটিএম আবদুল ওয়াহাবের বদলে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর।

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর আসনে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমেদ, পাবনা-২ আসনের খন্দকার আজিজুল হক আরজুর বদলে আহমেদ ফিরোজ কবীর, কুষ্টিয়া-৪ আসনের আবদুর রউফের বদলে ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের বদলে জিয়াউর রহমান, ঢাকা-২০ আসনে এমএ মালেকের বদলে বেনজীর আহমেদ, নওগাঁ-৫ আসনে আবদুল মালেকের বদলে নিজাম উদ্দিন জলিল, খুলনা-৬ আসনে শেখ মোহাম্মদ নুরুল হকের পরিবর্তে আখতারুজ্জামান বাবু, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে গাজী ম. ম. আমজাদ হোসেন মিলনের বদলে ডা. আবদুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে আবদুল মজিদ মণ্ডলের বদলে ছেলে আবদুল মোমিন মণ্ডল, নেত্রকোনা-১ আসনে ছবি বিশ্বাসের পরিবর্তে মানু মজুমদারকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

এছাড়া বাগেরহাট-২ আসনে মীর শওকত আলী বাদশার পরিবর্তে শেখ ফারহান নাসের তন্ময়, খুলনা-২ আসনে মিজানুর রহমানের বদলে শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, পটুয়াখালী-৪ আসনে মাহবুবুর রহমান তালুকদারের পরিবর্তে মহিব্বর রহমান, বরিশাল-৫ আসনে জেবুন্নেছা আফরোজের বদলে কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীম, নাটোর-১ আসনে আবুল কালামের পরিবর্তে শহিদুল ইসলাম বকুল, ঝিনাইদহ-৩ আসনে নবী নেওয়াজের বদলে সফিকুল আজম খান চঞ্চল, যশোর-২ আসনে মনিরুল ইসলাম মনিরের স্থানে মেজর জেনারেল (অব) ডা. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল-২ আসনে খন্দকার আসাদুজ্জামানের বদলে তানভীর হাসান, টাঙ্গাইল-৬ আসনে খন্দকার আবদুল বাতেনের পরিবর্তে আহসানুল ইসলাম টিটু, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে সোহরাব উদ্দিনের স্থানে পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদ, গাজীপুর-৩ আসনে রহমত আলীর বদলে ইকবাল হোসেন সবুজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে ফয়জুর রহমান পরিবর্তে এবাদুল করিম বুলবুল এবং ময়মনসিংহ-১১ আসনে ডা. আমান উল্লাহর বদলে কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনুকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

জোট শরিকদের কিছু আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে নড়াইল-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমানের বদলে ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, পঞ্চগড়-১ আসনে জাসদের নাজমুল হক প্রধানের বদলে মোজহারুল হক প্রধান, পটুয়াখালী-১ আসনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বদলে এম শাহজাহান মিয়া, চট্টগ্রাম-৯ আসনে জাপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর বদলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ঢাকা-১ আসনে জাপার সালমা ইসলামের বদলে সালমান এফ রহমান, কক্সবাজার-১ আসনে জাপার মোহাম্মদ ইলিয়াছের বদলে জাফর আলম, জামালপুর-৪ আসনে জাপার মামুনুর রশিদের বদলে ডা. মুরাদ হাসান, সিলেট-৫ আসনে জাপার সেলিম উদ্দিন হাফিজের বদলে আহমেদ মজুমদার, কুমিল্লা-২ আসনে আমির হোসেনের বদলে সেলিমা আহমাদ মেরি এবং ময়মনসিংহ-৭ আসনে এমএ হান্নানের বদলে রুহুল আমিন মাদানীকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে।

এছাড়া গত নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এসএম আবুল কালাম আজাদের আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। আর মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের সুকুমার রঞ্জন ঘোষের আসনে মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন বিকল্পধারার প্রার্থী মাহী বি. চৌধুরী।