সিলেটে বাংলাদেশের ‘কলঙ্কের’ হার

সিলেট টেস্টে দেড়দিনেরও বেশি সময়ের খেলা বাকি থাকতেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। হারটা এমন দলের কাছে, যারা গত পাঁচ বছরে কোনো টেস্ট জিতেনি, হারটা এমন দলের কাছে যারা গত ১৭ বছরে দেশের বাইরে কোনো টেস্ট জেতেনি!

ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের কাছে স্রেফ উড়ে গেলেও টেস্টে বাংলাদেশকে উড়িয়ে অনবদ্য ইতিহাসই গড়লো জিম্বাবুয়ে। একই সাথে ভেঙে দিলো ইতিহাসের অচলায়তনও।

এ বছরের শুরুতে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে কিছু করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। যা তাদেরকে ছিটকে দিয়েছে বিশ্বকাপ থেকে। সেই ধাক্কা সামলাতে গিয়ে বদলে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের অনেক কিছু। কিন্তু মাঠের সাফল্য মিলছিলো না কিছুতেই।

কিন্তু এক বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে বাংলাদেশকে হারিয়ে সব দুঃখের ক্ষতেই যেনো প্রলেপ দিলো জিম্বাবুয়ে। অন্য দিকে, বাংলাদেশের জন্য এই হার এলো কলঙ্ক হয়ে। বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যে বাসনা লালন করে বাংলাদেশ, তার গায়ে লাগলো প্রচণ্ড এক ধাক্কা।

সীমিত ওভারে ক্রিকেটে বাংলাদেশ যতোই পরাক্রমশালী হোক না কেনো, এই টেস্ট হার অন্য দশটা হারের মতো নয়। এই হার বাংলাদেশের জন্য কলঙ্কের, লজ্জার।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে করে ২৮২ রান। বাংলাদেশের আশা ছিলো ৩২০ রানের মধ্যে তাদেরকে আটকানো। অর্থাৎ প্রত্যাশার ভালো অবস্থানেই থাকে বাংলাদেশ।

ওই ইনিংসে ছয় উইকেট তুলে নেন তাইজুল ইসলাম। ক্যারিয়ারে চতুর্থবার ইনিংসে পাঁচ বা এর চেয়ে বেশি উইকেট পান তিনি।

কিন্তু তাইজুলের খুশি ম্লান হয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে। যখন ইমরুল কায়েসরা গুটিয়ে যান মাত্র ১৪৩ রানে। ওই ইনিংসই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশকে ছিটকে দেয় অনেকটা দূরে। যে দূরত্ব আর শেষ পর্যন্ত পেরিয়ে যেতে পারেননি মাহমুদুল্লাহরা।

জিম্বাবুয়ে তাদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে ১৮১ রানে এবং আরো একবার তাইজুল আলো ছড়ান। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতি বাংলাদেশের বোলিং বিভাগে যে শূন্যতা তৈরি করেছিলো, তা দূর করে দেন তাইজুল।

এর মাধ্যমে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো টেস্টে দশ বা এর চেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন তিনি। কিন্তু এই কীর্তি ম্লান হওয়ার জোগাড় হয় শেষ ইনিংসের ৩২১ রানের লক্ষ্যে। যে লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে বাংলাদেশ হেরে যায় ১৫১ রানের ব্যাবধানে।

জিম্বাবুয়ের হয়ে চার উইকেট নেন তাদের অভিষিক্ত লেগস্পিনার ব্র্যান্ডন মাভুতা। বাংলাদেশের জয়ের পথ সংকুচিত করে দেন তিনিই। যা আসলে তৈরি করে দিয় জিম্বাবুয়ের ইতিহাস গড়ার মঞ্চ।

এই টেস্টে বাংলাদেশের প্রধান দুই তারকা মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ চূড়ান্ত ব্যর্থ ছিলেন। সীমিত ওভারে নতুন ভরসা হয়ে উঠা লিটন দাসও ছিলেন ব্যর্থ। ওয়ানডেতে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করা ইমরুল কায়েসও ছিলেন একই বৃত্তে বন্দি।

বাংলাদেশের এই হারের কারণ যতোটা না জিম্বাবুয়ের অসাধারণ খেলা, তার চেয়ে বেশি নিজেদের ব্যর্থতা। ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ হয়তো জিতবে বা ভালো কিছু করবে, কিন্তু তাতেও কি সিলেটের অভিষেক টেস্টে এবাবে গো-হারা হারার কলঙ্ক মুছতে পারবে বাংলাদেশ?