কোনো ব্যাখ্যাই খুঁজে পাচ্ছেন না তাইজুল

ফ্ল্যাট উইকেট, যেখানে স্থির দাঁড়িয়ে থাকলেই চলতে পারে স্কোরবোর্ডের চাকা। আছে দেশের নতুন ভেন্যুর টেস্ট অভিষেকের অনুপ্রেরণা। এ ছাড়া কদিন আগে ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেয়ার স্মৃতিও তরতাজা। এমন অবস্থায়ও ১৪৩ রানে অলআউট! সেটাও প্রতিপক্ষকে ২৮২ রানে আটক দেয়ার পর!

সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ১০ উইকেট হাতে রেখে ১৪০ রানে এগিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে যে চালকের আসনে, তা না বললেও চলে। অথচ নিজেদের প্রথম ইনিংস শুরু করার আগে এই ম্যাচের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিলো বাংলাদেশের হাতে।

দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তাইজুল ইসলাম। ক্যারিয়ারের চতুর্থবার পাঁচ বা এর চেয়ে বেশি উইকেট নেয়া এই স্পিনারের আপাতত আনন্দে ডুবে থাকার কথা। কারণ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ না পেলেও নিজের একমাত্র ফরম্যাটে তার বল কথা শুনেই যাচ্ছে। কে জানে, এই পারফর্ম হয়তো সীমিত ওভারের সংকুচিত দরজাটাও এবার তার জন্য প্রশস্ত করে দিবে।

কিন্তু সেই সুখভাবনায় মনই দিতে পারছেন না তাইজুল। তার বরং দিতে হচ্ছে ব্যাটিং ব্যর্থতার ব্যাখ্যা। যে বাখ্যা দিতে গিয়ে তাইজুল প্রায় কথাই হারিয়ে বসলেন। দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে এসে কেবল বললেন, ‘এ রকম দিন কখনো কখনো চলে আসে।’

তাইজুল এমনই এক ব্যাখ্যা দিলেন, যার চেয়ে চূড়ান্ত কোনো বাখ্যা আসলে হয়ই না! বাঁহাতি এই স্পিনার বলেন, ‘সমস্যার কথা বলতে বললে বলবো যে, আমাদের ব্যাটসম্যানরা আগে কখনো ভালো খেলেনি, তা কিন্তু নয়। হঠাৎ করে এমন হয়ে গেছে। ক্রিকেটে কিন্তু এ রকম দিন আসে।’

তাইজুলের এই কথার পর আসল বেশি কথা থাকে না। তারপরও যে দল ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত প্রতাপশালী, সেই দলের টেস্টে এভাবে ভেঙে পড়ার এই ব্যাখ্যায় মন কেনো বশ মানবে? সংবাদ মাধ্যম তাই প্রশ্ন করেই যায়।

তবে কি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের টেস্ট-ব্যর্থতার অন্ধকার এখনো মনোজগতে বয়ে বেড়াচ্ছেন মাহমুদুল্লাহরা? উত্তরে তাইজুল বলেন, ‘না, এমন কিছু না। আমাদের ব্যাটসম্যান-বোলারদের কথা যদি বলেন, এখানে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টের ব্যর্থতার আগেও আমরা বড় বড় দলকে হারিয়েছি। দুই একটা সিরিজ এমন হতেই পারে। এই ম্যাচ যে শেষ হয়ে গেছে, তাও কিন্তু না। এখনও আরও অনেক সময় আছে।'

মন ভরে না তবু। টেস্ট র‍্যাঙ্কিংকে জিম্বাবুয়ের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের তারতম্য হয়তো খুব বেশি নয়। কিন্তু দল হিসেবে বাংলাদেশকে যে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তুলনীয় হওয়ার সময় বাংলাদেশ পেরিয়ে এসেছে, এটা তো সত্য। ওয়ানডে সিরিজেই তার প্রমাণ দিয়েছে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল-বিহীন বাংলাদেশ।

না কি ওয়ানডে সিরিজের অবিশ্বাস্য সাফল্যই আত্মবিশ্বাসের পালে যোগ করেছে আত্মশ্লাঘার হাওয়া? তাইজুল মানেন না সেটাও। তিনি বরং দেন সেই ব্যাখ্যাই, যার পর আর আসলে আর কোনো ব্যাখ্যা হয় না, ‘অতি আত্মবিশ্বাসের মতো কিছু ছিল না। ক্রিকেটে এমন হয়; কিছু দিন আসে যে দিনটা আমাদের পক্ষে যাবে না। হয়তো আমাদের প্রথমে দুটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পর এমন হয়েছে।’

এর চেয়ে বেশি কিছু ব্যাখা দিতে অপারগ তাইজুল বলে গেছেন ১৫০ রানের মধ্যেই জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস থামিয়ে দেয়ার ইচ্ছা তাদের। সেটাও যদি হয়, তারপরও চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের লক্ষ্য হবে তিনশ-ছোঁয়া।

ইতিহাস বলছে, চতুর্থ ইনিংসে ৩০০ বা এর চেয়ে বেশি রান বাংলাদেশ করতে পেরেছে মাত্র তিনবার। তিনবারই লক্ষ্য ছিলো আরো বেশি এবং বাংলাদেশকে সহ্য করতে হয়েছে পরাজয়। সিলেটের মন্থর উইকেটে দুই দিনে যা দেখা গেলো, তাতে এই উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে তিনশর কাছাকাছি কোনো স্কোর করা আর যাই হোক, অনায়াসসাধ্য নয়।

সব মিলিয়ে সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, সেই আশা কেবল প্রবল আশাবাদীরাই করতে পারেন। তারপরও ক্রিকেটে যেহেতু শেষ বলের আগে ‘টেকনিক্যালি’ কিছু বলার সুযোগ নেই, সেহেতু তাইজুলের এই কথাটায় বরং আশা খোঁজা ভালো, ‘এই ম্যাচ কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি!’