বাংলাদেশের এ কেমন ব্যাটিং?

ওয়ানডে সিরিজের যে দলকে তিন ম্যাচের কোনোটিতে প্রায় দাঁড়াতেই দেয়নি বাংলাদেশ, সেই তাদের বিপক্ষে টেস্টে মাত্র ১৪৩ রানে অলআউট! তাও আবার প্রতিপক্ষকে ২৮২ রানে বেঁধে দেয়ার পরের চাপহীন ব্যাটিং-পরিস্থিতিতে?

সিলেট টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেছিলেন যে, এই টেস্টটা জিতে সিলেটের টেস্ট অভিষেক তারা স্মরণীয় করে রাখবেন। এই ম্যাচে বাংলাদেশ তাদের ব্যাটিং শুরুর করার আগ পর্যন্ত মনে হয়েছিলো, মাহমুদুল্লাহরা সিলেটকে স্মরণীয় কিছু দেয়ার জন্যই এগোচ্ছেন।

কিন্তু জিম্বাবুয়েকে তাইজুলের ঘূর্ণির ফাঁদে ফেলে ২৮২ রানে আটকে ফেলার পর বাংলাদেশ যখন ব্যাটিংয়ে নামলো, তখন থেকেই শুরু হলো অন্য শঙ্কা- বাংলাদেশ এই টেস্টটা বাঁচাতে পারবে তো?

প্রথম ইনিংস শেষে জিম্বাবুয়ে এগিয়ে গেছে ১৩৯ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে তারা যদি অন্তত ১৬০ রানও করে, বাংলাদেশের লক্ষ্য গিয়ে দাঁড়াবে ৩০০-তে। ৩০০ রান হয়তো খুব বেশি নয়, কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে, টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৩০০ পেরিয়েছে মাত্র তিনবার এবং প্রত্যেকবারই লক্ষ্য ছিলো অনেক বেশি। মানে ওই তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে।

এই জিম্বাবুয়ে হয়তো তাদের সেরা সময়ের ঝাপসা ছায়া, তারপরও টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৩০০ রানের লক্ষ্য তাড়া করাও কঠিন। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের পেসার ও স্পিনারদের বিপক্ষে বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে, তা দেখে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তাদেরকে খেলে চতুর্থ ইনিংসে ৩০০ করা শুধু কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব।

ম্যাচের বাংলাদেশের এই রকম করুণ অবস্থা হতো না, যদি টপ অর্ডার মিডল অর্ডার এভাবে তাসের ঘরের মতো উড়ে না যেতো। মাত্র নয় ওভার পাঁচ বলের মধ্যেই বাংলাদেশ হারিয়ে বসে চার উইকেট। এরপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের কাঁধে জুটি গড়ে দলকে বিপদমুক্ত করার যে ভার পড়েছিলো, তা পূরণ করতে পারেননি কেউ।

ইমরুল কায়েস তিন ওয়ানডেতেই দুর্দান্ত ছিলেন। এরপর একটা ইনিংসে খারাপ করা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু লিটন দাস আপাতত দুশ্চিন্তায় ফেলে দিচ্ছেন। ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে তিনি কোনো রান করতে পারেননি। টেস্ট সিরিজের প্রথম ইনিংসেও তিনি ব্যর্থ। এই ব্যাটসম্যান নিশ্চিতভাবেই চাপে পড়ে গেছেন।

নাজমুল হোসেন শান্তর কথাও একই। কিংবা মুমিনুলও দায় এড়াতে পারেন না। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির দরজা আপাতত তার সামনে খুলবে, এমন আশা তিনি নিজেও করেন না। টেস্টের দরজটাও তিনি ক্রমেই সংকুচিত করে দিচ্ছেন।

তাদের তুলনায় বরং আশা জাগিয়েছেন আরিফুল হক। তাকে সীমিত ওভারের জন্য বেশি বিবেচনা করা হলেও, আরিফুল আসলে সবচেয়ে ভালো কিছু করতে পারবেন দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে। সীমিত ওভারেও হয়তো তিনি অপরিহার্য হয়ে উঠবেন, কিন্তু তার মূল জায়গা দীর্ঘ পরিসর। সেখানে প্রথম আন্তর্জাতিক সুযোগে প্রবল ভাঙনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ৯৬ বলে তার ৪১ রানের ইনিংসটি বাহবা পাওয়ার মতো। সঙ্গীহীনতা না পড়ে গেলে এই অপরাজিত ৪১ নিশ্চিতভাবে যেতে পারতো আরো অনেকটা পথ। 

আরিফুল নিশ্চয় আরো সুযোগ পাবেন সামনে, কিন্তু সিলেট টেস্ট স্মরণীয় করে রাখার কোনো সুযোগ কি বাংলাদেশ তৈরি করতে পারবে? তাদের সামনে কিন্তু আপাতত কেবলই অন্ধকার!