বেঁচে যাওয়া একজনের মুখে নারকীয় ‘বাঙালি’ হত্যাকাণ্ড

ভারতে আসামের তিনসুকিয়া জেলায় বৃহস্পতিবার পাঁচজন বাংলাভাষীকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর আসামজুড়ে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, এ ঘটনায় মারা যান শ্যামলাল বিশ্বাস, অনন্ত বিশ্বাস, অবিনাশ বিশ্বাস, সুবল দাস এবং ধনঞ্জয় নমঃশূদ্র নামের ৫ জন বাঙ্গালি। এ ঘটনায় বেঁচে আছেন একমাত্র সাহাদেব নমঃশূদ্র।

তিনি জানান, ‘সেদিন রাত প্রায় পৌঁনে আটটায় পাঁচ ছজন সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর পোশাক পরে শ্যামলাল বিশ্বাসের দোকানের সামনে এসে আমাদের পার্শ্বে ডেকে নেয়। নানা কিছু জিজ্ঞাসা করতে করতে হঠাৎ তারা চড়াও হয় এবং গুলি করে বিষয়টি আমি বুঝতে পরে পার্শ্বে নিচু জমিতে ঝাঁপ দেই। এরপর শুধু গুলির শব্দ কানে আসে।’

সাহাদেব বলেন, ‘আমি যেখানে ঝাঁপ দেই সেখানে কুয়াশার কারণে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। উপরে কি হচ্ছে তাও দেখা যায়নি, তারাও আমাকে দেখতে পায়নি।’

‘কয়েক মিনিট পর যখন সব নীরব। হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ি দিকে রওনা হই। সবাইকে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি শ্যামলাল, অনন্তরা লাশ হয়ে পড়ে আছে।’

সন্ত্রাসীরা সবাই হিন্দিতে কথা বলছিল বলে জানান সাহাদেব নমঃশূদ্র।

খবরে বলা হচ্ছে, ভারতের নাগরিক তালিকা হালনাগাদ ও নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন করে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে যেসব বাংলাভাষী আশপাশের দেশ থেকে আসামে গেছে, তাদের নাগরিকত্ব দেয়া ইস্যুতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অসমীয়া এবং বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ হত্যাকাণ্ড ওই উত্তেজনায় ঘি ঢেলে দিল।

তিনসুকিয়া জেলা পুলিশ বলছে, খেরবাড়ি নামের ওই গ্রামে সন্ত্রাসীরা সেদিন ৪০ থেকে ৫০ রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল।

কর্তৃপক্ষ বলছে, নারকীয় হত্যাকাণ্ড সেখানকার চরমপন্থী সংগঠন উলফা ঘটিয়েছে। এদিকে উলফা জানিয়েছে, তারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জাড়িত নয়।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন শুক্রবার সারা আসাম বাঙালী ছাত্র যুব ফেডারেশন আগামীকাল ১২ ঘণ্টার জন্য তিনসুকিয়া হরতাল পালন করেছে। আজ শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতাল চলবে বলেও জানিয়েছে সংগঠনটি।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং পশ্চিবমঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।

আসামের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বলছে, তারা আগেই সরকারকে সাবধান করেছিল। বাঙালি আলাদাকরণের নামে যেভাবে মেরুকরণ করা হচ্ছে তাতে সংঘাত বাঁধতে পারে। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় সেটাই প্রমাণ হল।