বিচারকদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে উত্তাল পাকিস্তান

মহানবীকে (সা.) নিয়ে অবমাননাকর কথা বলার অপরাধে আছিয়া বিবি নামক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক নারীকে সুপ্রিম কোর্টে খালাস দেয়ায় প্রাণনাশের হুমকিতে পড়েছেন বিচারকরা। ইতোমধ্যে এই ঘটনায় হাজার হাজার পাকিস্তানি রাস্তায় নেমে এসেছে। এ প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির বড় বড় শহরে।

সহিংসতা এড়াতে গতকাল পাকিস্তানের বৃহৎ শহর লাহোরে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়। আন্দোলন দমানোর হুমকি দিতে গিয়ে কট্টরপন্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজেও।

আছিয়া বিবিকে খালাস দেয়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারক প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার, আসিফ সাইদ খোসা ও মাজহার আলম খান মিয়ানখেলের মৃতুদণ্ড ঘোষণা করেছে উত্তেজিত জনতা।

এছাড়া কট্টরপন্থী তেহলিক-ই-লাবিক পার্টির নেতা মুহাম্মদ আফজাল কাদরি সর্বোচ্চ আদালতের তিন বিচারকের ‘মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য’ বলে ঘোষণা করেন। তার এই ঘোষণা উত্তেজিত জনতাকে আরও উস্কে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের জুন মাসের কোনো একদিন ফসলের ক্ষেতে কাজের সময় সহকর্মী নারীদের সঙ্গে পানি পান নিয়ে বিতর্ক বাঁধে আছিয়া বিবি। এক পর্যায়ে তিনি মহানবীকে (সা.) নিয়ে অবমাননাকর কথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চার্চে বিচার দেয়া হয়, কিন্তু চার্চের বিচারে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিন নারী পরবর্তীতে বাদি হয়ে আদালতে মামলা করেন।

ওই মামলায় ২০১০ সালে আছিয়া বিবিকে মৃত্যুদণ্ড দেন শেখুপাড়া জেলার নিম্ন আদালত। সে সময় আছিয়ার পক্ষে কথা বলার অপরাধে পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসিরকে দিনদুপুরে গুলি করে হত্যা করে মমতাজ কাদিরী নামের এক ব্যক্তি।

২০১৪ সালে নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে লাহোরের হাইকোর্টে আপিল করেন আছিয়া। হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে। এরপর ২০১৫ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন আছিয়া বিবি।

গত বুধবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট এ মামলা থেকে আছিয়া বিবিকে বেকসুর খালাস দেন। রায়ে বলা হয়, ‘সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে বাদীপক্ষ। তাছাড়া তুচ্ছ ঘটনায় করা এ মামলার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। তাই তার মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে খালাস দেয়া হয়েছে। অন্য কোনো মামলা না থাকলে আছিয়া বিবি মুক্তি পেতে পারেন।’

এদিকে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠেছে পাকিস্তান। দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদ, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিসহ বড় বড় শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন প্রদেশের প্রধান সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছে মুসলমানরা।

খবরে বলা হয়, রায় ঘোষণার পর দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তা অবরোধ করেন। এ ছাড়া করাচি ও পেশোয়ারের মতো কয়েকটি শহরে মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অভিযোগ করে বলেছেন, রায়ের পর কট্টর ডানপন্থিরা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

এর আগে গত ১৩ অক্টোবর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) আছিয়াকে মুক্তি দিলে পাকিস্তান অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল।