ঘরের ছেলেদের কি মাঠে পাবে সিলেটবাসী?

চার পাশে চা বাগান রেখে মধ্যখানে বুক টান করে দাঁড়িয়ে আছে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। একদিন এই মাঠেই সাবাশ বাংলাদেশ বলে গলা ফাটাবে হাজার হাজার দর্শক। লাল-সবুজের বন্যা বয়ে যাবে গ্যালারিতে। সাকিব-তামিম-মাশরাফিদের নামে উঠবে স্লোগানের পর স্লোগান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ময়দানে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে সিলেটের নাম। দীর্ঘ দিবস ও রজনী এমন স্বপ্নে বিভোর ছিলেন সিলেটের ক্রিকেটপ্রেমিরা। তাদের স্বপ্ন আংশিক পূরণ হয়েছে এ বছরের শুরুতে। এখন পূরণ হচ্ছে নিজ শহরে টেস্ট ক্রিকেট দেখার স্বপ্নও।

শনিবার সকালটা সিলেটের জন্য আসবে নতুন রকম আনন্দভ্রমণের উপলক্ষ্য নিয়ে। যে সকালে রোদের রঙটা হয়তো বদলাবে না, যে সকালেও হয়তো আকাশে থাকবে মেঘের আনাগোনা, কিন্তু সকালটা তারপরও ভিন্ন রকম। কারণ এ দিনই যে টেস্ট ক্রিকেটের গৌরবময় অভিজাত্যের যাত্রায় নাম উঠবে সিলেটের।

চলতি বছরের শুরুতে সিলেটে অনুষ্ঠিত হয় দুটি টি-টোয়েন্টি। বাংলাদেশ ও সিলেটের মধ্যকার সেই দুই টি-টোয়েন্টি দিয়েই সিলেটে বাংলাদেশ দলের অভিষেক হয়। কিন্তু সেই উপলক্ষ্যের চেয়ে এবারের আয়োজনটা বেশি বড়। আর এই বড় আয়োজনে সিলেটবাসী তাকিয়ে আছে আবু জায়েদ রাহী ও খালেদ আহমেদের দিকে।

এক সময় জাতীয় দলে সিলেটের খেলোয়াড়দের উপস্থিতি কম ছিলো না। সিলেটের সন্তান হাসিবুল হোসেন শান্ত এক সময় জাতীয় দলের এক নম্বর পেসার ছিলেন। তার দেখানো পথে খেলে গেছেন তাপস বৈশ্য, অলোক কাপালি, নাজমুল হোসেনরা। চলতি বছর অভিষেক হয়েছে জাকির হাসান ও আবু জায়েদ রাহীর। অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন খালেদ আহমেদ।

এদের মধ্যে রাহী ও খালেদ বর্তমান টেস্ট স্কোয়াডেই আছেন। এদের মধ্যে অন্তত একজন সিলেটের অভিষেক টেস্টেই দলে থাকবেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। সিলেটবাসীর আশা অবশ্য দুজনকেই মাঠে দেখার। যদিও কম্বিনেশনের কারণে এ দুজনের এক সঙ্গে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া আপাতত একটু কঠিনই।

ঘরের ছেলেদের মাঠে দেখার প্রত্যাশা মিটুক বা না মিটুক, সিলেটের ক্রিকেট ইতিহাসে ঢুকে পড়া নিশ্চিত। অবশ্য ইতিহাস এবং ক্রিকেটের সাথে সিলেটের সম্পর্কটা নতুন কিছু নয়। বরং উপমহাদেশে যে সব জায়গা আঠার শতাব্দীতে ক্রিকেট খেলার ইতিহাস আছে, সিলেট সেই অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম।

ইংল্যান্ডভিত্তিক ‘স্পোর্টিং ইন্টেলিজেন্স’ একটি ম্যাগাজিনে ১৮৪৫ সালের একটি ক্রিকেট ম্যাচের কথা পাওয়া যায়, তা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো সিলেটে। ‘সিপয়’ এবং ইউরোপিয়ান ক্রিকেটার্সদের দুটি দল ওই ম্যাচটি খেলে এবং ‘স্পোর্টিং ইন্টেলিজেন্স’-এ ওই ম্যাচের একটি দীর্ঘ প্রতিবেদনও পাওয়া যায়। ক্রিকেট ঐতিহাসিকদের মতে, ওই ম্যাচটি উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া সবচেয়ে প্রাচীন ম্যাচগুলোর একটি ছিলো।

ইতিহাসের সাথে সাথে সিলেটের সেই পরম্পরা এবার রক্ষা হয়ে যাচ্ছে টেস্ট আয়োজন করার মাধ্যমে। শহরের হৈ-হুল্লোড়ের তুলনায় সিলেটের পরিবেশ-প্রকৃতি অনেকটাই আলাদা। যা ক্রিকেট খেলার জন্য অসাধারণ এক পরিবেশ। সেখানে একটি সত্যিকারের আন্তর্জাতিক ভেন্যুর অস্তিত্ব সিলেটকে কেবল ঐতিহাসিকভাবে উজ্জ্বলই করবে না, বরং বাংলাদেশের এই শহর এখন হয়ে উঠতে পারে ক্রিকেট সংস্কৃতির নতুন ঠিকানা। যা সিলেটকেও এনে দিতে পারে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ‘ইমেজ’।

এই সব চিন্তা করে ঘরের ছেলেদের সবাইকে মাঠে না দেখলেও নিশ্চয় সিলেটবাসীর দুঃখ হবে না!