বিবাদের মূল হতে পারে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট আলোচনার উদ্যোগকে দেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে খুব ইতিবাচক উন্নতি হিসেবে দেখা হলেও এ থেকে নাটকীয় কোনো ফল পাওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে দেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের। অবশ্য উভয় পক্ষ বিজ্ঞতার পরিচয় দিলে তা হবে ভিন্ন বিষয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাবির আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'নিজেদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে উভয় পক্ষের আন্তরিকতা এবং উদার মনোভাবের ওপর সংলাপের সফলতা নির্ভর করছে।'
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংসদ ভেঙে দেয়া এবং আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার থেকে বিরত থাকার মতো ঐক্যফ্রন্টের কিছু দাবি হয়তো সরকার মেনে নিতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে বিবাদের মূল বিষয় হতে পারে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'কোনো চাপ নয়, দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বৃহস্পতিবার গণভবনে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে ড. কামাল হোসেনকে চিঠি দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ঐক্যফ্রন্টের সাথে বসবে, বিএনপির সঙ্গে নয়। সংলাপের টেবিলে সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করি।'
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংলাপ ফলপ্রসূ করতে সরকারের আন্তরিকতা রয়েছে কিনা তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। যদি আমরা সংলাপে যোগ দেই তাহলে আমাদের সাত দফা দাবির বিষয়ে আমরা অনমনীয় থাকব।’
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে আগামী নির্বাচন আয়োজনের জন্য ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সব রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, সেনা মোতায়েন এবং ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পদক্ষেপ বাতিল করা।
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, 'ঐক্যফ্রন্টের আলোচনার প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক রাজনীতির জন্য তার সদিচ্ছা পোষণ করেছেন। এখন আলোচনা সফল করতে ঐক্যফ্রন্টকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে, কারণ তারাই আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। সংবিধানের মধ্যে থেকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে আগামী নির্বাচন আয়োজনের গ্রহণযোগ্য উপায়ের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হলো আলোচনা সফল করার জন্য মূল চ্যালেঞ্জ।'
তিনি আরও বলেন, 'সরকারের দায়িত্ব হলো সংবিধান সমুন্নত রাখা এবং সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। সুতরাং, ঐক্যফ্রন্টকে গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব নিয়ে আসতে হবে, যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না।'
সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর সাড়া দেয়া খুব ইতিবাচক ও সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত বলে প্রশংসা করে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন, 'আমি একে স্বাগত জানাই। আমি নিশ্চিত না যে সংলাপের ফল কী হবে, কিন্তু এটি ভালো রাজনীতির শুরু যা হয়তো আমাদের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।'
তিনি বলেন, 'আলোচনা সফল করতে ক্ষমতাসীন ও ঐক্যফ্রন্ট উভয় পক্ষের নেতাদের বর্তমান অবস্থান নমনীয় করতে হবে। এটা আবশ্যক নয় যে সব দাবি পূরণ হতে হবে। কিন্তু একটি বিশ্বাসযোগ্য সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উভয় পক্ষকে অবশ্যই ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।'
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, 'যদি ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলগুলো আন্তরিকভাবে আলোচনায় বসে, তা অবশ্যই কিছু ক্ষেত্রে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সাহায্য করবে।'
তিনি মনে করেন, 'আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোর কার্যকর সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে একবার বসা পর্যাপ্ত হবে না। ‘যদি উভয় পক্ষ তাদের উদার মনোভাব এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা প্রদর্শন করেন তাহলে আলোচনা সফল হবে। সরকারের সব দাবি মানার প্রয়োজন নেই, কিন্তু যৌক্তিকগুলো মানতে হবে।'
আবুল মকসুদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে দেয়াসহ ঐক্যফ্রন্টের কিছু দাবির বিষয়ে হয়তো সরকার একমত হতে পারে। তবে তার মতে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার ইস্যু নিয়ে উভয় পক্ষই সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'রাজনীতির ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই খুব উৎসাহজনক উন্নতি। কারণ, আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের কমপক্ষে একটি দাবি পূরণ করবেন। ‘আমি মনে করি যখন ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলগুলো আলোচনায় বসবে তখন সেখান থেকে নিশ্চিতভাবেই ভালো কিছু আসবে। মানুষের চাওয়া অনুযায়ী একটি বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য যদি সর্বোচ্চ স্তরে সম্ভব নাও হয়, তাহলে সর্বনিম্ন স্তরে হলেও উভয় পক্ষকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'উভয় পক্ষ যদি আন্তরিকতা ও ছাড়ের মনোভাব নিয়ে আলোচনায় বসে তাহলে সংলাপ থেকে অনেক কিছু অর্জিত হতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আশাবাদী যে আলোচনা থেকে ইতিবাচক কিছু বেরিয়ে আসবে কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজে সেখানে উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু একবার বসা থেকে হয়তো নাটকীয় কোনো ফল আসবে না।'
আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর, ইউএনবি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.