ইমরুলের নায়ক হওয়ার দিনে বাংলাদেশের দাপুটে জয়

ম্যাচের আগের দিনের সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বিন মর্তুজার একটা কথায় ছড়িয়ে পড়লো চাপা আতঙ্ক, চোরা সংশয়। তিনি বললেন, অন্য যে কোনো দলকে প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ যতোটা গুরুত্ব দেয়, ঠিক ততোটা গুরুত্ব জিম্বাবুয়েও পাচ্ছে। আতঙ্ক ও সংশয় ছড়ানোর কথা অবশ্য এটি নয়। তা হলো, এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতলে কেউ বাহবা দিতে আসবে না। কিন্তু হারলে তেড়ে আসবে হারে রে রে করে। ভয়টা ছিলো এখানেই। সত্যিই যদি পঁচা শামুকে পা কেটে ফেলার মতো ভুল মাশরাফিরা করে বসেন, লজ্জার অন্ত থাকবে না।

কিন্তু আতঙ্কের সেই লজ্জাটাকে অন্তত প্রথম ম্যাচে দূরেই রাখলেন মাশরাফিরা, সংশয়ের যে চোরাস্রোত বয়ে যাচ্ছিলো শিরদাঁড়া বেয়ে, তাও আপাতত থাকলো অঘটিত। সেটাও এমন দিনে, যখন সম্ভবত ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ম্যাচের সব আলো কেড়ে নিলেন ইমরুল কায়েস। পার্শ্ব নায়ক থেকে হয়ে উঠলেন মূল নায়ক।

টেস্টে দেশের দ্বিতীয় সেরা ওপেনারের তকমাটা মোটামুটি ইমরুল কায়েসরই। যদিও সাম্প্রতিক অতীতে সেই তকমাও শুকিয়ে গেছে অনেকটা। কিন্তু তার ওয়ানডে ক্যারিয়ার যেনো কেবলই আসা আর যাওয়ার গল্প। এই সিরিজেও হয়তো তার জায়গা হতো না। হলেও হয়তো একাদশে নয়, বরং পানি টানার কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হতো তাকে।

কিন্তু তামিম ইকবালের ইনজুরি শাপেবর হয়ে আসে ইমরুলের জন্য। জিম্বাবুয়ের কাছে হারের সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সম্ভাব্য সেরা দলই নির্বাচন করেন নির্বাচকরা। সেখানেই অভিজ্ঞতার জোরে জায়গা হয়ে যায় ইমরুলের এবং এই সুযোগটাই দুই হাতে লুফে নেন তিনি। ক্ষয়িষ্ণু শক্তির জিম্বাবুয়েও বাংলাদেশকে কাপিঁয়ে দেয় মাত্র ১৩৯ রানে ছয় উইকেট উপড়ে ফেলে। কিন্তু একপ্রান্তে সটান দাঁড়িয়ে থাকেন ইমরুল, ঘোরাতে থাকেন রানের চাকা।

ষষ্ঠ উইকেটে তরুণ সাইফুদ্দিনকে নিয়ে গড়ে তুলেন ১২৭ রানের জুটি। যে জুটিই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিজয়ের গানের মূল সুর হয়ে টিকে থাকে। এই জুটি গড়ার পথেই ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়াডে সেঞ্চুরি হাঁকান ১৫ দিন আগে পিতৃত্বের স্বাদ পাওয়া ইমরুল। পিতৃত্বই যেনো বের করে আনে তার ভেতরের নায়ক সত্তাকে। যে সত্তার দ্যুতিতে পার্শ্ব নায়কের যৎসামান্য অস্তিত্ব পেরিয়ে মহা তাৎপর্যপূর্ণ ইনিংস খেলার নায়ক হয়ে ওঠেন ইমরুল। খেলে দেন ১৪৪ রানের অসাধারণ ইনিংস। সাথে দেখান অসাধারণ সব শটের দারুণ দক্ষতা। মিরপুরের সবুজ উইকেট যেনো এ দিন হয়ে উঠে ইমরুলের বাগান, যেখানে ফুল হয়ে ফুটতে থাকে একের পর চোখ ধাঁধানো শট।

ইমরুল-সাইফুদ্দিনের জুটিতে ভর করে বাংলাদেশ যে ২৭১ রান তুলে, তার জবাব দিতে গিয়ে .. রানের হার মানতে হয় জিম্বাবুয়েকে। ম্লান হয়ে যায় কাইল জারভিসের ৩৭ রানে চার উইকেট নেয়ার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। তাকে ছাপিয়ে হেমন্তের সন্ধ্যায় ঝলমলে আলোর বাতি হয়ে আবির্ভূত হন মেহেদি হাসান, নাজমুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমানরা।

এই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করা ফজলে রাব্বি ব্যাট হাতে ছিলেন ব্যর্থ। কিন্তু ফিল্ডিংয়ে তিনি ছিলেন অসাধারণ। ১৯৮৬ সালের পর ৩০ বছর বয়সী প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষিক্ত হলেও তার ফিটনেস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযোগিই, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন রাব্বি।

শেষ পর্যন্ত, ২৭২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়ের ইনিংসের দম ফুরিয়ে যায় নয় উইকেটে ২৪৩ রান করে। বাংলাদেশ পায় ২৮ রানের জয়। এ জয়ের মাধ্যমে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। এ জয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ নেন তিন উইকেট। দুটি উইকেট নেন নাজমুল ইসলাম অপু।

ইমরুলের আলোয় পাওয়া এ জয়ের পর বাংলাদেশ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। পরের ম্যাচ দুটি হবে ২৪ ও ২৬ অক্টোবর।