'প্রশ্নফাঁসের' সুরাহা না করেই ঘ ইউনিটের ফল প্রকাশের ঘোষণা

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের নিষ্পত্তি না করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটের ১ম বর্ষ সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত বছরও ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় একই ঘটনা ঘটেছিল।

আজ ১৫ অক্টোবর গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামীকাল ১৬ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুর ১টায় প্রকাশ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রশাসনিক ভবনস্থ কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে (কক্ষ নং-২১৪) আনুষ্ঠানিকভাবে এই ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করবেন।

গত ১২ অক্টোবর, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের বাইরে মোট ৮১টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাতে লেখা প্রশ্ন ও উত্তরমালা ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রমাণসহ সাংবাদিকরা সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অবহিত করেন।

২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের কাটিং

এক ঘণ্টার পরীক্ষা শেষে ভর্তিচ্ছুরা বেরিয়ে এলে ঘ ইউনিটের প্রশ্নপত্রের সঙ্গে আগে পাওয়া প্রশ্নের মিল পাওয়া যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ঘটনাকে প্রশ্নপত্র ফাঁস বলতে নারাজ। প্রশাসন এই ঘটনাকে ‘জালিয়াতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

শুধু ২০১৮-১৯ সেশনেই নয়। গত বছর ২০১৭-১৮ সেশনেও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে অনুষ্ঠিত ঘ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটে। সে সময় সাংবাদিকরা পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিমের কাছে অভিযোগ তুললেও তিনি তা উড়িয়ে দেন।

গত বছরও তুমুল সমালোচনা ও বিক্ষোভ উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফল প্রকাশের দিন উপাচার্য কার্যালয়ের সামনের তালা ভেঙ্গে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন এবং প্রশ্ন ফাঁসের দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে ফল প্রকাশ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন।

তবে উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান গত বছরও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের খবরকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দেন। তিনি যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের খুঁজে বের করা হবে বলেও সে সময় হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন উপাচার্য।

এ বছর ঘ ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সামাদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগেই আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফলাফল প্রকাশ করতে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকেই।

গত বছর প্রশ্ন ফাঁসের তদন্তের দাবিতে সক্রিয় ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী। টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে তিনি বলেন, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের আগে ফলাফল প্রকাশ করা উচিত নয়। আমরা এই পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তারা বসে নাই, বন্ধের দিনেও তারা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসেছেন। আশা করা হচ্ছে শিগগিরই প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।