'হিলারি ক্লিনটন ও শেরি ব্লেয়ার আমাকে ফোন দিয়েছিলেন...'

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ার ড. মুহম্মদ ইউনুস প্রসঙ্গে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। আমি তাদের কথা না শোনায় তারা সবাই মিলে পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দেন। তখন আমি ঘোষণা দিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হবে।

রোববার (১৪ অক্টোবর) মুন্সিগঞ্জের মাওয়াপ্রান্তে পদ্মাসেতুর নাম ফলক উন্মোচনকালে এক সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ড. মুহম্মদ ইউনুসের প্ররোচণায় বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু নির্মাণের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।

ড. ইউনুস বেআইনিভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে ছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাকে সরতে বলা হলো, কিন্তু তিনি সরলেন না। উল্টো সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করলেন। মামলায় হেরে আমেরিকায় যান। সেখানে তার প্ররোচণায় তখনকার বিশ্বব্যাংক প্রধান এ প্রকল্পের অর্থ বন্ধে অর্ডার দিয়ে যান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে, ৬০ বছর পর্যন্ত ব্যাংকের এমডি থাকতে পারবেন। কিন্তু ড. ইউনুস কোনো অনুমোদন ছাড়াই ৭০ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ১০ বছর বেশি এমডির পদে থাকেন। সব সুযোগ সুবিধাও ভোগ করেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী- এই দুইজন ড. ইউনুসের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাকে বলা হয়, আপনি ব্যাংকের এমিরেটাস অ্যাডভাইজার হিসেবে থাকেন। কিন্তু তিনি আমাদের কথা শুনলেন না। তিনি দুটি মামলা করলেন। কোর্ট তাকে বললো, আপনার এমডি থাকা আইন অনুমোদন করে না। আপনি এ পদে থাকতে পারবেন না।

এ সময় তার ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য আমাকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ার ফোন দিলেন। আমি তাদের বললাম- এটা তো আইনে পড়ে না। আমরা তাকে সম্মানজনক প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি রাখলেন না। এটা কোর্টের বিষয়, সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে কিছু বলাও হয়নি। তিনিই মামলা করে হেরেছেন।

এ সময় আমাকে বলা হলো, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে ইউনুসকে সরালে পদ্মাসেতু হবে না। উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ড. ইউনুস নোবেল পেয়ে গেছেন কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদের লোভ ছাড়তে পারেন না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি পত্রিকার সম্পাদক ও ইউনুস আমেরিকায় গিয়ে হিলারি ক্লিনটনকে অনুরোধ করেন। তখন বিশ্বব্যাংকের প্রধান তার শেষ সময়ে পদ্মাসেতু প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধের অর্ডার দিয়ে যান।

ড. ইউনুস পদ্মাসেতুর অর্থায়ন বন্ধের পেছনে ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনুসের মধ্যে যদি দেশপ্রেম থাকতো তাহলে কী করে তিনি দেশের এত বড় ক্ষতি করেন?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মাসেতু প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধের পেছনে যে অপমান করা হয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে হেয় করা হয়েছে অথচ এর পেছনে উসকানিদাতা আমার দেশেরই লোক। এদের কোনো দেশপ্রেম থাকতে পারে না। গরিবের টাকায় সুদ খেয়ে যারা বড় লোক হয় তারা দেশের মানুষকে কখনও ভালোবাসতে পারে না।

ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে ওই সুধী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।