উসমান খাজার অবিশ্বাস্য লড়াই, টেস্ট বাঁচালো অস্ট্রেলিয়া

৩০২ বলে ১৪১ রান। এশিয়ার মাটিতে উসমান খাজার প্রথম সেঞ্চুরিটি ছিলো এমনই দাঁতে দাঁত চেপে ধরা লড়াই। স্ট্রাইক ছিলো মাত্র ৪৬-এর কিছু বেশি। টেস্ট বাঁচাতে যে ধৈর্য, দৃঢ়তা ও লড়াইয়ের মানসিকতা দরকার, তা এক ইনিংসেই দেখিয়ে দিলেন উসমান খাজা এবং তার এই অবিশ্বাস্য লড়াইয়ের গল্পে ম্লান হয়ে গেলো পাকিস্তানের টেস্ট জয়ের স্বপ্ন।

শেষ ইনিংসে ম্যাচ জেতার জন্য ৪৬২ রান দরকার ছিলো অস্ট্রেলিয়ার। ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথবিহীন অসিদের জন্য এই লক্ষ্যের পিছনে দৌড়ানো মানে অসম্ভব লক্ষ্যে ছোটা। সেটা করেননি উসমান খাজা ও টিম পেইনরা। তারা বরং নেমেছিলেন টেস্ট বাঁচানোর যুদ্ধে। যে যুদ্ধটা কঠিন করে তুলতে পারতেন উসমান খাজা। কারণ এশিয়ার মাটিতে তার ব্যাট চলে না বললেই চলে। সে হিসেবে শুরুতেই যদি তিনি উইকেট বিলিয়ে দিতেন, পাকিস্তানের জয়ের রাস্তাটাই প্রশস্ত হতো। কিন্তু উসমান এবার ভুল করেননি; বরং দারুণ দৃঢ়তায় সামলেছেন স্পিনারদের। উইকেটে টিকে ছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তার এই প্রচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে দুবাইয়ে।

দুবাই টেস্ট থেকে স্মরণীয় কিছু নিতে চাইলে ম্যাচ ড্র করাটাই ছিলো অস্ট্রেলিয়ার জন্য একমাত্র পথ। কিন্তু সেই পথ অতিক্রম করার কাজটা সহজ ছিলো না। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ১৪০ ওভার ব্যাটিং করা কোনো দলের জন্যই সহজ নয়। কিন্তু একজনই যদি ৫০ ওভারে বেশি খেলে দেন, কাজটা মনে হয় তাতে আর অসম্ভব থাকে না!

উসমান খাজা ৩০২ বল খেলে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, চাইলেই হার থেকে বাঁচতে পারে অসিরা। খাজার দেখা সেই বাঁচার পথে হাঁটেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইনও। ১৯৪ বল খেলে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

খাজা ও পেইন মিলে খেলেন মোট ৪৯৬ বল। শেষ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার খেলা মোট বলের অর্ধেকের বেশি মোকাবেলা করেন এ দুজন। দুবাই টেস্টে পাকিস্তানের হাতের মুঠো থেকে জয় কেড়ে নেন আসলে তারাই।

এই দুজনের দৃঢ়তায় চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া খেলে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ ইনিংস। এর মধ্যে খাজার ইনিংসটি ছিলো আরব আমিরাতের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে কোনো ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে দীর্ঘ প্রতিরোধ।

সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বল ট্যাম্পারিংয়ে জড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট যে ঝাঁকুনি খেয়েছিলো, তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। ওই ঘটনার পর প্রথম টেস্ট খেলতে নামাটা সুখকর ছিলো না অস্ট্রেলিয়ার জন্য। কারণ তাদের স্কোয়াডে নেই ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথের মতো ব্যাটসম্যান। যারা একা হাতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন যে কোনো সময়। তাদেরকে ছাড়া এই অস্ট্রেলিয়া আসলে হয়ে উঠেছিলো একেবারে নতুন চেহারার। তারা কতোটা কী করতে পারবেন, তা নিয়েও ছিলো সংশয়।

সেই সংশয় আরো বেড়ে যায় যখন পাকিস্তানের ৪৮২ রানের প্রথম ইনিংসের জবাব দিতে গিয়ে ২০২ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। এবং সেটাও ১৪২ রানের ওপেনিং জুটির পর। বিলাল আসিফ টেস্ট অভিষেকেই তুলে নেন ছয় উইকেট।

এরপর শেষ ইনিংসে যখন অস্ট্রেলিয়ার সামনে ৪৬২ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়, একবারের জন্যও মনে হয়নি যে, তারা ম্যাচটা বাঁচাতে পারে। কিন্তু উসমান খাজা এই ম্যাচে এমন এক শক্তি হয়ে আবির্ভূত হলেন, যে শক্তির সামনে কোনো প্রতিবন্ধকতাই টিকলো না। স্কোরকার্ডে লেখা থাকবে দুবাই টেস্টে ড্র করেছে অস্ট্রেলিয়া, কিন্তু যারা এই খেলা অনুসরণ করেছেন, তারা নিশ্চয় জয়ী হিসেবে মনে রাখবেন অস্ট্রেলিয়ার নাম!