সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক হত্যা: নিহতের বাগদত্তা যা বললেন

ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে ঢুকে নিখোঁজ হওয়া বিশিষ্ট সংবাদিক জামাল খাশোগির ব্যাপারে আগেই খারাপ কিছুর আশঙ্কা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন তার তুর্কি বাগদত্তা হাটিস সেনগিজ। তিনি বলেন, ‌'দূতাবাসে ঢোকার কয়েক মিনিট পরই খাশোগি বাইরে এসে আমার কাছে ফোন দিয়ে যাওয়ার সময় বলে, তার বের হতে দেরি হলে যেনো প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে জানাই।'

গত ২ অক্টোবর তার পূর্বের বিবাহ বিচ্ছেদের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে যান এই সৌদি সাংবাদিক। এরপর তিনি আর বাইরে বের হননি। তুরস্ক কর্তৃপক্ষ বলছে, খাশোগিকে দূতাবাসের ভেতরেই হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। এদিকে, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স বলেছেন, ‌‌'খাশোগি খুব অল্প সময় তাদের দূতাবাসে ছিলেন, এরপর তিনি বেরিয়ে পড়েন।'

সেদিন কী ঘটেছিল সৌদি দূতাবাসে?

জামাল খাশোগির বাগদত্তা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, খাশোগি আর আমি গত মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) দুপুর ১টায় (স্থানীয় সময়) দূতাবাসে পৌঁছি। দূতাবাসের ভেতরে ঢুকতে আমাকে গেইটে বাধা দেওয়া হয়, খাশোগি একাই ভেতরে ঢোকে। আমি বাইরে অপেক্ষা করতে থাকি। কিছুক্ষণ পর খাশোগি ফিরে এসে আমার কাছে ফোন রেখে যাওয়ার সময় বলে, তার দেরি হলে যেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ানকে বিষয়টি জানাই।

এরপর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা আমি দূতাবাসের বাইরে অপেক্ষা করি। পর দিন বুধবার দূতাবাসে ও তুরস্ক পুলিশকে জানাই।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই তুরস্কের সংবাদিকরা সৌদি দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করছেন। তারা বলছেন, দূতাবাসে ঢুকে খাশোগি আর বাইরে বের হননি। তাকে সেখানেই হত্যা করা হয়েছে। এরপর কৌশলে লাশ বাইরে বের করা হয়েছে।

খাশোগির বন্ধু তার্কিশ আরব মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান তুরান কিসলাকি জানান, তার বন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে তুরস্ক সরকার।

এদিকে সৌদি সরকার বিষয়টি মেটাতে ইতোমধ্যেই বেশ তৎপর হয়েছে। শুক্রবার দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, তুরস্ক কোনো তথ্য ছাড়াই জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে। সেদিন খাশোগির দূতাবাস সফর ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। সেখানে মাত্র এক ঘণ্টা অবস্থান করে। বিন সালমান আরও বলেন, আসলে কী ঘটেছে বিষয়টি সৌদি সরকারও খতিয়ে দেখছে।

শনিবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, জামাল খাশোগির বিষয়টি তিনি নিজেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি অনেক গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দূতাবাস এলাকা, বিমনবন্দরসহ সকল এক্সিট পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আশা করছি ভালো কোনো খবর পাবো।

প্রথম দিকে আশায় বুক বেঁধে থাকলেও এখন কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়েছেন খাশোগির বাগদত্তা হাটিস সেনগিজ। গত ৬ অক্টোবর তিনি টুইট করেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি তাকে জীবিত ফেরত চান। এদিকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য তুর্কি সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

তুরস্কের নাগরিক হাটিসকে বিয়ে উপলক্ষেই ইস্তাম্বুল গিয়েছিলেন খাশোগি। তার যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে তা প্রমাণের জন্য তাকে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হতো ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে। সে জন্যই গত সপ্তাহে তুরস্কে যান তিনি।

খাশোগির ওই বাগদত্তা তুরস্কের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিয়ে নিয়ে খুবই আগ্রহী ছিলেন খাশোগি। সৌদি সরকার যে আদৌ তার কোনো ক্ষতি করতে পারে, তুরস্কে আসার আগে তা সম্ভবত আঁচ করতে পারেননি তিনি। তুরস্ক আসার আগে লন্ডনে এক সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন খাশোগি। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সেখানে সৌদি সরকারের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন এ সাংবাদিক।

সেখানে বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি সরকার তার কোনো ক্ষতি করল কিনা, খাশোগির বন্ধু সেই প্রশ্ন তুলেছেন।

সাংবাদিক জামাল খাশোগি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করতেন। সৌদিতে সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের ওপর দমনাভিযান শুরুর পর দেশ ছাড়েন তিনি।

খাশোগগি ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে ভ্রমণ ও তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিলেন। আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী লড়াই নিয়ে লেখালেখি করতেন তিনি। ১৯৯০ দশকের প্রথম দিকে বিন লাদেনের সঙ্গে সৌদি রাজপরিবারের বিরোধ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন এই সাংবাদিক।