আপনি পড়ছেন

অন্ধকার প্রকোষ্ঠ। বেলা দশটা বাজার আগে দিনের আলো চোখে পড়ে না। ঠিক পাঁচটায় রুমের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। শোয়ার জন্য মাত্র একটি চাদর ও কাঁথা। ঘিঞ্জি মত রুম, যেখানে তিনজন থাকাও কঠিন, তাতে থাকে সাতজন। সকাল দশটা বাজলে রুমের দরজা খুলে দেওয়া হয়। তখন হল রুমে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়। কিছু একটা পড়তে চাইলেও পড়তে দেয়া হয় না। সারাক্ষণ নানাভাবে মানসিক কষ্টে রাখা হয়। বলা হচ্ছিলো, ইসরায়েলের কারাগারের কথা। যেখানে আহেদ তামিমিকে আটকে রাখা হয়েছিল।

ahed tamimi2

মনে আছে আহেদ তামিমির কথা? ফিলিস্তিনের সেই মেয়েটি, যে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর গালে চড় মারার কারণে আট মাস কারাবরণ করেছিল। এবার নিশ্চম মনে হয়েছে? সম্প্রতি ১৭ বছর বয়সী তামিমি বিখ্যাত ম্যাগাজিন ভোগ-এ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি তার কারান্তরীণ সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

‘ইসরায়েল অধিকৃত এলাকার কিশোরী হিসেবে সবসময়ই নিজেকে আমার পরাধীন মনে হয়। আমার প্রথম কারা অভিজ্ঞতা মাত্র তিন বছর বয়সে ২০০৪ সালে। ওই সময় আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই পর্যন্ত তিনি দুই বার গ্রেপ্তার হলেন। ১৬ বছর বয়সে নিজে গ্রেপ্তার হলাম। এ ছাড়াও আমার মা, ভাইসহ সকলেই কোনো না কোনো সময় গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’

ahed tamimi

‘কারাগারের অভিজ্ঞতা খুবই কঠিন। ঠিক সকাল সাড়ে পাঁচটায় আমাদের জাগিয়ে দেয়া হতো। সকাল আটটায় আমাদের সবাইকে গুনে হতো যে, আমরা ঠিক আছি কি না। সাড়ে দশটায় সেলের দরজা খুলে দিতো। সকালে খাবার বলতে ছিলো পোড়া রুটি। তাও দেয়া হতো সকাল সাড়ে দশটায়। ততোক্ষণে ক্ষুধা লেগে সেই জ্বালা পেটেই মিশে যেতো।

কারাগারের একেকটা ইউনিটে ২৫ জনকে রাখা হতো। কারাগারে পড়ার জন্য অনেকবার বই চেয়েছি কিন্তু দেওয়া হয়নি। কারাগারে অন্যদের ক্লাস করার সুযোগ থাকলেও ফিলিস্তিনদের সেই সুযোগ দেয়া হয় না। আমি নানাভাবে আমার ক্লাসের বই যোগাড় করে কারাগারেই চূড়ান্ত নির্বাচনী পরীক্ষা দিয়েছি।’

‘দুই মাস পর পর শুধু আমার পরিবারের লোকজনদের সাথে দেখা করতে দিতো। তাও আবার গ্লাসের এক পাশে আমি অন্য পাশে বাবা মা। ইশারায় কথা হতো। সেই দিনগুলোতে মনে হতো, এই দেখা হওয়ার চেয়ে না হওয়ায় ভালো ছিল।’

‘আমি গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিশ্ব মিডিয়া আমার কথা অনেক বলেছে এবং বলছে। কিন্তু ইসরায়েলি কারাগারে এখনো তিন শতাধিক ফিলিস্তিন শিশু বন্দি, তাদের কথা তো কেউ বলে না। ইসরায়েলি সেনা হত্যাচেষ্টার মিথ্যা মামলায় নুরহান আউয়াদ (১৬)-কে ১৩ বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। দুই বছর হলো সে কারাগারে তার কথা তো কেউ বলছে না। এ ছাড়া, তিন বছর হলো জেলে আছে হাইদা আরাইনাত। ওদের দোষ কি নিজের দেশের স্বাধীনতা কামনা করা?

ahed tamimi5

‘আমরা জন্মের পর থেকেই এই রক্ত, এই নির্যাতন দেখে আসছি। আমাদের দোষ কী। প্রতিটি রাত কাটে দুঃস্বপ্নে। মনে হয়, কখন যেনো ইসরায়েলি নরপিশাচরা এসে আমাদের মহল্লা, বাড়িতে হামলা করে। ছোটবেলা থেকেই বোমা, গুলির খোসা নিয়ে খেলা করে বড় হয়েছি।’

‘আমার মন চায় কখনো যদি আমার দেশ, আমার মহল্লা নিরাপদ হতো, কোনো বাধা না থাকতো, তাহলে বাবা-মায়ের হাত ধরে সমুদ্র দেখতে যেতাম। সেখানে গোসল করতাম। দেখেন আমার বাড়ি নাবি সালাহ থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার পরই সমুদ্র, কিন্তু সেখানে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে গত রমজানে যখন ইসরায়েল জেরুজালেমে যাওয়ার সুযোগ দিলো, তখন বাবা আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। সবসময়ই মনে হয়েছে, এই বুঝি আমাদের গুলি করে দিলো।’

‘আমি এখন ১৭ বছরের কিশোরী, আমার মন চায় সুন্দর কাপড় পরি, সুন্দর করে সাজি। কিন্তু কিছুই ভালো লাগে না। কয়েক দিন আগেও তো আমার বাবা জেলে ছিল। সকালে উঠেই শুনতে হয় গুলির আওয়াজ। স্কুলে গিয়ে গুলির আওয়াজ কানে আসে। আবার কাকে হত্যা করা হলো সেই চিন্তা মাথায় কাজ করে। পড়াশোনায় মন বসে না।'

‘আমার মত সব ফিলিস্তিন শিশুরই এমনটা হয়। আমার ইচ্ছা ছিল, আমি ফুটবল খেলোয়াড় হবো, কিন্তু পরিবেশ পেলাম কোথায়? এখন অবশ্য ইচ্ছা পাল্টে গেছে। আমি আন্তর্জাতিক মানের আইনজীবী হবো। ইসরায়েলিদের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কাজ করবো।’

ahed tamimi3

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর তামিমিদের গ্রাম নাবি সালাহে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী হামলা চালায়। এ সময় তার আট বছর বয়সী চাচাতো ভাইকে নির্যাতন করে ইসরায়েলি সেনারা। আহেদের মাকেও মারধর করে তারা। এসব চিত্র দেখে ঠিক থাকতে না পেরে ইসরায়েলের এক সৈন্যের গালে থাপ্পর মারেন আহেদ। সেই ছবিটা ব্যাপক ভাইরাল হলে চারদিন পর আহেদকে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েল এবং তাকে আট মাসের জেল দেয়া হয়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.