ইন্টারপোল প্রধান নিজেই নিখোঁজ, পেছনের ঘটনা কী?

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন, ইন্টারপোলের প্রেসিডেন্ট মেং হংওয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ। তার পরিবার দাবি করেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইন্টারপোলের সদর দপ্তর, ফ্রান্সের লিয়ন শহর থেকে চীনে যাওয়ার বিমানে উঠার পর থেকেই নিখোঁজ আছেন তিনি। বার্তাসংস্থা এএফপির খবরে বল হয়, ঘটনাটির তদন্ত করছেন এমন একজন ফরাসি পুলিশ কর্মকর্তা শুক্রবার (৫ অক্টোবর) জানিয়েছেন, মেং হংওয়ে ফ্রান্সে নিখোঁজ হননি। তবে এখনো তার খোঁজও পাননি তারা।

মেং ১৯৫৩ সালে চীনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ হিলংজিয়াংয়ের হার্বিনে জন্মগ্রাহণ করেন। ২০১৬ সালে ইন্টারপোলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে চীন সরকারের জন নিরাপত্তা বিষয়ক উপমন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি দেশটির কম্যুনিস্ট পার্টির একজন উচ্চ পর্যায়ের নেতা।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘৬৪ বছর বয়সী মেংকে চীন সরকার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। তবে কেন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বা কোথায় রাখা হয়েছে তা জানা যায়নি।’

এদিকে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মেং এর বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি চীনের কর্মকর্তারা।

ফরাসি কর্তৃপক্ষ বলছে, গত বৃহস্পতিবার মেং হংওয়ের স্ত্রী ফরাসি পুলিশের কাছে তার স্বামী নিখোঁজ থাকার অভিযোগ করেন। গেলো ১০ দিন থেকে তার স্বামীর খোঁজ পাচ্ছেন না। টেলিফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমনকি অফিসের (ইন্টারপোল) কাছেও তার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এরপর থেকেই তদন্ত শুরু করে ফরাসি কর্তৃপক্ষ।

তারা বলছে, মিংয়ের বিষয়ে চীন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তার বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এর বাইরে আর বিস্তারিত জানায়নি ফরাসি কর্তৃপক্ষ ।

মেং হংওয়েকে কী চীনই আটক করেছে, করলে কেনো?

স্কাই নিউজের কূটনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ডমিনিক ওয়াঘর্ন জানান, চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিখোঁজ হওয়ার খবর নতুন নয়। দেশটির সরকারের জন্য কোনো ভাবে হুমকি কিংবা প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারলে তাকেই প্রথমে তুলে নেওয়া হয়। এরপর কয়েকদিন জিজ্ঞাসাবাদ করে জেলে পুরা হয়। মেং হংওয়ের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাও এমনটি বলে ধারণা করছেন ডমিনিক ওয়াঘর্ন ।

২০১২ সালে শী জিন পিং ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে ১০ লাখের বেশি দলের কর্মকর্তাদের এভাবে শৃঙ্খলাজনিত শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। তবে মেং হংওয়ের ঘটনাটি অনেকগুলো কারণে উল্লেখযোগ্য। প্রথমত, তার স্ত্রী ফরাসি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন যে তার স্বামী কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। সাধারণত বেশি শাস্তি হতে পারে, এরকম আশংকায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা বিদেশি কোন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ তোলেন না।

মেং ইন্টারপোলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার সময় মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যে, এই নিয়োগ বিদেশে পালিয়ে যাওয়া চীনা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আটক করতে চীনকে সহায়তা করবে। কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে আন্তর্জাতিক রেড নোটিশ জারি করতে পারে ইন্টারপোল। তবে কোন দেশের ভেতর কর্মকর্তা পাঠিয়ে কাউকে গ্রেপ্তার করা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ক্ষমতা নেই সংস্থাটির। তবে কি চীন সরকার চেয়েছিল মেংয়ের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক বিরোধীদের ধরতে। মেং সেটা করেনি দেখেই তাকে আটক করা হয়েছে?