মাশরাফি বিন মর্তুজা: বাংলাদেশ অধিনায়কের ক্যারিয়ারের ১০ তথ্য
- Details
- by খেলাধুলা প্রতিবেদক
৩৫ বছর বয়সে পা রাখলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক ১৯৮৩ সালের পাঁচ অক্টোবর তৎকালীণ যশোরের নড়াইলে জন্মগ্রহণ করেন। মাশরাফি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন গতির ঝড় তুলে। ব্যাট হাতেও দারুণ কিছু করতে সক্ষম মাশরাফির ক্যারিয়ার এগিয়েছে ইনজুরির সাথে নানা রকম লড়াই করতে করতে।
মাশরাফির মধ্যে ছিলো একজন দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হয়ে উঠার সব রকম প্রতিভা। কিন্তু ইনজুরিজর্জর ক্যারিয়ারটা তিনি সেভাবে টেনে নিতে পারেননি। ২০০৯ সালের পর টেস্ট খেলেননি মাশরাফি, যাতে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আরো বেশি মনোযোগ দিতে পারেন। ২০১৭ সালের শ্রীলঙ্কা সফরের পর আর টি-টোয়েন্টিও খেলেননি তিনি। মাশরাফির ধ্যান-জ্ঞান সবই এখন ওয়ানডে ঘিরে। পাঁচ অক্টোবর, মাশরাফির ৩৫তম জন্ম দিনে জেনে নেয়া যাক তার ক্যারিয়ারের ১০টি তথ্য।
১. প্রাথমিক জীবন: ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও জীবনের প্রথম দিকে ফুটবল এবং ব্যাডমিন্টন খেলতেন ইতনি। এ ছাড়া সাঁতার ও মোটর সাইক্লিংও ছিলো তার অন্যতম পছন্দ। ক্রিকেটার হিসেবে সে বয়সে বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিং বেশি পছন্দ করতেন তিনি।
২. উঠে আসার গল্প: ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মাশরাফিকে পাঠানো হয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান তারকা বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের একাডেমিতে। তিনি মাশরাফির গতি ও আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখে দারুণ খুশি হন এবং তাকে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের জন্য বিবেচনা করার পরামর্শ দেন। এর আগে মাশরাফিকে ক্রিকেটে নিয়ে আসেন জাহিদ রেজা বাবু। তিনি ক্রীড়া সংগঠক এবং বিসিবির একজন শীর্ষ কিউরেটর। তিনিই প্রথমবার মাশরাফির মধ্যে একজন গ্রেট ক্রিকেটারের সম্ভাবনা খুঁজে পান।
৩. আন্তর্জাতিক অভিষেক: বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ভারত সফরের মাঝপথে মাশরাফিকে ডেকে নেয়া হয় দেশে এবং তখনই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়। অভিষেক ইনিংসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার উইকেট নেন তিনি। একই দলের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকও হয় মাশরাফির। মাত্র ১৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন মাশরাফি।
৪. টেস্ট অভিষেকই ছিলো মাশরাফির প্রথম শ্রেণির অভিষেক: মজার ব্যাপার হলো কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ না খেলেই টেস্ট অভিষেক হয় মাশরাফির। ইতিহাসের মাত্র ৩১তম ক্রিকেটার হিসেবে এ রকম ঘটনায় নাম উঠে ডানহাতি এই পেসারের।
৫. মাশরাফির ক্যারিয়ার যেনো ইনজুরির সঙ্গেই: ক্যারিয়ার শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই ইনজুরিতে পড়েন মাশরাফি। সেই ইনজুরি থেকে সেরে উঠা এবং আবার ইনজুরিতে পড়া, এই হয়ে উঠেছিলো মাশরাফির ক্যারিয়ারের গল্প। ক্যারিয়ারের প্রথম চারটা টেস্ট খেলার পরই মাশরাফি পড়েন ইনজুরিতে এবং ২০০২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি তিনি ব্যাকপেইনের কারণে মিস করেন। সেই ইনজুরিতে উঠার পথেই আবার হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েন মাশরাফি। যার কারণে তার পায়ে অস্ত্রোপচার করাতে হয় এবং সাত মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। ইনজুরির কারণে যতো ম্যাচ খেলেছেন, তার চেয়ে বেশি মিস করেছেন মাশরাফি।
৬. সাফল্য: ২০০৪ সালে হোম সিরিজে অসাধারণ পারফর্ম করে বাংলাদেশকে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয় এনে দেন মাশরাফি। এরপর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে তার বোলিংয়ের সামনেই নুয়ে পড়ে ভারত। ভারতের বিপক্ষে এই দুটি জয় বাংলাদেশের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা দুটি জয় এবং দুটিতেই ম্যাচ সেরা হন মাশরাফি। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ দলের সহকারী অধিনায়ক নির্বাচিত হন। পরে ২০০৯ সালে অধিনায়ক হন তিনি।
৭. অধিনায়কত্ব: ২০০৯ সালে অধিনায়ক হন মাশরাফি। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়েই ইনজুরিতে পড়েন তিনি। দেশের বাইরে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। কিন্তু ওই টেস্টেই ইনজুরিতে পড়েন মাশরাফি এবং সিরিজের বাকি অংশে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন সাকিব আল হাসান। পরে ২০১৪ সালে আবার অধিনায়ক হন মাশরাফি। মুশফিকুর রহিমকে সরিয়ে সীমিত ওভারের নেতৃত্ব দেয়া মাশরাফির কাঁধে। এরপর থেকেই সীমিত ওভারে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি। তবে ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়েন তিনি।
৮. আইপিএলের অম্লমধুর অভিজ্ঞতা: ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় আসরে খেলেছেন মাশরাফি। ২০০৯ সালের সেই আসরে মাশরাফিকে দলে নেয়ার জন্য বিশাল ঘটনা ঘটিয়ে দেন বলিউডের দুই অভিনেত্রী জুহি চাওলা ও প্রীতি জিনতা। আধ ঘণ্টার দীর্ঘ নিলামে ৮৩ বার মাশরাফিকে নিয়ে টানাটানি করেন চাওলি ও জিনতা! আইপিএলের ইতিহাসে যা এখনো দীর্ঘতম একক নিলাম হয়ে আছে। দীর্ঘ নিলামের পর ছয় লাখ ডলারে তাকে দলে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু দুর্ভাগ্য মাশরাফির, আইপিএলে মাত্র একটা ম্যাচ খেলেন তিনি। সেটাও কলকাতার ওই আসরের শেষ ম্যাচটি। এরপর আর আইপিএলে খেলা হয়নি তার।
৯. ২০১৫ বিশ্বকাপ এবং পরবর্তী সাফল্য: মাশরাফিকে মনে করা হয় একজন স্বভাবজাত নেতা। তার নেতৃত্বের সত্যিকারের গুণ প্রকাশিত হতে থাকে ২০১৪ সাল নতুন দফায় অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর। এই সময়ে এসে জাতীয় দলের খেলার ধরনই বদলে ফেলেন তিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে। অথচ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় আসরটিতে এতো বড় কিছু আশাই করতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু মাশরাফির অসাধারণ নেতৃত্বে ভর করে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা সাফল্য পায়। বিশ্বকাপের পর মাশরাফির নেতৃত্বে ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। সে সময় চারজন করে পেসার নিয়ে খেলার সাহস দেখান মাশরাফি।
১০. মাশরাফি একজন নীতিবান মানুষ: ক্রিকেটার মাশরাফির সঙ্গে প্রায়ই ব্যক্তি মাশরাফির তুলনা হয় এবং যে কোনো বিচারে ব্যক্তি মাশরাফি এগিয়ে থাকেন। ক্রিকেটার হিসেবে অসাধারণ কিছু হয়ে উঠতে না পারলেও তা চাপা পড়ে যায় ব্যক্তি মাশরাফির ব্যক্তিত্বের ঝলকে। মাশরাফি যে ধরনের নীতি মেনে চলেন, তাতে একজন সাধারণ অ্যাথলেটও হয়ে উঠতে পারেন অসাধারণ পারফর্মার। এবং এই ব্যাপারটিই সম্ভবত মাশরাফির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.