ইন্দোনেশিয়ার মতো কাদামাটিতে ডুবে যেতে পারে রাজধানী ঢাকাও!

ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরের ভুমিকম্প টনক নড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বের। এখন জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাও রয়েছে একই ধরনের ঝুঁকির মধ্যে। কারণ, এখানকার বেশির ভাগ বসতি যে জমিতে গড়ে উঠেছে, সে জমিরও লিকুইফেকশনের আশঙ্কা আছে।

লিকুইফেকশনের বাংলা হচ্ছে ‘মাটির তরলীকরণ’। অর্থাৎ একটা পর্যায়ে মাটি তরল পদার্থের মতো আচরণ শুরু করে। বলা হচ্ছে, শক্ত মাটির প্রকৃতি হঠাৎ করেই বদলে গিয়ে তরল পদার্থের পরিণত হয়। এর ফলে মাটির ওপরে থাকা বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটসহ সব সকল স্থাপনা ধসে যেতে পারে। এটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ ধরনের ঘটনা সত্যিই ঘটেছে।

এই দৃশ্য দেখা গেছে ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরে গত সপ্তাহে সংঘটিত ভূমিকম্পের পর। অবশ্য এ ধরনের ঘটনা সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ও চিলি, জাপানসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশেও ঘটেছে। কিন্তু ঢাকায় এমন ঘটনার আশংকা কতটা রয়েছে?

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক ড: আফতাব আলম খান বলেন, ‘বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে লিকুইফেকশনের ঘটনা ঢাকাতেও ঘটতে পারে। ঢাকা অনেক নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে পুরো ঢাকার ৬০ শতাংশ ভূমির গঠন-প্রকৃতি একই রকম।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূ-কাঠামোতে লিকুইফেকশনের ঝুঁকি অনেক। এটা একটা মারাত্মক সমস্যা। তবে ভূমিকম্প হলেই লিকুইফেকশন হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। এটি নির্ভর করে ভূমিকম্পের মাত্রা, মাটির কতটা গভীরে ঘটছে এবং সেখানাকর পানির স্তরের পানির পরিমাণের ওপর।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলবিদের মতে, ছয় মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে এবং এর উৎপত্তিস্থল ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার গভীরে হলে লিকুইফেকশনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ ভূমিকম্পে লিকুইফেকশনের কারণে ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরের প্রায় ১ হাজার ৭শ বাড়িঘর কার্যত মাটিতে দেবে গিয়েছিল। স্যাটেলাইট থেকে নেয়া ছবিতে দেখা যায়, পালু বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটা বিরাট এলাকার ঘরবাড়ী সব মাটিতে মিশে গেছে। এ ঘটনার জন্য লিকুইফেকশনকে দায়ী করেন ইন্দোনেশিয়ার গণপূর্ত মন্ত্রী বাসুকি হাদিমুলজোনো।

দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, ভূমিকম্প আঘাতে মাটি ঝুরঝুরে ও কাদায় পরিণত হয়েছে। এতে হাউজিং কমপ্লেক্সও ডুবে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, কাদার নিচে ৭৪৪টি বাড়িঘর ডুবে আছে।

উল্লেখ্য, ২০১০-২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবারি অঞ্চলে ভূমিকম্পে এমন ঘটনা ঘটেছিল। সেখানকার পলিমাটি ও বালি পানি একাকার হয়ে ঢেউয়ের মতো উপরে উঠে আসলে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, গাড়ি, বাগান, ক্ষেতখামার- সবকিছু চাপা পড়ে। ২০১০ সালে চিলিতে এ ধরনের এক ভূমিকম্পে ৮শর বেশি মানুষ নিহত হয়। আর জাপানের নিগাতায় ১৯৬৪ সালে এবং কোবে নগরীতে ১৯৯৫ সালে এ ধরনের ঘটনা ঘটে।