আমির: আশা করি বাংলাদেশিরা আমাকে সমর্থন করবে

২০০৯ সালে অভিষেকের পরই বিশ্ব ক্রিকেটে তোলপাড় ফেলে দেন পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার মোহাম্মদ আমির। সবচেয়ে কম বয়সী বোলার হিসেবে টেস্টে ৫০ উইকেট নেন তিনি। দ্রুতই জাতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেন এই পেসার। কিন্তু স্পট ফিক্সিংয়ের অন্ধকারে পা ডুবিয়ে পড়ে যান নিষেধাজ্ঞায়। পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সম্প্রতি ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরেছেন আমির। তাতেও দেখিয়েছেন পুরোনো ঝলক। আমির এবার অপেক্ষা করছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খেলার। আন্তর্জাতিক এই টি-টোয়েন্টি লিগে আমির খেলবেন চিটাগং ভাইকিংসে। আমির আশা করছেন বিপিএলে বাংলাদেশি ভক্তরা তাকে সমর্থন করবে। সম্প্রতি ঢাকা ভিত্তিক একটি ইংরেজি দৈনিককে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আমির। এখানে সেই সাক্ষাৎকার হুবহু তুলে ধরা হলো।

নিষেধাজ্ঞা কেটে যাওয়ার পরপরই বিপিএলে খেলার সুযোগ পাওয়ায় কেমন লাগছে?
ক্রিকেটে ফেরার সুযোগ পেয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক লিগে খেলছি। আগে জাতীয় দলে খেলার সময়ও এমন সুযোগ আসেনি। সত্যি বলতে, এই সুযোগটি আমার কাছে বিরাট কিছু। আন্তর্জাতিক এবং সুসংগঠিত একটি লিগের মাধ্যমে আমার ফেরা হচ্ছে- এটা দারুণ ব্যাপার। চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে সুযোগটি কাজে লাগাতে চেষ্টা করবো। দলটির চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ ভাইয়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

বিপিএলের আগের আসরগুলো কি দেখেছেন?
হ্যা, দেখেছি। অনেক খেলোয়াড় পারফর্ম করেছে। ম্যাচগুলো বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিলো। বিপিএলে ভালো খেলে অনেক ক্রিকেটার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে। বিপিএলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেটও অনেক দূর এগিয়েছে।

চিটাগং ভাইকিংসের সাথে চুক্তি করার পর কি আপনি রোমাঞ্চিত হয়ে পড়েছিলেন?
হ্যা, আমি খুব খুশি। বিপিএল দারুণ আসর। বিশ্ব ক্রিকেটের বড় বড় তারকারা এখানে খেলেন। এ কারণে এটা আমার জন্য দারুণ সুযোগ। যে কোনো খেলোয়াড় চাইবে এমন একটা দলের অংশ হয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে। সব মিলিয়ে আমার খুব ভালো লাগছে।

সম্প্রতি ঘরোয়া ক্রিকেটে আপনি ভালো খেলেছেন। আপনার প্রতি চাহিদা তাই অনেক বেড়ে গেছে। এ ব্যাপার আপনার চিন্তা কী?
এটা প্রাকৃতিক বিষয়। কেউ ভালো খেললে সবাই তার প্রতি চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। দলও চায় ওই খেলোয়াড় ভালো খেলুক, দলকে জেতাক। খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সেরাটা ঢেলে দেয়া। একজন মুসলিম হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, ফল নির্ভর করে সৃষ্টিকর্তার উপর। আমি সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করবো, যাতে আমার দল আমার মাধ্যমে উপকৃত হয়।

বিপিএলে সবাই আপনাকে খেলতে দেখতে চায়। বিষয়টি আপনার কাছে কেমন লাগে?
আমার প্রতি সবার ভালোবাসা আছে। পাকিস্তানের মতো, আমি মনে করি বাংলাদেশের মানুষও আমাকে পছন্দ করে। উপমহাদেশে ক্রিকেট অনেক বড় ভালোবাসার নাম, ক্রিকেটাররাও তেমনই। এ জন্য আমি খুশি। আমার দল (চিটাগং ভাইকিংস) আমাকে সমর্থন করছে। তবে ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি আনন্দদায়ক হবে, যদি টিম পারফর্ম করে।

বিপিএলের জন্য পরিকল্পনা নির্ধারণ করেছেন?
সত্যি বলতে কি- আমি কখনো পরিকল্পনা নির্ধারণ করি না। আমি সব সময় ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিকল্পনা করি এবং ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করি। দলীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুলেই আশা করি ব্যক্তিগত অর্জনও হয়ে যাবে।

আপনার কি মনে হয় যে সামনের দিনগুলো আপনার জন্য বেশ কঠিন হবে? যতোটুকু সমর্থন দরকার, তা কি আপনি পাচ্ছেন?
পাঁচ বছর পর ক্রিকেটে ফিরে আন্তর্জাতিক লিগে খেলা কঠিন কাজ। তবে একজন পেশাদার ক্রিকেটের দায়িত্ব হলো সব ধরনের পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া। সমর্থনের কথা চিন্তা করলে আমি আমার পরিবার এবং ভক্তদের কথা ভাবি। সাবেক ক্রিকেটারদের কথা বললে ওয়াসিম আকরাম ভাই, শোয়েব আখতার, মাইকেল অ্যাথারটন এবং মাইকেল হোল্ডিং আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এবং এবং আইসিসি থেকে পাওয়া সমর্থনের জন্যও আমি কৃতজ্ঞ। এখন আমার চিন্তা হলো সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যাশা পূরণ করা।

নিষেধাজ্ঞার কঠিন সময়ে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিলো?
আমাকে আইনী সহায়তা দেয়া দুজন- সাজিদা মালিক এবং গ্যারেথ পিয়ার্স। ইংল্যান্ডে থাকার সময় মাইকেল হোল্ডিংও আমাকে অনেক সমর্থন দিয়েছেন। পরিবার এবং কাছের বন্ধুদের সহায়তা পেলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। আমার আত্মবিশ্বাস ছিলো। আর এখন সৃষ্টিকর্তা আমাকে আবার সুযোগ দিয়েছেন। নিজেকে আমার প্রমাণ করতে চাই।

বাংলাদেশি সমর্থকদের কিছু বলতে চান?
আমার দল চিটাগং ভাইকিংস আমাকে অনেক সমর্থন দিচ্ছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের সমর্থকরা আগে আমাকে সমর্থন করেছেন। আশা করছি এখনো করবেন। আমি তাদের দেশে আসছি, সেখানে তাদের সমর্থনই আশা করছি।

আপনি আরো পড়তে পারেন

ভারতকে উড়িয়ে প্রোটিয়াদের ঐতিহাসিক জয়

ভুবেনেশ্বরের লজ্জার 'সেঞ্চুরি'