৩৫ লাখ কোটি ডলারে এক কাপ চাও পাওয়া যায় না যে দেশে!
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯৮০ সালে দীর্ঘদিনের অসাম্য আর অত্যাচারের পতন ঘটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে অত্যাচারিতরা। সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিতরে চলমান অবৈধ বৈষম্যের অবসান ঘটে এই শাসন ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে। বঞ্চিতরা ফিরে পায় তাদের অধিকার। আশার আলো দেখতে শুরু করে দেশের আপামর জনতা।
সাম্য আর বৈষম্যের এ লড়াই কিন্তু একদিনের ছিলো না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শোষণ, বঞ্চনা আর অত্যাচারের পর শেতাঙ্গ শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলো কৃষ্ণাঙ্গরা। এ লড়াই ছিলো সাদাদের বিরুদ্ধে কালোদের বেঁচে থাকার লড়াই। কালোদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।
কালোদের এই লড়াইয়ে সামনে থেকে যিনি নেতৃত্ব দেন তিনি হচ্ছেন, রবার্ট মুগাবে। জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন (জানু) নামের ব্যানারে দেশটির শাসন ক্ষমতা থেকে সাদাদের উৎখাত করেন জাতীয় বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত এই নেতা। তারপর থেকেই মূলত কালোদের স্বপ্ন দেখার শুরু।
কিন্তু স্বপ্ন যে সবসময়ই বিমূর্ত -এই সত্য বুঝতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগে যায় সাধারণ জিম্বাবুইয়ানদের। বেশ কয়েকদিন বলতে মাত্র ৩৭ বছর। তবে স্বপ্ন চুরি হয়ে যাওয়ার জন্য তা ছিলো যথেষ্ট সময়।
১৯৮০ সালের পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে শাসন করেন রবার্ট মুগাবে। এই ৩৭ বছরে জাতীয় বীর থেকে একজন ক্ষমতালোভী দুর্নীতিপরায়ণ শাসকে পরিণত হন তিনি। দেশকে দোজখের একটি অংশতে পরিণত করার পর চাপে পড়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
ক্ষমতার মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ ২০০০ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ করেই দেশটির তৎকালীন ধনী শ্রেণি শ্বেতাঙ্গ জমিদারদের হাজার হাজার বিঘা জমি জোর-জবরদস্তি করে দখল করা শুরু করে মুগাবের সমর্থকরা। এতে কৃষিজাত পণ্যের সংকট তৈরি হয় দেশে। একটা সময় খাদ্য সংকট এতো তীব্র হয়ে দেখা দেয় যে, দুর্ভিক্ষের দোরগোড়ায় চলে যায় জিম্বাবুয়ে। এর কিছুদিন পরেই দেশটির অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় ঘটে। মুদ্রাস্ফীতি চরমে পৌঁছে যায়।
এমনি ক্রান্তিকালে ২০০৫ সালে ভোটের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় আসেন মুগাবে। যদিও ওই নির্বাচনে তিনি ভোট কারচুপি করেছেন বলে ব্যাপকভাবে জনশ্রুতি রয়েছে। মুগাবের এই পুনরায় ক্ষমতাগ্রহণের মধ্য দিয়ে জিম্বাবুয়ের অর্থনীতি ধ্বংসের ষোলোকলা পূর্ণ হয়। ২০০৭ সালেই দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতির হার ১১,০০% -এ নেমে আসে, যা ছিলো তৎকালীন বিশ্বে সবোর্চ্চ।
অর্থনীতির এই করুণ দশায় পড়ে রাষ্ট্রীয় খরচ কমানোর প্রকল্প হাতে নেয় মুগাবে সরকার। এই প্রকল্পের অধীনে দেশের হাজার হাজার সরকারী চাকুরেদের ছাঁটাই করা হয়। বিদেশের দূতাবাসগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপরও যেসব দেশে দূতাবাস রাখতে হয়েছিলো সেগুলোর ছিলো একবারে করুণ দশা।
এই সময়ে জিম্বাবুয়েতে বেকারত্ব ও দরিদ্রতার হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। যা দিনে দিনে কেবল বেড়েছেই শুধু। ২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের বেকারত্ব ও দরিদ্রতার হার ৮০ শতাংশ থাকলেও মাত্র দুই বছর পর সেই হার এসে ৯৫ শতাংশে দাঁড়ায়। এটাই বিশ্বের সবচেয়ে সর্বোচ্চ বেকারত্বের হার। অর্থনীতির এই করুণ দশায় জিম্বাবুয়ের অনেক নাগরিক তখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
এই সময়ে দেশের মুদ্রাস্ফীতিও চরমে ওঠে। ২০০৬ সালে যেখানে একজন জিম্বাবুইয়ান প্রতি মাসে ২০২ মার্কিন ডলার আয় করতো; জিম্বাবুয়ের মুদ্রার হিসাবে সেটি ছিলো ১৭ হাজার ২০০ ডলার, ২০০৮ সালে সেটি হয়ে যায় মাত্র ৪১ মার্কিন ডলার। আর জিম্বাবুইয়ান মুদ্রায় সেটির পরিমাণ ছিলো ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার!
ওই সময়ে অধিকাংশ শ্রমিক ২০০ বিলিয়ন জিম্বাবুইয়ান ডলার মজুরি পেতো, মার্কিন ডলারে যেটি মাত্র ৬০ সেন্ট। আরও ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, ওই সময় দেশটিতে হাসপাতালের একজন নার্সের বেতন ছিলো ১২ হাজার ৫৪২ জিম্বাবুইয়ান ডলার, মার্কিন ডলারে যার পরিমাণ মাত্র ১২ সেন্ট। ওই টাকায় একটা কোল্ড ড্রিংকসও কিনতে পাওয়া যেতো না!
২০১০ সালে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি ১৫৭ শতাংশে উঠে যায়। লোভ আর নিজস্ব চাহিদা মেটাতে শাসক দল ইচ্ছামতো প্রয়োজনের চেয়ে অধিক নোট ছাপিয়ে আনে। ফলে ঋণভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে। জিম্বাবুইয়ান ডলারের মূল্য একেবারে কমে যায়। জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি কমে প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে। একটা সময় অবস্থা সামাল দিতে মিলিয়ন, বিলিয়ন ডলারের নোট ছাপাতে শুরু করে সরকার। এতে আরও অর্থনৈতিক ফাঁদে পড়ে জিম্বাবুয়ে।
অর্থের মান কমে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা লোপ পায়। ধীরে ধীরে কাগজের নোট একেবারেই বাতিল মালে পরিণত হয়। রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায় মিলিয়ন, বিলিয়ন ডলারের হাজার হাজার জিম্বাবুইয়ান নোট। ২০১৫ সালে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, এক মার্কিন ডলারে ৩৫ লাখ কোটি জিম্বাবুইয়ান ডলার পাওয়া যেতো। কিন্তু এক কাপ চাও খেতে পাওয়া যেতো না এই দামে! বাজার করতে যেতে হতো বস্তা ভর্তি নোট নিয়ে।
তবে আশার কথা হলো, এই অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে মুগাবের পদত্যাগের পর জিম্বাবুয়ের অবস্থা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। দেশটিতে এখন মুদ্রাস্ফীতি কমাতে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধিও আগের চেয়ে কয়েক মাত্রা উঠে এসেছে। ফলে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে স্বপ্ন দেখছেন বর্তমানের ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু সেই পথ যে মসৃণ হবে না তা নিশ্চিন্তেই বলা চলে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.