শেষ ওভারে বাংলাদেশের রুদ্ধশ্বাস জয়

সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানকে তিন রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ ওভারে গিয়ে ধরা দেয় জয়। জয়ের মুহূর্তটি ছিলো রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় ঠাসা। এ জয়ের ফলে ফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে থাকলো বাংলাদেশ। 

শেষ ১০ ওভারে জেতার জন্য ৮১ রান দরকার ছিল আফগানিস্তানের। তখনো এশিয়ার নতুন ক্রিকেট শক্তির হাতে ছিল ছয়টি উইকেট। কিন্তু পারেনি তারা। খুব কাছে গিয়ে তাদের হারতে হয়েছে তিন রানের ব্যবধানে।

জেতার জন্য শেষ ওভারে আট রান দরকার ছিলো আফগানিস্তানের। অসাধারণ দক্ষতায় তা ঠেকিয়ে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তুলে নেন একটি উইকেটও। এর আগের ওভারে মোহাম্মদ নবিকে ফিরিয়ে ম্যাচের লাগামটা মূলত নিজেদের হাতে রেখে দেন সাকিব আল হাসান। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের কাছে হারলেও সুপার ফোরে এসে ঠিকই জিতলো বাংলাদেশ।

অন্য দিকে সুপার ফোর আফগানিস্তানের কাছে হয়ে থাকলো বেদনার অন্য নাম। সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে তারা হেরে যায় পাকিস্তানের কাছে। সেটাও এ রকম খুব কাছে গিয়ে। পরপর দুই ম্যাচে খুব কাছে গিয়ে হারের যন্ত্রণায় পুড়তে হলো আফগানিস্তানকে।

বল হাতে এ দিন বাংলাদেশের হয়ে সেরা ছিলেন মোস্তাফিজ। নয় ওভারে ৪৪ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, শেষ ওভারে আট রান ঠেকিয়ে দলকে জেতানোর শেষ কাজটাও করেন তিনিই। ওই এক ওভারের জন্যই আসলে মোস্তাফিজকে ম্যাচসেরা বোলার বলা যায়।

২৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনিং জুটিতে ২০ রান করে আফগানিস্তান। তাদের ব্যাটিং লাইনে প্রথম আঘাতটি হানেন মোস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৬ রান যোগ করে তারা। সাকিব আল হাসানের অসাধারণ একটি থ্রোতে রানআউট হয়ে ফেরেন রহমত শাহ।

কিন্তু তৃতীয় উইকেটে ৬৩ রান যোগ করেন মোহাম্মদ শাহজাদ এবং হাসমাতুল্লাহ শাহিদি। এ দুজনের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামলে উঠে আফগানিস্তান এবং ক্রমেই তারা বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে শুরু করে। এর মধ্যে হঠাৎ করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি। ডানহাতি এই অফস্পিনার দারুণ দক্ষতায় অধিনায়ক এর সম্মান রাখেন। তিনি বোল্ড করে ফেরান মোহাম্মদ শাহজাদকে।

কিন্তু তখনও চূড়ান্ত স্বস্তি পায়নি বাংলাদেশ। কারণ পরের উইকেটে ৭৮ রানের জুটি গড়েন হাসমতুল্লাহ এবং আজগর আফগান। এই জুটি ভাঙ্গেন মাশরাফি। তার বলে ক্যাচ তুলে দেন আজগর এবং ক্যাচটি নিতে একদমই ভুল করেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো না করলেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ইমরুল কায়েসের হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে ২৪৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং ইমরুল কায়েস ৭২ রান করে অপরাজিত থাকেন।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ইমরুল কায়েসের ব্যাটে চড়ে চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেলেও ওপেনারদের ব্যর্থতা বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে থাকছে। নাজমুল হোসেন শান্ত টানা তৃতীয় সুযোগে দুই অঙ্কের রান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার তুলনায় লিটন দাস কিছুটা ভালো ছিলেন, কিন্তু দারুণ শুরু কে উল্লেখযোগ্য একটি স্কোরে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তার ৪১ রান করা যে স্বস্তি দিয়েছিলো, তার চেয়ে বেশি অস্বস্তি দিয়েছে তার আউট হওয়ার ধরণ। লং অফ দিয়ে রশিদ খানকে দারুণ একটি চার মারার পরের বলেই সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন তিনি। তার এ ধরনের মনোভাবে বিপদে পড়ে দল।

এশিয়া কাপ শুরুর ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হাফসেঞ্চুরি করলেও টানা ব্যর্থতার ফাঁদে পড়ে গেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। সুপার ফোরের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে কিছু করতে পারেননি তিনি। ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন সাকিব আল হাসানও। অদ্ভুত এক সিদ্ধান্তে রান আউটের শিকার হন তিনি। রান আউটের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মুশফিকুর রহিমকেও।

তারপরও বাংলাদেশ ২৪৯ রানের মতো চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় মাহমুদুল্লাহ ও ইমরুলের দৃঢ়তায়। শেষ পর্যন্ত এই রানই বাংলাদেশের জয়ের ভিত হয়ে থাকে। যে ভিতের উপর দাঁড়িয়ে বোলাররা এনে দেন চূড়ান্ত জয়। যদিও আফগানিস্তান ছিলো অসাধারণ। শেষ ওভারে একটু এদিক-ওদিক হলে ম্যাচ জিতে যেতো তারাই। কিন্তু সেটা না হওয়ায় এশিয়া কাপের ফাইনালের পথে এক পা বাড়িয়ে রাখলো বাংলাদেশ। সুপার ফোরে মাশরাফিদের শেষ ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে।