ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড: বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নিউক্লিয়ার যুদ্ধজাহাজ
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বর্তমানে বিশ্বে কমিশনপ্রাপ্ত বিমানবাহী রণতরী আছে মাত্র ২০টি। 'কমিশনপ্রাপ্ত' বলতে বোঝায়, সামরিক কাজে অংশগ্রহণের জন্য অনুমোদিত। এই ২০টি রণতরীর মধ্যে ১১টিই যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটির নৌ বাহিনীর যাথে যুক্ত এই ১১টি বিমানবাহী রণতরীকে যেটি নেতৃত্ব দেয় সেটি হচ্ছে 'ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড'। বিশালাকৃতির এই রণতরীটিকে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সামরিক যানগুলোর একটি বলা যায়।
'ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড' যুক্তরাষ্ট্রের নৌ বাহিনীর অন্যতম অহঙ্কার। রণতরীটি আমেরিকার সামরিক ইতিহাসের পূর্বেকার অনেক রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়ার পাশাপাশি কার্যকারিতার দিক থেকেও অন্যান্য সামরিক যান ও রণতরীকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮তম প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের নামে নামকরণ করা এই বিমানবাহী রণতরীটি বর্তমানে আমেরিকার সামরিক সক্ষমতার অন্যতম উজ্জ্বল নিদর্শন। প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্যমান এক হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। একটি সামরিক যানের পেছনে এককভাবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করার নজির আর খুব একটা নেই বললেই চলে।
জেরাল্ড ফোর্ডের নির্মাণ খরচ আসলে কতো, তা বোঝানোর জন্য এই তুলনাটুকু মাথায় রাখা যেতে পারে- ১৩ বিলিয়ন ডলার পৃথিবীর অনেক দেশের সারা বছরের মোট জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। আর বাংলাদেশের সাথে তুলনা করলে এই অংকটা সাত বছরের মোট সামরিক বাজেটকেও ছাড়িয়ে যাবে।
খরচ কিন্তু এখানেই শেষ নয়। জেরাল্ড ফোর্ড নির্মাণের জন্য ১৩ বিলিয়ন ডলার বাজেট করা হলেও পরবর্তীতে রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্টের জন্য আরও চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার যোগ করা হয়। একটি রণতরীকে পানিতে ভাসানোর আগেই এটির পিছনে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়ে যায়। এই ভিত্তিতে এটিকে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল সামরিক যান বলা যায়।
অবশ্য ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডের সক্ষমতার দিকে তাকালে এই পরিমাণ অর্থ আপনার কাছে খুবই কম মনে হবে। এক লাখ টন ওজনের এ রণতরীটির দৈর্ঘই হচ্ছে ১১০৬ ফুট বা ৩৩৭ মিটার। আর ফ্লাইট ডেকের প্রস্থ ২৫৬ ফিট বা ৭৮ মিটার।
২০০৫ সালের ১১ আগস্ট এই জলযানটি নির্মাণের ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু হয়। এরপর ২০০৯ সালে দানবীয় এই রণতরী তৈরির কাজে হাত দেয় নিউপোর্ট নিউজ শিপবিল্ডিং কোম্পানি।
দীর্ঘ চার বছর খাটাখাটনির পর ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর এটিকে পানিতে ভাসানো হয়। এর পরের মাসে অর্থাৎ নভেম্বরের নয় তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮তম প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের নামে এটির নামকরণ করা হয়। ২০১৭ সালের ২২ জুলাই এটি কমিশন প্রাপ্ত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাজ বহরে যোগ দেয়।
জেনে অবাক হবেন যে, এল লাখ টনের বিশাল ওজন নিয়েও ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড ত্রিশ নট অর্থাৎ ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলতে পারে। জ্বালানি নেয়ারও খুব বেশি একটা ঝামেলা নেই। মাত্র একবার জ্বালানি নিয়েই এটি বিশ বছর পর্যন্ত একটানা চলতে পারে।
তারপরও ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডে রয়েছে দুটি এ১বি নিউক্লিয়ার রিএক্ট্যার। যার ফলে এটি নিজেই নিজের জন্য জ্বালানি উৎপাদন করে নিতে পারবে।
পূর্ণ শক্তি নিয়ে সাগরে কাজ করার সময় চার হাজার মেরিন সেনা ও নাবিক কাজ করেন এটিতে। এছাড়া থাকেন আরও এক হাজার কলাকুশলী। এছাড়া ৮০টি যুদ্ধবিমান থাকে এই যুদ্ধজাহাজটিতে। এই যুদ্ধবিমানগুলো উঠা-নামার জন্য রণতরীতে রয়েছে দুটি রানওয়ে। ফলে দুটি বিমান একইসাথে উঠা ও নামার কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, এতো বড় দানবীয় শরীর নিয়েও শত্রুপক্ষের কোনো রাডারে ধরা পড়বে না ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড!
ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ডের সেলফ ডিফেন্সিভ ক্ষমতাও অসাধারণ। এটিতে রয়েছে অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলের সুবিধা। আছে রোলিং এয়ারফ্রেম মিসাইল, ক্লোজ ইন উইপন সিস্টেম, এম২ মেশিনগান, যেগুলো এই রণতরীকে শত্রুর হামলা থেকে খুব ভালোভাবেই রক্ষা করবে।
আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, 'ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড নির্মাণ আমেরিকার শত্রুদের জন্য বিশাল বড় এক ধাক্কা। আমি আমেরিকান সেনাবাহিনী ও এটি নির্মাণে নিয়োজিত শ্রমিকদের অভিনন্দন জানাই।'
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.