যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া?

ভূমধ্যসাগর থেকে সাইবেরিয়া পর্যন্ত ইতিহাসের সবচেয় বড় সামরিক মহড়া চালাচ্ছে রাশিয়া। লক্ষ্য নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করা। কিন্তু বিশ্ব-রাজনীতির চলামান প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়ার এই মহড়ার মাধ্যমে বড়সড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে কী না? কেননা রুশ সামরিক পর্যবেক্ষকরা এরোইমধ্যে জানিয়েছেন, ২০২০ সালের পর বিশ্বে বড় ধরনের যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখছেন তারা।

‘ভোস্টক ২০১৮’ নামের এই মহড়া শুরু হয়েছে চলতি মাসের ১১ সেপ্টেম্বর, চলবে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অংশ নিচ্ছে ৮০টি যুদ্ধজাহাজ, এক হাজারেরও বেশি বিমান, হেলিকপ্টার ও ইউএভিসহ তিন লাখ সৈন্য। এতে চীন ও মঙ্গোলিয়ার সেনারাও অংশ নিচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও মহড়া প্রত্যক্ষ করেছেন।

এর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হওয়ার পর গত ১ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ভূমধ্যসাগরে সামরিক মহড়া চালায় দেশটি। খবর: আনাদোলু।

চলমান মহড়া নিয়ে রুশ সামরিক পর্যবেক্ষক পাভেল ফেলজেনহাউর বলেন, ‘রাশিয়া দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, ২০২০ সালের পর যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। সে সময় নাটকীয়ভাবে বসবাসের স্থান নিয়েই সংঘাত বৃদ্ধি পাবে। তাই এ মহড়ায় রুশ ফেডারেশনের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এটি হবে মূলত সম্পদের লড়াই এবং রাশিয়ার কাছে তা বিপুল মজুদ আছে। রুশ কর্তৃপক্ষ মনে করে, এ কারণে সবদিক থেকে দেশটির ওপর হামলা হতে পারে। আর তাই সব ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

ফেলজেনহাউর বলেন, ‘২০১৪ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর রুশবাহিনীকে নতুন করে অস্ত্রে সজ্জিত করে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ভোস্টক ২০১৮ ওই প্রস্তুতির চূড়ান্ত দফা।’

ফেলজেনহাউর বলেন, ‘আমি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলছি না, তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আপনি আপনার সম্ভাব্য শত্রুকে আপনার সামরিক শক্তি ও প্রস্তুতি প্রদর্শন করার মাধ্যমেই কেবল যুদ্ধ রোধ করতে পারেন।’

রাশিয়ার আরেক বিশেষজ্ঞ অ্যান্টোন মারদাসোভ বলেন, তাদের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১৯ লাখ দুই হাজার ৭৫৮। এরমধ্যে শুধু সৈন্যই ১০ লাখ ১৩ হাজার ৬২৮ জন। যা রাশিয়ায় চাকরি করা মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ।

এদিকে তুর্কি আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক ওকতেই তানরিসেভার শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রাশিয়ার এই মহড়ার বিষয়টি খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। ঠাণ্ডা যুদ্ধের পর রাশিয়া এই প্রথমবারের মতো এত বড় মাত্রায় কোনো মহড়ার আয়োজন করল।

২০১৪ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। তবে মস্কো যে বড় ধরনের সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম, তা বোঝাতেই এ মহড়ার আয়োজন করেছে। একইসঙ্গে তাদের হাতে যে অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে, তার প্রদর্শনও এ মহড়ার উদ্দেশ্য বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।

তানরিসেভার মতে, এ মহড়ার মাধ্যমে রাশিয়া একটি বার্তা দিতে চায়। আর তা হচ্ছে, দেশটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।